
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৭ এএম

সাদিয়া আক্তার ছন্দা
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
নামটা শুনে হয়তো যে কেউ হুট করে বুঝবে না গদা শব্দটার মানে কী! আর কেউ না জানলেও আমাদের কলেজের আবাসিক ছাত্রী মানে হোস্টেলবাসীরা এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে। প্রথমে শব্দটি শুনে যে কারও মনে প্রশ্ন আসতে পারে, গদা কী? হোয়াট ইজ গদা? গদা হলো হাড় বিহীন মুরগির মাংসের বড় বড় টুকরা।
শুনে খুব অবাক লাগছে তাই না? কে কবে এই নামকরণের জনক সে আমার জানা নেই। তবে একটু বাদে গদার ব্যাখ্যা শোনার পর মনে হবে নামকরণ যথার্থ হয়েছে। শুধু নামে না, দেখতেও অদ্ভুত সাইজ এই গদা। কখনো দেখতে এটা হতো আয়তাকার, বর্গাকার কিংবা পিণ্ডের মতো। কিছু কিছু আবার পিরামিড আকৃতির। কে বা কারা এমন উদ্ভট আকারে কাটত এসব মাংসের টুকরা সেটা আজ অবধি অজানা।
এত সুন্দর আকৃতির জন্য এসব গদায় কোনো ঝাল, তেল, মসলা ঢুকত না। খাবার সময় আমরা দেখতাম গদার ভেতরটায় সাদা পানি বের হচ্ছে। অতএব, স্বাদ কেমন আন্দাজ করলেই বুঝবেন আপনারা। এসব ঝালবিহীন নরম গদা যেন দুগ্ধপোষ্য শিশু আর দন্তহীন বৃদ্ধ মানুষদের খাবার। তবে একদল গদা প্রিয় মেয়ে ছিল। এরা দেখতাম এসব গদা নেওয়ার জন্য খাবারের লাইনের শেষে পজিশন নিত। কারণ, খাবারের লাইনের প্রথম দিকে লেগপিস আর হাড়ওয়ালা মাংস দেওয়া হতো। এরপর স্তূপাকারে গদাগুলো পড়ে থাকত হাড়িঁতে। এ গদা খাওয়ার ফলে একদিকে একদল পুষ্টিবিহীন স্থূলস্বাস্থ্যের অধিকারী হচ্ছিল, আর একদল কংকালসার হয়ে অপুষ্টিতে ভুগছিল। রোজ রোজ এসব খাবার খেয়ে সবার রুচি প্রায় তুঙ্গে উঠে যাচ্ছিল। তবে, মেন্যুতে রোজ গদা রাখাতে অনেক উপকারও হচ্ছিল। রোজ বিপুল পরিমাণে ভাত বেচে যেত। অন্যদিকে বাইরের রেস্তোরাঁ বা ভাঁজা-পোড়ার অন্য দোকানগুলোর বেচা বিক্রি বাড়ত, ব্যবসায় সবুজ বাত্তি জ্বলত ওদের। বিখ্যাত এ গদার এ নাম অন্য জায়গায় আছে কিনা আমার জানা নেই। আমাদের হোস্টেল সুপার পর্যন্ত এ নাম শুনে হাসতেন আর বলতেন, ভালো নাম দিয়েছ তোমরা। স্যার আরও বলতেন, মানুষ তো খাইতে গেলে মাংসের হাড় পেলে মন খারাপ করে, আর তোমরা হাড় নিয়ে কাড়াকাড়ি কর। হাড়বিহীন মাংসের কি অদ্ভুদ নামই না দিয়েছ তোমরা! হা হা হা। বলেই স্যার হাসতেন। যা হোক, অনেক স্মৃতিচারণ হলো গদা নিয়ে। আশা করি আমাদের হোস্টেলের গদা একদিন টাঙ্গাইলের চমচম বা মুক্তাগাছার মণ্ডার মতো বিখ্যাত হয়ে উঠবে। অপেক্ষায় রইলাম জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার। ওইদিন না হয় হোস্টেলে ঘুরতে যাব আবার গদা খেতে।
পাবিপ্রবি, পাবনা