
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
একাত্তরের মুক্তির দূত মেজর জিয়া

সুশীল বড়ুয়া
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
একাত্তরে আমি চট্টগ্রাম কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধের মূলধারা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। মার্চের প্রথম থেকে কলেজে চলছিল সাংস্কৃতিক সপ্তাহ। কলেজ অডিটোরিয়াম ছাত্রছাত্রী গিজগিজ করছে। অডিটোরিয়ামের বাইরেও শত শত ছাত্রছাত্রী দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছে। সবার মনে প্রশ্ন-কেন অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে না। হলের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠছে।
কিছুক্ষণ পর অডিটোরিয়ামের মঞ্চ থেকে মাইকে কলেজের নির্বাচিত ছাত্র সংসদের জিএস কাজী মনিরুজ্জামান মন্টুর কণ্ঠ ভেসে ওঠে-তিনি বলতে শুরু করেন, সংগ্রামী সাথিরা, পাকিস্তানি সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন; তাই এখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করার সময় নয়, আসুন আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্রদের মিছিলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষও যোগ দিতে থাকে। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। কার্যত চট্টগ্রাম অচল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২ মার্চ হরতাল আহ্বান করেছে, সকাল ৯টায় লালদীঘি ময়দানে জমায়েতের ডাক দেয় এবং বিকাল ৩টায় জনসভা আহ্বান করে। ন্যাপ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব সংগঠন এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানায়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মূলধারা ‘নিউক্লিয়াস’ বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য।
২ থেকে ৬ মার্চ চট্টগ্রামসহ সারা দেশে হরতাল পালিত হতে থাকে। তখন সারা দেশের দৃষ্টি ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্সের দিকে। সবার কথা ওইদিন কি স্বাধীনতা ঘোষণা করা হবে?
২ মার্চ চট্টগ্রাম কলেজ সাংস্কৃতিক সপ্তাহের নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে দেয়। ৩ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে বিহারি অধ্যুষিত এলাকা পাহাড়তলি ও শের শাহ কলোনিতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে পাকিস্তানি সৈন্যরা সিভিল ড্রেসে সাধারণ বিহারি সেজে এসব এলাকায় অবস্থান করে বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করতে থাকে। দাঙ্গায় শত শত লোক আহত ও নিহত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাজার হাজার লোক আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে থাকে। চট্টগ্রামের সব দলের নেতা আহ্বান জানান আহতের রক্ত দেওয়ার জন্য। শহরে অবস্থানরত হাজার হাজার নারী-পুরুষ রক্ত দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভিড় করে। দাঙ্গা প্রতিরোধে শহরে সর্বদলীয় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয় এমআর সিদ্দিকীকে আহ্বায়ক করে। ৭ মার্চ চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষকদের এক সভায় অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও ড. শামসুল আলম সাঈদ কলেজ থেকে জিন্নাহর ছবি সরিয়ে ফেলার দাবি জানান। ওইদিন চট্টগ্রামে আনাচে-কানাচে ব্যাপক হারে বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি হতে থাকে। সবাই আশা করছে, আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা হবে। আর কোনো বিকল্প পথ নেই। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের মূলধারা শক্তি ‘নিউক্লিয়াস’ বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা না করে পাকিস্তানি খুনি শাসক ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আপস করার নিমিত্তে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খোলা রাখেন। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের দৃষ্টি ছিল পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল। ৭ মার্চের পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচি ছিল ইয়াহিয়া খানের জান্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করা যায় কীভাবে, আর ইয়াহিয়া খানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের ক্ষমতার মুলা দেখিয়ে বাংলাদেশে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
৮ মার্চ মেজর জিয়া ও ক্যাপ্টেন অলি আহমদ স্বাধীনতার ব্যাপারে আলোচনা করেন। ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম সামরিক আইন দপ্তরে একটি বৈঠক হয়, যাতে উপস্থিত ছিলেন লে. ক. এমআর চৌধুরী, মেজর জিয়া, মেজর আমিন আহমদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন অলি আহমদ। কর্নেল চৌধুরী ও মেজর জিয়া সশস্ত্র অভ্যুত্থানের আহ্বান নিয়ে আলোচনা করেন। এ বৈঠকটির ব্যাপারে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতারা জানতেন না এবং এ বৈঠকে ক্যাপ্টেন রফিক ছিলেন না। এর আগে ক্যাপ্টেন রফিক ৩ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. জাফরের সঙ্গে তার ৩ মার্চ বিস্তারিত আলোচনা হয়। ক্যাপ্টেন রফিক ও ডা. জাফর ১৮ মার্চ কর্নেল কাদিরের সঙ্গে আলোচনা করেন বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে, তখন কর্নেল কাদির ডেপুটেশনে তেল ও গ্যাস উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। ২১ মার্চ জেনারেল হামিদ চট্টগ্রামে এসে কর্নেল ফাতেমীকে দ্রুততার সঙ্গে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। জেনারেল হামিদ ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের সঙ্গে কোনো আলাপ করেননি। এ ব্যাপারে মেজর জিয়া ও ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের আলাপ হয়। ২২ মার্চ ক্যাপ্টেন রফিক মেজর জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সেনা বিদ্রোহের সঙ্গে ইপিআর এক থাকবে বলে জানান। এদিন ক্যাপ্টেন হারুন, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান, ক্যাপ্টেন অলি আহমদ ও লে. শমসের মবিন চৌধুরী ক্যাপ্টেন রফিকের বাসায় আলোচনায় বসেন। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার ও ডা. মান্নানও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় সেনা অফিসাররা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার, আওয়ামী লীগের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সামরিক শাসকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আরোহণ করা। ১৯৭১ সালের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাঙালি সেনা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাদের চেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার (ইবিআরসি) ও ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে ২০০০ ছিল বাঙালি সেনা আর পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য ছিল ৫০০। অন্যদিকে ইপিআরের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসার ৯০ শতাংশ হলেও সৈন্যদের মাঝে ৮০ শতাংশ ছিল বাঙালি। যে কারণে সিনিয়র বাঙালি অফিসাররা চেয়েছিল স্বাধীনতা ঘোষণা করে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের খতম করতে; কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অনুমতি দেননি।
২৫ মার্চ রাতে ৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল জানজুয়া মেজর জিয়াকে এক কোম্পানি পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে নির্দেশ দেন। কর্নেল জানজুয়ার পরিকল্পনা ছিল বন্দরে জিয়াকে হত্যা করা। সেসময় সমগ্র চট্টগ্রাম শহরের রাস্তা ছিল ব্যারিকেডে বন্ধ। ব্যারিকেড সরিয়ে আগ্রাবাদ যেতে মেজর জিয়ার কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান খবর নিয়ে এসে মেজর জিয়াকে জানান, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে এবং জানতে চান বাঙালি সৈন্যদের করণীয় কী, তখন মেজর জিয়া ঘোষণা করে ‘We Revolt’, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করলাম। তখন রাতের তৃতীয় প্রহর ২৬ মার্চ শুরু। মেজর জিয়া তার ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে ফেরত এসে প্রথমে কর্নেল জানজুয়াসহ সব পাকিস্তানি অফিসার এবং সৈনিকদের গ্রেফতার করেন।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ভেবেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যাবে। তবে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ রাতে আলোচনা বন্ধ করে দেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে, সেই রাতে তিনি সামরিক অভিযান শুরু করার নির্দেশ দিয়ে ইসলামাবাদে চলে যান। ২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দীন আহমদ রেকর্ডিং যন্ত্র নিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য অনুরোধ করেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন। বঙ্গবন্ধু শেষ পর্যন্ত আশায় ছিলেন, ইয়াহিয়া খান আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে। তখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে। সে সময় তিনি একটি টেলিফোন কলের অপেক্ষায় ছিলেন।
২৫ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে অপারেশন ‘সার্চলাইট’ শুরু হলে প্রথমে বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করেন এবং বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেন। সেসময় মেজর জিয়া তার সমগ্র ব্যাটালিয়নের কর্তৃত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করে জানিয়ে দেন, আমরা এ মুহূর্ত থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হলাম। পরবর্তীকালে কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ ৭টা ৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণা হলো নিুরূপ : ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান প্রভিনশিয়াল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চিফ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেমেছি, আপনারা যে যা পারেন সামর্থ্য অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে দেশছাড়া করতে হবে।’ এ ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হলেও সঙ্গে সঙ্গে দেশের মুক্তিকামী জনতার মাঝে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গের মতো ব্যাপক উদ্দীপ্ত হয়ে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে পালিয়ে আসা বাঙালি সৈনিক, ইপিআরের সদস্য, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। পরবর্তীকালে মেজর জিয়া ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করেন। তা হলো ‘প্রিয় দেশবাসী, আমি মেজর জিয়া মহান জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আপনারা পাকিস্তানি দুশমনদের প্রতিহত করুন এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দিন। বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের মতো যুদ্ধের সমর্থন দিন এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতি দিন। ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের অবধারিত।’ দুটি ঘোষণা তিনি ইংরেজিতে পড়েন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৭২ সালের ৭-৮ এপ্রিল দুদিনব্যাপী আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মেজর জিয়ার ঘোষণাকে স্বীকৃতি দিয়ে অভূতপূর্ব হিসাবে উল্লেখ করে। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রথম ভাষণ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাসংগ্রামে আমাদের এ অভূতপূর্ব সাফল্য আরও নতুন সাফল্যের দিশারি। প্রতিদিন আমাদের মুক্তিবাহিনীর শক্তি বেড়ে চলেছে। একদিকে যেমন হাজার হাজার মানুষ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে, তেমনি শত্রুর আত্মসমর্পণের সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। আর এ সঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসছে শত্রুর কেড়ে নেওয়া হাতিয়ার; এ প্রাথমিক বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেজর জিয়াউর রহমান একটি পরিচালনা কেন্দ্র গড়ে তোলেন এবং সেখান থেকে আপনারা শুনতে পান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কণ্ঠস্বর। এখানে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় প্রয়োজনে নেতার সৃষ্টি হয়, নেতা জাতি সৃষ্টি করতে পারে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে তা স্পষ্ট আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। ১৯৪৭ থেকে ৭ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তার পরের ইতিহাস হলো মেজর জিয়া ও তাজউদ্দীন আহমদের ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন ইয়াহিয়া খানের বাহিনী অপারেশন ‘সার্চলাইটের’ মাধ্যমে বাংলার মুক্তিকামী জনতার ওপর গণহত্যা শুরু করেছিল, তখন জনগণকে কোনো নেতৃত্ব আলোর পথ দেখাতে এগিয়ে আসেনি, সাড়ে সাত কোটি জনতার মুক্তির দূত হিসাবে ‘দেবদূত’-এর মতো আগমন ঘটে মেজর জিয়ার। তখন মেজর জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে সাড়ে সাত কোটি জনতা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় ছিনিয়ে আনেন।