সাফল্যের শিখরে পাঁচ জয়িতা
অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম (নাটোর)
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। যারা নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক। নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জায়গা করে নেন। এমনই বড়াইগ্রাম উপজেলার পাঁচ জয়িতা দরিদ্র-অবহেলা, নিপীড়ন-বৈষম্যকে পেছনে ফেলে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমে সফলতা এনেছেন জীবনে। ২০২২ সালে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে এই পাঁচ নারী
বিজয়ী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন-
শেফালী খাতুন : দোগাছী গ্রামের ময়লাল হোসেনের স্ত্রী এবং মেরিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শেফালী খাতুন। তিনি এবার উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সমাজ উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন। তিলে তিলে সঞ্চয়ের তিন লাখ টাকায় ২০২০ সালে কিনেছেন একটি রিকন্ডিশন অ্যাম্বুলেন্স। বিনা ভাড়ায় এটি দিয়ে প্রত্যন্ত আট গ্রামের দরিদ্র রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানো হচ্ছে।
নীলা চৌধুরী : দেশসেরা উদ্যোক্তা পুরস্কারপ্রাপ্ত নীলা চৌধুরী জীবন সংগ্রামে দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি রোলভা গ্রামের শ্রী সুশীল কুমারের স্ত্রী। স্বামীর ব্যবসায় একের পর এক লোকসানে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে গ্রামে। ২০১৪ সালে তিনি উদ্যোক্তা হিসাবে অনলাইনে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ ও ২০২০ সালে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় (এটুআই) থেকে দেশসেরা উদ্যোক্তা নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
নুরজাহান বেগম : রামেশ্বরপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক আরশেদ আলীর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। বিয়ের পর বেতনহীন শিক্ষক স্বামীর সংসারে থেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। খেজুর পাতার পাটি বানিয়ে বিক্রি করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া খরচ জোটাতেন তিনি। এভাবে লেখাপড়া শিখে তার বড় ছেলে আসাদুজ্জামান সরকারি পোস্ট মাস্টার, দ্বিতীয় ছেলে আসলাম হোসেন সরকারি ডাকপিওন, তৃতীয় ছেলে আকরাম হোসেন চামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং চতুর্থ সন্তান আসমা খাতুন রামেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
রওশনারা খাতুন : দুই সন্তানের জননী রওশনারা খাকসা গ্রামের নুরুল হকের স্ত্রী। যৌতুকের দাবিতে স্বামীর নির্যাতন ছিল তার নৈত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১০ সালে তাকে তালাক দেয় স্বামী। বর্তমানে একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গে সেলাই ও নকশী কাঁথার কাজ করে সংসারে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
বিউটি বেগম : দিঘইর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে বিউটি বেগম। বিয়ের ৫-৬ বছর পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। বাধ্য হয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে দুই ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেন তিনি। রাস্তায় মাটি কেটে, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ এবং কলেজ মেসে রান্না করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখান। বর্তমানে দুই সন্তান কোম্পানিতে চাকরি করছেন।