Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

নিজামুদ্দীন থেকে কাকরাইল

যে আলো ছড়িয়ে গেল

Icon

জুবায়ের আহমদ

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যে আলো ছড়িয়ে গেল

দিল্লির নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার থেকে একটু এগোলেই ‘চৌষট্টি খাম্বা’ নামক ঐতিহাসিক ভবন। ভবনের লাল ফটক সংলগ্ন একটি ঘরে থাকতেন হজরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল (রহ.)।

তিনি তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোহাম্মাদ ইলিয়াস (রহ.)-এর বাবা। নানা কারণে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে উত্তর ভারতে মেওয়াতীদের সঙ্গে। পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর দ্বীন সম্পর্কে উদাসীনতা দেখে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে ছিলেন। তাই তাদের মাঝে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করেন তিনি।

পারিবারিক সূত্র ধরেই মাওলানা ইলিয়াসও (রহ.) মেওয়াতে মক্তব-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু এতে আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে তিনি ভাবলেন, যদি ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দিয়ে বড়দের মন-মানসিকতা ঠিক না করা যায় তাহলে এ উদ্যোগের তেমন প্রভাব পড়বে না।

তাই তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার করা শুরু করলেন। বলা যায় এ থেকেই তার তাবলিগি কার্যক্রমের সূচনা। দ্বীনহারা মানুষকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯২৬ সালে উত্তর ভারতে মেওয়াত অঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করে তাবলিগ জামাত।

হজরত ইলিয়াস (রহ.) যখন ভারতে তাবলিগি কার্যক্রম শুরু করেন, তখন ঔপনিবেশিক রাজনৈতিক পরিপার্শ্বিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ ক্রমেই ধর্মবিমুখ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি উপলব্ধি করেন যে, ব্যক্তি চরিত্র সংশোধন করা না গেলে সামষ্টিক জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে।

ব্যক্তিজীবনে যদি কেউ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তা হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের যে কোনো গুরুদায়িত্ব তার ওপর নির্দ্বিধায় ন্যস্ত করা যায়। উপমহাদেশের বুজুর্গ ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সহযোগিতায় ক্রমান্বয়ে তাবলিগি জামায়াতের কার্যক্রম ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ প্রসারিত হয়েছে গোটা দুনিয়ায়।

দিল্লির নিজামুদ্দীনকেন্দ্রিক তাবলিগের এ কাজ শুরু হওয়ার পর একদিন হজরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) নিজামুদ্দীনে গেলেন হজরত ইলিয়াস (রহ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ফরিদপুরীকে স্বাগত জানালেন। জড়িয়ে ধরে বলেন, তোমার বাংলাদেশে তাবলিগের দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও এ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন সানন্দে। একবার খুলনার মোল্লারহাট থানার উদয়পুরে তার দেখা হলো তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর সঙ্গে। মাওলানা তাকে ইলিয়াস (রহ.)-এর তাবলিগের মিশনের কথা বোঝালেন এবং দুজনে গিয়ে হাজির হলেন কলকাতার তাবলিগ মারকাজে। মাওলানা আব্দুল আজিজ নাম লেখালেন তিন চিল্লায় এবং শেষ করে নিজামুদ্দীন হাজির হয়ে পরামর্শ করে আবার সেই উদয়পুরে ফিরে এলেন।

উদয়পুর মাদ্রাসা মসজিদ মারকাজ হিসাবে ঠিক হলো। শুরু হলো বাংলাদেশে তাবলিগের কাজ। মাওলানা আব্দুল আজিজকে আমির বানিয়ে দেওয়া হলো। দুই তিন বৎসর কাজ চলার পর একসঙ্গে মাদ্রাসা ও তাবলিগের কাজে কিছু অসুবিধা হওয়ায় পরামর্শ করে মাওলানা আব্দুল আজিজ-এর গ্রামের বাজার মসজিদ খুলনার তেরখাদা থানার বামনডাঙ্গায় নেওয়া হলো। এটা হলো বাংলাদেশে তাবলিগের দ্বিতীয় মারকাজ।

চার-পাঁচ বছর কেটে গেল, কাজের উন্নতিও হলো বেশ। একবার ইজতেমার সময় মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী বললেন, বাবা আব্দুল আজিজ গ্রামে মারকাজ হয় না, মারকাজ খুলনায় নেওয়া দরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হলো। হুজুর হেলাতলার মোতাওয়াল্লি সাহেবের কাছে বলে তালাবওয়ালী মসজিদ বর্তমান দারুল উলুম মাদ্রাসার মসজিদে নেওয়া হলো মারকাজ। কাজ জোরেশোরে আরম্ভ হলো। বরকতও হলো অনেক। হজরত মাওলানা আব্দুল আজিজ সব সময় মারকাজে অবস্থান করেন। একবার ইজতেমার পর পরামর্শ হলো-ফরিদপুরী বললেন, বাবা আব্দুল আজিজ!

দেহ এক জায়গায় এবং রুহ অন্য জায়গায় কাজে বরকত হচ্ছে না। এখানে মারকাজ চলুক এলাকার ভিত্তিতে। তুমি ঢাকার লালবাগ শাহী মসজিদে চলে এসো। শাহী মসজিদ বাংলার মারকাজ হবে। তাই হলো। কিছুদিন চলার পর ইজতেমার জন্য লালবাগে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। ফরিদপুরী বললেন, দেখ মসজিদের সঙ্গে মাঠ আছে কোথায়! পরামর্শ করে লালবাগ কেল্লার উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত খান মোহাম্মদ মসজিদকে মারকাজ করে নেওয়া হলো। মাওলানা আব্দুল আজিজ সেখানে এলেন।

এটা হলো বাংলাদেশের পঞ্চম মারকাজ, লালবাগ মাদ্রাসা মসজিদ চতুর্থ মারকাজ এবং খুলনা তৃতীয়। কয়েক বৎসর পর খান মোহাম্মদ মসজিদ মাঠে ইজতেমার জায়গা সংকুলান হলো না। পরামর্শ হলো- ফরিদপুরী সবাইকে বললেন আপনারা দেখুন, ঢাকা শহরে বড় মাঠের পাশে কোথাও কোনো মসজিদ আছে কিনা। অনেক অনুসন্ধানের পর পাওয়া গেল রমনা পার্ক বড় ময়দানের পাশে ছোট একটি মসজিদ আছে। নাম মালওয়ালি মসজিদ।

বাংলাদেশের ৬ নম্বর দাওয়াতি মারকাজ হলো সেখানেই। এভাবে তাবলিগের আলোয় আলোকিত হয় বাংলার সবুজ ভূমি। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তাবলিগের সাথীদের মূল জামাত বার্ষিক ইজতেমা টঙ্গির ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষের সময়, শ্রম ও অর্থের কুরবানির বিনিময় এগিয়ে চলছে দ্বীন ও ইমানের এ মিশন।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম