
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৭ এএম

এনাম আনন্দ
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
প্রায়ই শোনা যায় বয়কটের ডাক। কিশোর, তরুণ, জোয়ান, বুড়ো সবাই বিভিন্ন ইস্যুতে বয়কটে শামিল হয়। এদিক দিয়ে নজর আলী সবকিছুর ওপর খুব কড়া নজর রাখেন। শেষমেশ গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তিনিও বয়কট পরিবারের সদস্য হলেন।
নজর আলী ফজর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া মাত্রই টেপু ঘটকের সঙ্গে দেখা। টেপু একগাল হেসে বলল, ‘কী নজর আলী ভাই! নামাজ পড়ে বের হইলা বুঝি!’
‘হ, তোমারে তো আইজকাল দেহাই যায় না। কী মনে কইরা এদিক আইলা।’
‘আরে নজর আলী ভাই, আমাগোর ভাতিজা যে ডাঙর অইয়া গেছে আমি কিন্তু জানি। তাই বিয়ার একটা সমন্ধ লইয়া আইছি। কি, পোলা বিয়া করাইবা না?’
‘পোলা আমার লায়েক অইয়া গেছে। এখন রোজ তিনবেলা কইরা ফেসবুক চালায়। বিয়া তো করাতেই অইব। তয়, মাইয়ার পরিবার কইলাম বয়কট পরিবার হইতে অইব। নাইলে পোলা বিয়া করাইতাম না।’
‘আরে কী যে কও নজর আলী ভাই। মাইয়ার পরিবার পুরাই বয়কট পরিবার।’
‘তাইলে মিয়া বাড়ি আইয়ো। বিস্তারিত আলাপ অইব।’
তারপর বিয়ের কথাবার্তা বেশ এগিয়েছে। হঠাৎ নশু (মানে বিয়ের পাত্র) ঘটকের কাছে মেয়ের ফেসবুক আইডি চাইল। ঘটক বলল, ‘মাইয়া যে ভালার ভালা সে তো ফেসবুক চালায় না।’
এদিকে নশুর এক কথা, ‘যে মাইয়া ফেসবুক চালায় না হেই মাইয়া আমি বিয়া করতাম না।’ কথাটি এক কান-দুকান হয়ে মেয়ের কানে চলে যায়। মেয়েও সাফ জানিয়ে দেয়, ‘যে পোলা বয়কট পরিবারের সদস্য হইয়া ফেসবুক চালায়। তারে আমি বিয়া করতাম না। যে পোলা ফেসবুক চালাইয়া অন্য দেশরে ধনী বানায় তার লগে আমি নাই।’
শেষে মুরুব্বিরা অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দুজনকে বিয়েতে রাজি করান। বাদসাধে বিয়ের দিন। বরযাত্রী খেতে গিয়ে দেখে শুধু ভাত, ফার্মের মুরগি আর মাসকলাইয়ের ডাল। এসব দেখে বরযাত্রী খুব রেগে গেল ও অপমানবোধ করল। বরের বাবা মানে নজর আলী টেপু ঘটককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ঘটক, খাবারের এ অবস্থা ক্যান! দেশে কী গরুর মাংসের অভাব পড়ছে? তোমাগোর টেহা না থাকলে কইতা আমিই গরুর মাংস কিন্না দিতাম।’
ঘটক নজর আলী বলল, ‘ভাইজান, সমস্যা তো টেহার না। তারা গরুর মাংস বয়কট করছে। আপনিও তো করছেন।’
নজর আলী দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বললেন, ‘তাইলে ইলিশ মাছ ভাজি করতে পারত! ঠিক না?’ ‘ভাইজান, ইলশা মাছের যে দামের দাম! এইডাও তো বয়কট করছে।’
‘তাইলে দই কই?’
‘ভাইজান দেহি বেবাক ভুইল্লা গেছেন। দেশি গরু বেশি অইলে দেড় থাইকা আড়াই সের দুধ দেয়। বিদেশি গরুর দুধ ছাড়া দই বানাইতে এত দুধ পাইব কই? এইডাও বয়কট। আফনের বুঝতে অইব ভাইজান, মাইয়ারা একটি আদর্শ বয়কট পরিবার।’
মিরপুর, ঢাকা