
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৮ পিএম

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
সেই দিন সাংবাদিক বন্ধু মিশা কভরভের সঙ্গে দেখা করার জন্য থেমেছিলাম। সে সোফাতে বসে নখ পরিষ্কার করতে করতে চা খাচ্ছিল। সে আমাকে এক কাপ চা দিয়ে আপ্যায়ন করল।
‘আমি পাউরুটি ছাড়া চা খাই না। ‘আমি বললাম। ‘‘আমাকে পাউরুটি দেওয়া হোক।”
“শর্তহীনভাবে! আমি বরং শত্রুকে পাউরুটি দেব, কিন্তু কোন বন্ধুকে না।”
“এ তো অদ্ভুত। কেন নয়?”
“এই কারণে। এইদিকে এসো।”
মিশা আমাকে টেবিলের কাছে নিয়ে গেল এবং একটি ড্রয়ার টান দিয়ে খুলল।
“দেখ”
আমি ড্রয়ারের দিকে তাকিয়ে বিশেষ কিছু দেখতে পেলাম না।
‘আমি কিছুই দেখছি না কী সব ছাইপাঁশ পেরেক, কাপড়ের টুকরো আর কয়েকটা ইঁদুরের লেজ’
‘ঠিক, ওইসব দেখ। আমি দশ বছর ধরে এই পেরেক, ন্যাকড়াগুলো জমাচ্ছি! এটা এক বিশেষ সংগ্রহ।’
মিশা ওই আবর্জনাগুলোকে জড়ো করে খবরের কাগজে মুড়ে নিয়ে নাড়াতে লাগল।
‘এই পোড়া দেশলাইয়ের বাক্সটি দেখেছ?’ একটা সাধারণ অর্ধদগ্ধ ম্যাচবক্স দেখিয়ে সে বলল। ‘এটা একটা মজার ম্যাচ। গত বছর সেভাসটিনভের বেকারি থেকে কেনা বারনকা কেকের মধ্যে এটাকে পেয়েছি। গলায় আটকে দম বন্ধ হতে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস পিঠে আঘাত করার জন্য বউ বাড়িতে ছিল। না হলে এই ম্যাচ আমার গলায় আটকে যেত। এই নখটি দেখেছ? তিন বছর আগে ফিলিপোভের বেকারি থেকে কেনা স্পঞ্জ কেকের ভেতরে এটাকে পেয়েছি। হাত-পায়ের স্পর্শ ছাড়া এ স্পঞ্জ কেক তৈরি হয়, তুমি বুঝতে পারছ, তার মধ্যে এই নখ ছিল। এ এক খাপছাড়া অবস্থা। পাঁচ বছর আগে মস্কোর সেরা দোকান থেকে কেনা সসেজের মধ্যে এ সবুজ টুকরোটা গেঁথে বসেছিল। এ সিগারেটের মুড়োটা রেলস্টেশনের কাউন্টারে বসে খাবার সময় বাঁধাকপির স্টু’র মধ্যে ছিল। এ পেরেকটি পেয়েছি একই স্টেশনের এক মাংসের কাবাবে। এ ইঁদুরের লেজ ও আঁচলের টুকরা পেয়েছি একটি মাত্র ফিলিপোভ পাউরুটিতে। এ ছোট মাছটি, যার শুধু কাঁটা অবশিষ্ট আছে, আমার স্ত্রী একটি স্পেশাল কেকের ভেতরে পেয়েছে। সেই কেকটি তাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। এ প্রাণী, যার নাম ছারপোকা, পেয়েছিলাম জার্মানির এক বিখ্যাত দোকানের মগভর্তি বিয়ারের মধ্যে। আর এ একটুকরো পক্ষীমল এক অবকাশযাপন কেন্দ্রের রেস্তোরাঁয় বসে একটি সুস্বাদু পাইয়ের টুকরোর সঙ্গে প্রায় গিলে ফেলেছিলাম। আর বাকিগুলোর ঘটনাও প্রায় একইরকম বন্ধু।
‘কী এক বিস্ময়কর সংগ্রহ!’
‘হ্যাঁ, এসবের ওজন হয়তো দেড় পাউন্ড হবে, সবকিছু হিসাব না করেই আমি অসাবধানে কত কী যে গিলে হজম করে ফেলেছি। হয়তো পাঁচ বা ছয় পাউন্ড তো হবেই।
মিশা আলগোছে খবরের কাগজটি তুলল, সাবধানে তার সংগ্রহ মুড়িয়ে আবার ড্রয়ারে রেখে দিল।
আমি কাপটি হাতে তুলে নিলাম, চা খাওয়া শুরু করলাম। পাউরুটির কথা আর তোলাই হলো না।