Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

কেনাকাটায় কচুকাটা বনাম কাককণ্ঠী শাড়ি

আব্বা আমার পুতুল লাগব। * আমার খেলনা গাড়ি লাগব। * ঈদে আমার শার্ট লাগবে। * আমার জামদানি শাড়ি চাই। * খালুজান, ঈদে নতুন শাড়ি কিন্যা না দিলে আমি আর ডিউটি করুম না।

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তানজিনা আঙুল উঁচিয়ে বলল, ‘ওই ময়ূরকণ্ঠী-রং শাড়িটা নামান।’

বিক্রয়কর্মী ময়ূরের কণ্ঠ থেকে শুরু করে পাখনা, মাথা, বুক, পেট, ঠ্যাং-কোনো অংশ-রংয়ের শাড়িই নামাতে বাকি রাখল না। এমনকি কাকের পায়ের পাতা-রঙা শাড়িও নামাল কয়েকটা। এসব দেখে নববর মাশুক হতভাগা ভাগ ভাগ হয়ে যেতে থাকে। তানজিনারও বুঝি দয়া হয়। হতভম্ব গলায় বলে, ‘এতগুলো শাড়ি নামাচ্ছেন কেন? নেব তো একটা!’

হাত চালাতে চালাতে বিক্রয়কর্মী বলে, ‘না নিলে না নেবেন, দেখুন। দেখার অধিকার আপনার আছে, আপা!’

বিক্রয়-বন্ধু শাড়ি নামিয়েই যাচ্ছে। ছোটখাটো স্তূপ জমে গেল সামনে। তানজিনার অবাক চোখের ভাষা অনুবাদ করে মাশুক বলল, ‘শাড়িগুলো ভাঁজ করতে আবার আপনার কষ্ট হবে।’

ক্রেতা পছন্দ করবে, এমন শাড়ির দিকে চোখ দৌড়াতে দৌড়াতে বিক্রয়-বন্ধু উদারকণ্ঠে বলল, ‘আপনাদের সেবা করতেই আমি নিয়োজিত। জীবনের অন্য কোনো লক্ষ্যও নেই।’

আরও রংবেরংয়ের শাড়ি নামতে থাকলে তানজিনা বেজি-রঙা একটা শাড়ি পছন্দ করল। দাম শুনে ওর অন্তরাআত্মা শুকিয়ে গেলেও মাশুক নির্বিকার। অভয় দিয়ে বলল, ‘আমার বউ একটা, শাড়িও কিনবে একটাই। এটা তুমি নাও।’

‘পঞ্চাশ হাজার টাকা দামে...।’

‘সমস্যা নেই। মা আর বোনকে এবার কিছু কিনে দেব না। সারা জীবন দিয়ে এসেছি, আর কত!’

এমন আশ্বাসে প্রসন্ন হয়ে উঠল তানজিনা। বলল, ‘আজ তোমাকে বেগুনি বানিয়ে দেব।’

দোকানের লোকজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করলে তানজিনা সলজ্জ হেসে বলল, ‘আমার জামাই বেগুনি খেতে ভালোবাসে।’

মাশুক লজ্জায় বেগুনি রং ধারণ করল। আরেকজন বিক্রয়-বন্ধু বলল, ‘ঈদের দিনেও নিশ্চয়ই বেগুনি খান, দুলাভাই?’

মাশুক শঙ্কিত হলো মনে মনে। তানজিনা মৃদু চাপ দিল মাশুকের হাতে। আহ্লাদি গলায় বলল, ‘আমি আরেকটা থ্রি-পিস কিনি?’

‘কেন নয়?’ সোৎসাহে বলল মাশুক।

‘বেতনের সঙ্গে বোনাসও পেয়ে গেছ? অ্যাডভান্সও নিয়েছ নাকি!’

‘আমার সবচেয়ে বড় বোনাস-অ্যাডভান্স তুমি-লক্ষ্মী বউ। তুমি আমার রংধনুর আলো, বাঁশবাগানের ফুল!’

