Logo
Logo
×

অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি

বরিশালের ৯৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই শহিদ মিনার

অস্থায়ী মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন

Icon

অনিকেত মাসুদ, বরিশাল

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালের ৯৬ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নেই স্থায়ী শহিদ মিনার। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলাগাছে কাগজ মুড়িয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। শহরাঞ্চলের বেশকিছু বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী শহিদবেদিতে শ্রদ্ধা জানালেও অধিকাংশ স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি। তহবিল ঘাটতিসহ স্থান সংকটের কথা জানিয়েছে শিক্ষক এবং জেলা শিক্ষা দপ্তর। অন্যদিকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অবগত ও শিশুদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্থায়ী শহিদ মিনার তৈরির জোর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, জেলার ১ হাজার ৫৯২টি বিদ্যালয়ের ১৫৩টিতে স্থায়ী শহিদ মিনার আছে। ফলে জেলার ৯৬ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহিদ মিনার। এর মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ২০৮টি বিদ্যালয়ের একটিতেও নেই শহিদ মিনার! এছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলার ৯৭টি বিদ্যালয়ের ২টি এবং উজিরপুর উপজেলার ১৮১টি বিদ্যালয়ের ৩০টিতে স্থায়ী শহিদ মিনার আছে। গৌরনদী উপজেলার ১২টিতে শহিদ মিনার আছে, এ উপজেলায় মোট স্কুল ১৩১টি। বরিশাল সদর উপজেলায় ২০৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টি, বাকেরগঞ্জে ২৮০টির মধ্যে ১৬টি এবং বানারীপাড়ার ১২৬টির মধ্যে ৫টিতে শহিদ মিনার আছে। এছাড়া বাবুগঞ্জ উপজেলার ১৩৪টি মধ্যে ৩০টি, মুলাদীতে ১৪০টির মধ্যে ১৯টিতে এবং হিজলায় ৯২টির মধ্যে মাত্র আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার আছে।

এ দুরবস্থার মধ্যে বাধ্য হয়ে মেহেন্দিগঞ্জের ৮৫নং মধ্য চরপশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা কলাগাছে সাদা কাগজ মুড়িয়ে শহিদ মিনার তৈরি করেছে। সেই শহিদ মিনারেই শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে তারা। একই দৃশ্য বরিশাল সদর উপজেলা টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের সোমরাজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন থাকলেও নেই শহিদ মিনার। তাই স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরাও কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নে ১৮৮২ সালে স্থাপিত কলসকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। এ কারণে বাধ্য হয়ে কলাগাছ বা ইট দিয়ে বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বরিশাল জেলার শিশু শিক্ষার্থীরা।

মেহেন্দিগঞ্জের ৮৫নং মধ্য চরপশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছরই কলাগাছ ও সাদা কাগজ দিয়ে এভাবে শহিদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সরকার থেকে স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়া হলে আনন্দিত হতাম। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শহিদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান তিনি। একাধিক অভিভাবক বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজ ক্যাম্পাসে অধিকাংশ শিশু ফুল দিয়ে শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেনি, যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান দাবি করেন তারা।

শিক্ষাবিদ দাশগুপ্ত আশীষ কুমার বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহিদ মিনার থাকা দরকার। তাহলেই শিশুরা শৈশব থেকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে বলে জানান তিনি।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম মোস্তফা সরোয়ার হোসেন নতুন যোগ দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, শহিদ মিনার তৈরিতে সরকারি বাজেট আসে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে যদি কেউ শহিদ মিনার নির্মাণ করতে চায়, তাহলে তাও সম্ভব। কিন্তু জমি সংকটের কারণে শহিদ মিনার নির্মাণ করা যাচ্ছে না। কারণ, স্কুলের জমি থাকার পরও অবৈধ দখলে থাকায় শহিদ মিনার নির্মাণ করা যাচ্ছে না। বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহিদ মিনার থাকা উচিত। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ে স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। তারপরও যদি তা নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম