
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ড. ইউনূস
ডিসেম্বর-জুনের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার এগিয়ে নিন
সংস্কার নিয়ে জনমত যাচাই ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ চলছে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দুই সদস্যের সঙ্গে শনিবার বিকালে এক বৈঠকে তিনি এ তাগিদ দেন।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়, সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে জনমত যাচাই এবং সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আলী রীয়াজ ও বদিউল আলম মজুমদার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। এ সময় তারা জানান, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা চলমান রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ৮টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে।
তারা আরও জানান, সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে জনমত যাচাই এবং সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা তথা সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন। বৈঠকে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এ সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে এখন থেকেই গঠনমূলক আলোচনা, রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং সংস্কার প্রয়াসকে আরও জোরদার করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন এক সময় ড. ইউনূস এই তাগিদ দিলেন যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে’ এই বিতর্ক চলছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছেন ড. ইউনূস। এরপর বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও একই কথা বলেছেন। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বর্তমানে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন ক্ষোভের কথা বলছে বিএনপি। দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করলে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে দলটি। সমমনাদের নিয়ে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে।
সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের ওপর মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে মতামত দিতে বলা হয়েছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত ২৭টি, বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আর মতামত দেওয়ার সর্বশেষ সময় ছিল গত ১৩ মার্চ। সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।
তবে এ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলের মতামত পাওয়া যায়নি। সুপারিশ বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। তাদের মতামত পাওয়ার পর সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। এরপর সবাই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে।