তাবলিগের ছয় কথা
যে ছয়টি নীতিমালার আলোকে তাবলিগের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে তা ছয় নম্বর হিসাবে পরিচিত। তাবলিগের ছয় নম্বর নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন-
সুহাইল আহমদ
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কালেমা
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আমরা যা কিছু দেখি বা দেখি না, আল্লাহ ছাড়া সবকিছু মাখলুক (সৃষ্ট)। মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। একমাত্র হুজুর (সা.)-এর জীবনযাপন পদ্ধতি রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও সফলতা।
যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ কালেমা একবার পাঠ করবে, আল্লাহ তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে যারা ইমান আনে আল্লাহ ও কিয়ামতের ওপর এবং সৎ কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিত হবে না (আল-বাকারাহ-৬২)। এ কালেমা আমরা বেশি বেশি পাঠ করি এবং লাভ জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই ও দোয়া করি।
নামাজ
হুজুর পাক (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন এবং সাহাবাদের যেভাবে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে নামাজ পড়ার যোগ্যতা অর্জনে চেষ্টা করা। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া ফরজ (নিসা-১০৩)। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এহতেমাম ও গুরুত্বসহকারে সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে আদায় করবে তার জন্য পাঁচটি পুরস্কার-রিজিকের ফয়সালা, কবরের আজাব মাফ, আমলনামা ডান হাতে পাওয়া, বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার এবং বিনা হিসাবে জান্নাত লাভ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করি। ওয়াজিব ও সুন্নতের এহতেমাম করি। কাজা নামাজগুলো সময় সুযোগমতো আদায় করি। নফল নামাজ বেশি বেশি পড়ি। নামাজের লাভ জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই এবং সব উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য দোয়া করি।
ইলম ও জিকির
আল্লাহতায়ালা কখন কি আদেশ নিষেধ করেছেন এবং হজুর পাক (সা.)-এর তরিকা জেনে সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করি। আল্লাহতায়ালা কুরআনে কারিমে এরশাদ করেন ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের মাধ্যমে। মানুষকে ওইসব বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না (আলাক-৩-৫)।
ইলম আমরা দুভাবে শিখব। ফাজায়েলে ইলম আমরা তালিমের হালকা থেকে শিখব আর মাসায়েলে ইলম আমরা হক্কানি ওলামাদের কাছ থেকে জানব। ইলমের লাভ জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেব।
জিকিরের উদ্দেশ্য-সর্বাবস্থায় আল্লাহর খেয়াল অন্তরে সৃষ্টি করা। আল্লাহপাক বলেন ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব (সূরা বাকারাহ-১৫২)। যে অন্তরে জিকির আছে সেই অন্তর জিন্দা, আর যে অন্তরে জিকির নেই সে অন্তরে মুর্দা সমতুল্য।
একরামুল মুসলিমিন
প্রত্যেক মুসলমানকে সম্মান করা। সৃষ্টির উপকারের চেষ্টা করা। মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং, তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর, আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয় (হুজুরাত-১০)। আর তারা আল্লাহর মহব্বতে দরিদ্র, ইয়াতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই খাদ্য দান করে। এর বিনিময়ে না কোনো প্রতিদান, না কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আশা করে (আত-দাহর ৮-৯)। আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করতে থাকবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে মুসলমান ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে (মুসলিম, আবু দাউদ)। আমরা আলেমদের সম্মান করি, বড়দের শ্রদ্ধা করি, ছোটদের স্নেহ করি। এর ফজিলত ও হুকুম জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই।
বিশুদ্ধ নিয়ত
আমরা যে কোনো কাজ করি তা আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যই করি। নিয়তকে বিশুদ্ধ করে ইবাদত করতে হবে। আল্লাহপাক বলেন, ‘বিশুদ্ধ ইবাদত একমাত্র আল্লাহরই যোগ্য (সূরা জুমার-৩)। আল্লাহর কাছে না উহাদের (কুরবানির) গোশত পৌঁছে, আর না উহাদের রক্ত; তার কাছে তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে থাকে (আল হাজ্জাজ-৩৭)। কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখতে পাবে, আর কেহ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে সে তাও দেখবে (জিলজাল-৭-৮)। প্রত্যেক কাজ করার আগে লক্ষ করি যে, এতে আল্লাহতায়ালার হুকুম ও নবি (সা.)-এর তরিকা ঠিক আছে কিনা? আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য করছি কিনা? কাজের মাঝে নিজের নিয়তকে যাচাই করি এবং কাজের শেষে তওবা ও ইস্তেগফার পড়ি।
দাওয়াতে তাবলিগ
আল্লাহর দেওয়া জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে জানমাল ও সময়ের সঠিক ব্যবহার শিক্ষা করা। ইমান ও আমলের ওপর মেহনত করে তা হাসিল করা। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা আবশ্যক, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করে; সৎকাজের আদেশ করে ও অসৎকাজ করতে নিষেধ করে। আর এরূপ দলই পূর্ণ সফলকাম হবে (আলে-ইমরান-১০৪)। নবি (সা.) বলেন, পৌঁছে দাও একটি আয়াত হলেও আমার পক্ষ থেকে (বুখারি)।
আল্লাহর রাস্তায় সময় দিয়ে দাওয়াতের এ কাজকে শিক্ষা করি। মসজিদের আমলে ও মসজিদ আবাদের কাজে সব সময় নিজেকে লাগিয়ে রাখি। যে কোনো কাজে মহল্লার সাথীদের সঙ্গে পরামর্শ করি। মৃত্যু পর্যন্ত মোবারক এ মেহনতের কাজ করার নিয়ত করি। আল্লাহপাক আমাকে ও সব উম্মতে মুহাম্মাদীকে দাওয়াতের কাজের জন্য কবুল করুন।