হেদায়েতের মশালবাহী বিশ্ব ইজতেমা
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা মহামারির কারণে দুবছর বন্ধ থাকার পর এবার তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার লক্ষ্যে বেশি পরিমাণ জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের করা।
বর্তমান সময়ে কেউ শুধু কয়েকটা বয়ান শুনে ইসলাম পালন শুরু করবে-এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে জামাতে গিয়ে যখন কেউ একনাগাড়ে কিছুটা সময় দ্বীনি পরিবেশে থাকে, তখন তার জন্য ইসলাম মানা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এ জন্য শুধু ইজতেমা নয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে মানুষকে জামাতে বের করার চেষ্টা করা হয়। বেশি বেশি ইজতেমা হলে ইজতেমাকে উপলক্ষ্য করে অনেকের জন্যই জামাতে বের হওয়া সহজ হয়।
এ জন্য ইজতেমায় বিশেষভাবে দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব এবং ইমান-আমলসংক্রান্ত কথা বলা হয়। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে নবি-রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিভিন্ন ঘটনাবলি উল্লেখ করা হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগে উৎসাহী হয়। এ জন্য দেখা যায়, সারা বছর মিলে যে পরিমাণ জামাত বের হয়, ইজতেমা থেকেই তার অনেক বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তার ইমানের দাওয়াত নিয়ে বের হয়।
বাংলাদেশে ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্কসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে তৎকালীন হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা হয়, ১৯৫৮ সালে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এটি কেবল ইজতেমা হিসাবে পরিচিত ছিল।
প্রতি বছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আশাতীতভাবে বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে ইজতেমা টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে আয়োজন করা হয়। ওই বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেওয়ায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৬৭ সাল থেকে বর্তমান অবধি (২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে) ‘বিশ্ব ইজতেমা’ টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদের উত্তর-পূর্ব তীরসংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু মিলিয়ে ১৬০ একর জায়গার বিশাল খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান জামাতসহ ২৫ থেকে ৩০ লক্ষাধিক মুসল্লি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
বিশ্ব ইজতেমার তিন দিন দেশ-বিদেশের আলেম-ওলামারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে বয়ান করেন। শুধু ইসলামি বয়ান শোনা কিংবা আখেরি মোনাজাতে প্রচুর লোকজনের অংশগ্রহণ করা ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্য হলো, যাতে বেশি তাবলিগ জামাত বের হয়। প্রতি বছর এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৭০০ জামাত বিশ্ব ইজতেমা থেকে দেশে-বিদেশে এক চিল্লা (৪০ দিন), তিন চিল্লা (চার মাস), ছয় মাস ও এক বছরের জন্য আল্লাহর দ্বীনের তাবলিগ ও দাওয়াতের জন্য বের হয়। তাবলিগের প্রতি জামাতে ১৪ থেকে ১৫ জন মুসল্লি থাকেন।
জামাত বের হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত, জামাতের সাথিদের ইমান-আমল ও ইলম অর্জন করা এবং আত্মশুদ্ধি হওয়া। দ্বিতীয়ত প্রতিটি মসজিদ থেকে জামাত বের করা। তৃতীয়ত প্রতিটি মসজিদে পাঁচ আমল পরিপূর্ণ চালু করা (সপ্তাহে দুই দিন গাশ্ত করা, প্রতিদিন মাশওয়ারা করা, প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, প্রতিদিন মসজিদ ও বাড়িতে তালিম করা এবং মাসে তিন দিন তাবলিগে যাওয়া)। প্রতিটি জামাত নির্ধারিত এলাকার প্রতি মসজিদে দুই-তিন দিন করে থেকে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, ইমান ও আমলের দাওয়াত দেওয়া।
উল্লেখ্য, এ বছর দেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে একটি করে তাবলিগ জামাত বের করার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ব ইজতেমা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।