বিস্তর দরাদরির পর দোকানে পঁচাত্তর হাজার টাকা দিয়ে বেরিয়ে আসে তারা। মাশুকের মন রাখতেই বোধকরি তানজিনা বলে, ‘তোমার মাকে চুল-বাঁধার ফিতা আর বোনকে কাচের চুড়ি কিনে দেব আমি।’

‘আচ্ছা, দিও।’

ব্যাপারটা এখানে চুকেবুকে গেলে মধুরেণ সমাপয়েৎ হতো। কিন্তু চোখ জোড়ার ওপর বড় মাঠের মতো কপালটায় ছিল নাটকীয়তা। যার খেসারত না দিয়ে কোথায় পালাবে মাশুক!

পরদিন তানজিনা বায়না ধরল মাশুকের জন্যও কেনাকাটা করবে। ওর এত দামি পোশাকের সঙ্গে স্বামীকে ঠিক মানাবে না। ভিক্ষুক শ্রেণির কেউ মনে হবে। মাশুক বাধ্য হয়ে যেতে চাইল ফুটপাতের হোপ মার্কেটে। নিমরাজি তানজিনা তাতেই সায় দিল। হোপ মার্কেটে পছন্দের শার্ট-প্যান্ট খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে গতকালের বিক্রয়-শত্রুকে দেখে হকচকিয়ে গেল তানজিনা। কিছু একটা অনুমান করে চেতে গেল-‘আপনি এখানে কী করছেন?’

‘কচুকাটা... মানে কেনাকাটা করছি। বাড়ির জন্য।’ ‘তিন বস্তা কিনেও ফেলেছেন দেখছি!’

‘জি। আরও কিনব। সুযোগ বুঝে হোপ মার্কেটেই কোপ দিতে হয়। কুয়াকাটায় গিয়ে কেউ কি খালের কথা ভাবে!’

ব্যাপারটায় সন্দেহ গাঢ় হলো তানজিনার। পরদিন সকালে ক্রয়কৃত পোশাকাদি নিয়ে চলল ‘কোকিলকণ্ঠী ফ্যাশন্স’-এ। হোপ মার্কেটে নাড়াচাড়া করতে দেখা পোশাকগুলো এ টিপটপ দোকানে সাজানো দেখে কাককণ্ঠী হয়ে উঠল সে। ছুড়ে মারল গত পরশু কেনা পোশাকাদি- ‘এই নেন আপনাদের হোপ মার্কেটের রাজরানি ব্র্যান্ডের কাপড়। ফিরিয়ে দেন আমার পঁচাত্তর হাজার টাকা। যত্তসব বাটপারি!’

ঝাঁজে দোকানদারও কম যান না- ‘পঁচাত্তর হাজার টাকা জীবনে দেখেছেন, একত্রে? দুইদিনের কাঙালি ভাতেরে কয় রাইস!’

তানজিনার চিল-চিৎকার আর বাড়তে না দিয়ে সাত হাজার টাকা ছুড়ে মারলেন মাশুকের দিকে। হতভম্ব মাশুক বলল, ‘এটা কী হলো, ওবায়েদ?’

‘নাটকবাজির সময় এটা নয়। বউ নিয়া জলদি ফোট। সুন্দর পরিবেশে দাগ ফেলিস না।’ তানজিনা ফের কিছু একটা আন্দাজ করে। উষ্মা প্রকাশ করে ক্রয়-শত্রুকে বলে, ‘আম্মু ঠিকই বলেছিল। ছোটলোকের নজর কখনো ওপরে উঠে না।’ হনহন করে হেঁটে গেল সে, পেছনে পড়ে রইল সাধের পোশাক ও নববর।

মাশুকের বাল্যবন্ধু দোকানদার ওবায়েদ স্কুলে প্রাইমারি পেরিয়ে কলেজে যাননি বলে আজ কোটিপতি হতে পেরেছেন। অন্যদিকে সর্বোচ্চ শিক্ষিত মাশুক আটাশ হাজার টাকার কেরানি। বউকে খুশি করতে গিয়ে ওবায়েদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছিল। শেষমেশ সেটা এমন বেহাল দশায় দাঁড়াবে ভাবেনি কেউই!

খেঁকিয়ে উঠলেন ওবায়েদ- ‘কী হলো, তুই এখনো গেলি না?’

মাশুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আজ কি বাসায় ঢুকতে পারব রে!’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম