
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৭ এএম

মিথিলা ফারজানা
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
আব্বু চুপ থাকেন। তাকে চা দিতে গেলে যদি বলি ‘আব্বু তোমার চা দিয়ে গেলাম’ তখনো তিনি চুপ থাকেন। আজ ব্যতিক্রম হলো। তিনি বললেন, ‘চা সামনের রুমে নিয়ে যাও, ওইখানে বসে খাব।’
উলটা দিকে চলে এলাম সামনের রুমে। কোনো এক সিরিয়ালে মর্মান্তিক এক দৃশ্য হচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে চোখের পানি আর চা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আব্বু অত্যধিক বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘দয়া করে কান্নাকাটি বন্ধ কর। তোমাকে কেউ পড়তে বসতে বলেনি কিংবা এখন শীতকালও না যে তোমাকে গোসল করতে বলা হয়েছে বলে কান্না করছ!’
অ্যাক্টিং বাদ দিলাম। কালিমাখা টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে চেহারায় পান্ডার ছাপ এনেছি। সবই কপাল। আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্লান কী?’
আঁতকে উঠলাম। তিন রাস্তার মোড়ে আসর বসানর প্ল্যান জেনে গেল না তো? তাহলে সর্বনাশ! গরাদের ওপাশে পাঠিয়ে দেবে। কিছু বলিনি। চুপ করে খাম্বার মতো বসে রইলাম। আব্বু আবার বললেন, ‘গাধা! ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা, ভাবনা কী তোমার? এক্সপ্লেইন কর। কী করতে চাও?’
লাইনে আসছে। উপযুক্ত সময়। ভবিষ্যৎ ভাবনা বলতে হবে। ঝেড়ে কেশে বলা শুরু করলাম, আব্বু, দেশের চাকরির বাজারের যা অবস্থা তাতে চাকরি পাওয়া আর কাউয়ার পা ধরে উড়ে যাওয়া সমান কথা। কাজেই আমাদের উদ্যোক্তা হতে হবে। সে হিসাবে মনে মনে একখানা ছক কষে নিয়েছি আগেই। প্রথমে একটা টিম বানাতে হবে। প্রথম দিকে ৪-৫ জন হলেই হবে। প্রথম দিকের কাজ বেশ কঠিন হবে। একেকজনকে একেক জায়গায় থাকতে হবে। এ যেমন ধর, নারী বেস্ট ফ্রেন্ডকে চৌমাথা বসিয়ে দেব বালিশের কভার নিয়ে। ভিক্ষা করে যে আয় হবে তা সে সেই কভারে রাখবে। তারপর ধর, চাচাতো বোন একটাকে বসিয়ে দেব মেডিকেলের সামনে। আয়-রোজগার একটু বেশি হবে ওর। অন্য একটাকে লঞ্চঘাটের ১ নং গেটে, অন্য একটাকে ২ নং গেটে বসিয়ে দেব। পুরুষ বেস্ট ফ্রেন্ড একটাকে ভার্সিটির সামনে ভাঙা থালা নিয়ে বসিয়ে দেব। একটাকে সরকারি কলেজের সামনে এবং অন্যটাকে আমাদের কলেজের গেটে বসিয়ে দেব। সর্বশেষ নিজের জন্য হোস্টেলের বাবুর্চি রেশমা আন্টির বাচ্চা ছেলেকে ধার নিয়ে হাঁটা দেব। গুগলে সার্চ করেছিলাম ভিক্ষা করার কৌশল। যদিও নো রেজাল্ট ফাউন্ড আসছে, ব্যাপার না অবশ্য। আমি বেশ কিছু প্রফেশনাল ভিক্ষুকের সঙ্গে লাগলে কথা বলব। আর বেশি চিন্তা কইর না। ইয়ে মানে রবিনের ব্যাপারটা তো তুমি জানই। ওকেও একদিন আমাদের দলে নিয়ে আসব। যদিও তার একখানা চাকরি আছে। তবু তাকে আমাদের দরকার। কারণ, তার মাথায় অনেক বুদ্ধি আছে। এভাবে করলে একপর্যায়ে দেখা যাবে শহরে আমাদের ভিক্ষাবৃত্তি কল্যাণ সংগঠন বেশ বড় একটা জায়গা করে নেবে। এরপর আমরা পার্শ্ববর্তী শহর, উপজেলাগুলোতেও নিজেদের ব্র্যাঞ্চ ওপেন করব। আস্তে আস্তে দেশব্যাপী আমাদের অ্যাসোসিয়েশন ছড়িয়ে যাবে। সম্ভব হলে বিদেশেও একটা ব্র্যাঞ্চ থাকবে। এভাবে করে একদিন আমরা কোটিপতি হয়ে যাব। তখন তেল ব্যবসা করব, পেঁয়াজ ব্যবসা করব। বাড়ির সামনের পুকুরে দেখবা তেল আর তেল। বাড়ির পেছনের পুকুরে দেখবা তেল আর তেল।’
বলা শেষ করেছি। হাসি মুখে আব্বুর দিকে তাকালাম। দেখি তিনি কাথা, বালিশ, ব্যাগ নিয়ে রওনা দিয়েছেন। খুশি হলাম। আব্বু নির্ঘাত আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনায় অত্যাধিক খুশি হয়ে নিজেও এই দলে যোগদান করছে। তা না হলে কাথা বালিশ নিয়ে আর যাবে কোথায়!
আব্বু বের হয়ে গেলেন। পেছন থেকে ডেকে বললাম, ‘আব্বু, তুমি কোন জায়গায় বসবা? লোকেশন জানিয় কেমন।’
নিজেকে এখন সফল উদ্যোক্তা মনে হচ্ছে। পরিকল্পনা জানানোর আগেই বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বাপ রওনা দিয়েছে। সফলতার শীর্ষে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র!
বরিশাল সদর