
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০১ এএম

হানিফ ওয়াহিদ
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
বউকে হতে হয় কাস্টমার কেয়ারের মতো ধৈর্যশীল। জামাই সারা দিন গালাগাল করলেও ভদ্র ভাষায় বলবে, স্যার আপনি একটু ধৈর্য ধরুন, আমি বিষয়টা দেখছি।
আমার বউ হইছে উলটো, সে নিজেকে আমার বস মনে করে। সারাক্ষণ আমাকে বকাঝকা করে। তার ধারণা, আমার মতো অপদার্থ এবং বোকা দুনিয়াতে এক পিসই আছে। সকাল বিকাল আফসোস করে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাকে বিয়ে করা ছিল তার একমাত্র ভুল কাজ। শুধু সে বলেই আমার মতো বোকার সঙ্গে সংসার করে গেল, অন্য কেউ হলে...!
অথচ সে আমাকে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে! সে ছিল আমার আত্মীয় এবং তার সঙ্গে বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। তাকে বলেছিলাম, আমি তো গরিব। সে ভালোবাসায় গদগদ কণ্ঠে বলেছিল, সমস্যা কী, তোমার সঙ্গে প্রয়োজনে আমি ভিক্ষা করব! এখন কেউ যদি আমার সামনে কাউকে এসব বলে, ইচ্ছা করে মাইক ভাড়া করে হাসি।
আজকে দুপুরে বাসায় ফিরতেই বউ জিগ্যেস করল, ‘কোথায় গিয়েছিলে?’
আমি বললাম, ‘ব্যাংকে গিয়েছিলাম।’
‘তা জনাব, ব্যাংকে তোমার কত কোটি টাকা আছে যে তোমাকে আজকে ব্যাংকে যেতে হলো?’
‘আরে, টাকা নাই বলেই তো ব্যাংকে গেলাম, অ্যাকাউন্টটা বন্ধ করে দিতে।’
‘তা জনাব, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছেন?’
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, ‘না। ব্যাংকে কিছু সুন্দরী মেয়ে আছে, তারা এমন সুন্দর করে রিকোয়েস্ট করল যে আরেকটা অ্যাকাউন্ট খুলে এলাম। তুমি কি তাদের মতো এমন সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারো না?’
বউ আমার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, তারপর রাগি গলায় বলল, ‘আরেকটা অ্যাকাউন্ট খুলেছ? অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছে, খুলছ। যদি বিয়ে করতে বলত? ফুল কই, মেয়েরা তোমারে ফুল দেয় নাই? ফুল না দিক, কয়েকটা কাঁঠাল পাতা দিলেও তো পারত। আমি আমার জীবনে এমন বোকা মানুষ দেখি নাই। তোমার বুদ্ধি হবে কবে? আমি যে তোমাকে শ্যাম্পুর বোতল আনতে বলছিলাম, আনছ?’
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
আজকে বের হওয়ার সময় বউ আমাকে বাজার থেকে শ্যাম্পু কিনে আনতে বলছিল, পকেটে টাকা শর্ট ছিল বিধায় আনতে পারি নাই।
বউ অনবরত ভাঙা রেডিও বাজিয়ে চলেছে। সে নিশ্চিত বুঝতে পারছে, ব্যাংকের মেয়েরা যদি আমাকে বিয়ে করতে চাইত, আমি এক কথায় রাজি হয়ে যেতাম!
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি জেনে গেছি, আমার বংশের মধ্যে কতজন মানুষ ভয়াবহ রকমের খারাপ। বিলাপ করতে করতে বলছে, টাকার অভাবে যে জামাই বউকে সামান্য শ্যাম্পু কিনে দিতে পারে না, তার বউয়ের মতো হতাভাগা বউ জগতে আর একটাও নাই।
ব্যাটারি শেষ হয় না, বউয়ের ভাঙা রেডিও বাজাও বন্ধ হয় না।
আধাঘণ্টা পরে আমি মিনমিনে গলায় বললাম, ‘তুমি টাকার অভাবে আজ চুলে শ্যাম্পু দিতে পারলা না, আর আমি যে চুলের অভাবে মাথায় শ্যাম্পু দিতে পারি না! তাহলে কার দুঃখ বেশি?’
সে পারে তো আমাকে আস্ত গিলে খায়!
আমি তাকে খুশি করতে বললাম, ‘তুমি দেখতে কী কিউট! হাসলে গালে টোল পড়ে, কী ফাইন লাগে!’
পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘গালে টোল পড়লেই কেউ কিউট হয়ে যায় না। টোল তো হাঁড়িপাতিলেও পড়ে।’
আমি করুণ গলায় বললাম, ‘তুমি সারাক্ষণ আমাকে গালাগাল কর, কখনো কি একটুখানি প্রশংসা করে দেখেছ? আমার মধ্যে কি কোনোই গুণ নাই?’
সে তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘আচ্ছা, তুমি আমার মুখে তোমার প্রশংসা শুনতে চাও? ঠিক আছে, তুমি একজন সুন্দরী, সভ্য, নম্র, শান্তশিষ্ট ভদ্রমহিলার স্বামী। যাও, প্রশংসা করে দিলাম।’
আমি মনে মনে বললাম, ‘লে হালুয়া! এই মহিলা কার প্রশংসা করল, আমার না নিজের?’
‘যাও, আমার সামনে থেকে। তোমার এই কালো ভুইত্তামারা চেহারা দেখতে আমার বিরক্ত লাগছে। ও মা গো! ব্যাংকের মেয়েদের কী রুচি! এমন কাইল্যা ব্যাটা দেখে বিয়ে করতে পাগল হয়ে গেছে! ওদের জায়গায় আমি থাকলে কিডনি স্ট্রোক করে মারা যেতাম। ওরা আর মানুষ পাইল না? ওরা কি জানে, তুমি কী পরিমাণ বোকা?’
আমি গাল চুলকাতে চুলকাতে বললাম, ‘সারাক্ষণ বোকা বলবা না, মেয়েদের মিষ্টি কথায় গলে আরেকটা অ্যাকাউন্ট খোলা ভুল হইছে, সেটা তুমি বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলা? আর আমাকে কালো বলতেছো কেন? জাস্ট চেহারায় একটু ব্রাইটনেস কম, নইলে আমি কম কীসে? বিয়ের আগে আমার জন্য কত মেয়ে পাগল ছিল, জানো?’
বউ শাড়ির আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে তীর্যক হাসি দিল, ‘একটা মেয়ের নাম বলো যে তোমাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে রাজি ছিল।’
আমি আবারও নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, ‘তুমি।’
বউ কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘আমি বোকার হদ্দ বলেই তোমাকে বিয়ে করেছি।’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘স্বীকার করলা, তুমি বোকা? তো নিজে বোকা হয়ে কীভাবে আশা করো, তোমার কপালে চালাক জামাই জুটবে? একজন বোকা মহিলার সঙ্গে কোনো জ্ঞানী মানুষ মানায়?’
বউ কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।