
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০১ এএম

শফিক হাসান
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
খাঁটি মধু নিয়ে আসতে বললাম, তরমুজ নিয়ে এলে যে? * এইটাই তো এই সময়ের ১০০% খাঁটি ভাইরাল মধু!
‘ওই কীরে, ওই কীরে? মধু, মধু!’ জি, এই মধুমাসে তরমুজ এখন ভাইরাল। আর বিচ্ছুর স্বভাব হচ্ছে, ভাইরাল জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করা। তরমুজের সঙ্গে রঙ্গ-রসালাপে মেতেছেন বিচ্ছু প্রতিনিধি শফিক হাসান
▶ তরমুজ ভাই, কেমন আছেন?
* থাকতে আর দিচ্ছেন কোথায়? সারাক্ষণই দৌড়ের ওপরে আছি। খেত থেকে আড়তে, আড়ত থেকে মাটিতে, আবার ভ্যানে, আবার খুচরা বাজারে। এক সময় মানুষ লাউ কচি কিনা বোঝার জন্য চিমটি কাটত। এখন দেখছি আমার গায়েও চিমটি কাটছে!
▶ ভাইরাল হয়ে কেমন লাগছে?
* ভাইরাল মানে যদি হয় ভাই-বেরাদারদের দূরে রেখে একাই এগিয়ে যাওয়া, তবে সেটা ভালোলাগার বিষয় নয়। কারণ আমি ফুটবল নই। আগে গিয়ে নিশ্চয়ই গোলপোস্টে ঢুকে পড়ে গোল দেব না! সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারাতেই আনন্দ।
▶ আগে পিস হিসাবে বিক্রি হলেও এখন কেজি দরে বিক্রি হচ্ছেন। এটা ভালো নাকি খারাপ?
* বোধকরি খুব একটা ভালো না। যদিও এতে আমার দাম বেড়েছে অনেক। পিস হিসাবে কিনলে আপনি বড়জোর দুইশ টাকায় কিনতেন। এখন পাঁচশ টাকায়ও ওঠে দাম। অফসিজনে হাজারও ছাড়িয়ে যায়। এটা ভালো-খারাপ দুই ধরনের ফিলিংসই দেয়।
▶ ছোট সাইজের, কালো চামড়ার বারোমাসি তরমুজ পাওয়া যায় এখন। আপনার জাতভাই। এতে কি মৌসুমি ফল হিসাবে মানসম্মানে টান পড়ে?
* আর বইলেন না, এক্কেবারে লুঙ্গি ধইরা টান দিছে। বারোমাসি শব্দটাই আমার অপছন্দ। সবকিছুর একটা সিজন আছে। যেমন ছেলেমেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে পাকে। আমরা পাকি গরমকালে। এর মধ্যে বারোমাসি বিষয়টা ঠিক খাপ খায় না। মান-ইজ্জত একেবারেই বরবাদ হয়ে গেল (এটাকে আবার শাকিব খানের সিনেমার বিজ্ঞাপন মনে করবেন না)। এখন নাকি কামরাঙ্গীরচরেও ফলন হচ্ছে। বগুড়ায় বা অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না!
▶ আপনার ছোট ভাই বাঙ্গির হাঁকডাক পাচ্ছি না যে এবার?
* মশাও একটা পাখি আর বাঙ্গিও একটা ফল! তাকে আবার বানিয়ে দিচ্ছেন আমার ছোট ভাই! লজ্জা-শরম থাকলে বাঙ্গি ফলের রাজ্যে নিজের মুখ দেখাত না। ওকে আমি দুই চোক্ষে দেখতে পারি না। নিরামিষ কোথাকার!
▶ দোকানদার লাল বলে গছিয়ে দেয়, বাসায় নিয়ে কাটলে দেখা যায় ভেতরটা ফকফকা সাদা। এমনটা কেন হচ্ছে?
* কবি বলেছেন, কালো আর ধলা বাইরে কেবল ভেতরে সবার সমান রাঙা। আপনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন-শতভাগ সৎ মানুষ আপনি? ভেতরে-বাইরে আপনার সব সমান! পারবেন না। তাই আমরাও পারি না। দূষণ... মানে জন্মগত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি সবারই আছে। আমাদের মধ্যেও থাকে। দোষের কী!
▶ ক্রেতারা কি ঠকার জন্য বাজারে যায়? চড়াদামে কিনেও লালের বিপরীতে সাদা পায়...
* মরিচ পাকলে লাল হয়, এটা চিরন্তন সত্য। তরমুজ পাকলে সব তরমুজ লাল হবে না এটা আপনাদের মেনে নিতে হবে। এখানে রাজনীতির কিছু নেই। দোকানদার ব্যাটাও কী করবে? সে কি চাইলেই লাল করে দিতে পারবে? ম্যাজিশিয়ান তো না। তরমুজ পেটালে বাঙ্গিও হবে না। মাইন্ড ইট!
▶ তার মানে আবার আসিব ফিরে/ লালে লাল হয়ে-এমন প্রতিশ্রুতি দেবেন না?
* প্রশ্নই ওঠে না। আবার আসিব ফিরে/ আগামী গ্রীষ্মে চান্দিফাটা গরমে/ তবে লাল হওয়ার নিশ্চয়তা দেব না। দেব না। দেব না।
▶ মরিচ যদি পাকলে লাল হয়, তরমুজ কেন সেই পথে হাঁটতে পারে না?
* তরমুজ পাকা মরিচ না যে সব সময় লাল থাকতে হবে। তরমুজের বংশ খান্দানি, মরিচের মতো পথে-ঘাটে জন্মায় না। আপনাকে একটা ছন্দমালা শোনাই-ঘরের পাশে মরিচ গাছ/ পাকা মরিচ ধরে/ বন্ধু তোমার লাইগা/ আমার মন কিরাম করে!
▶ কাওরান বাজারের তরমুজ বিক্রেতা রনি আপনাকে ভাইরাল করে দিয়ে পথে বসলেন!
* সে পথে বসেছে সত্য, তবে অন্যদের তো উপকার করেছে। ইউটিউবারদের দিয়েছে ভিউ কামানোর সুযোগ। হুজুগে যারা মাতামাতি করতে চায়, তাদেরও পোয়াবারো এখন। আনন্দে নাচছে। এসবকে তুচ্ছ করে দেখবেন না। এক রনি পলায়নে/ লক্ষজন নগদ নারায়ণে। ওরা তো ডলার কামাচ্ছে! রিয়েলিটি
মাইনে নিতে পারলে আপনের আফসোস থাকবে না!