
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
কুরআন হাদিসে আল-আকসা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আল-আকসা মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এটি মুসলমানদের প্রথম কিবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। কুরআন ও হাদিসে এই মসজিদের বিশেষ মর্যাদা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে।
বর্তমানে ফিলিস্তিন একটি আহত ও ক্ষতবিক্ষত রাষ্ট্র। ইসরাইলিদের দ্বারা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে অনবরত। মজলুম মুসলিমদের হাহাকারে প্রকম্পিত হচ্ছে ফিলিস্তিন ও আল-কুদসের আকাশ-বাতাস চারদিক।
ইসলামের পুণ্যভূমি ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা ও মসজিদে আকসাকে সমূলে ধ্বংস করাই ইহুদিদের প্রধান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছে দখলদার ইহুদিরা। এর প্রতিবাদে শনিবার রাজধানী ঢাকায় মার্চ ফর গাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে ধ্বনিত হয়েছে ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে মুক্ত হোক স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।
উমাইয়া, আইয়ূবী, সেলজুক, মামলুক, উসমানীওসহ বিভিন্ন মুসলিম শাসনামলে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল মুসলিমদের অধীনে। কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বায়তুল মুকাদ্দাস বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাহকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১)
ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসা হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা (রা.) ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, আর তুমি যেখান থেকেই বের হও, তোমার চেহারা মাসজিদে হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো, তার দিকে তোমাদের চেহারা ফিরাও, যাতে তোমাদের বিপক্ষে মানুষের বিতর্ক করার কিছু না থাকে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫০)
আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদে হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদে আকসা। এরপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। (সহিহ বুখারি : ৩১১৫)
বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে (মসজিদে আকসা) এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১১)
পবিত্র কুরআনের পাঁচ স্থানে মহান আল্লাহ ফিলিস্তিনকে বরকতময়, পুণ্যময় ভূখণ্ড বলেছেন। সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে। ‘যার আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১) হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনার সময় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি তাঁকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’ (সূরা আম্বিয়া-৭১)
মুসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনায়, যখন ফেরাউনের কবল থেকে মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে উদ্ধার করে আনা হয় এবং ফেরাউন ও তার সৈন্যদলকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি এবং বনি ইসরাইল সম্বন্ধে আপনার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সূরা আরাফ-১৩৭) সুলায়মান নবির (আ.) ঘটনায়। মহান আল্লাহ তাকে রাজ্য দান করেছিলেন এবং সবকিছুকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছিলেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; সে তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই ভূখণ্ডের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।’ (সূরা আম্বিয়া-৮১) কুরআন-হাদিসের আলোকে এ কথা প্রমাণিত যে, তিনটি শহর সম্মানিত- মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস।
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘(ইবাদতের উদ্দেশ্যে) তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববি) ও মসজিদে আকসা।’ (মুসলিম ৮২৭) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন হজরত সুলায়মান (আ.) বায়তুল মাকদিসের (মসজিদে আকসা) নির্মাণকাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ের প্রার্থনা করলেন। তার মতো শাসন ক্ষমতা এবং এমন রাজত্ব, যা তার পরে কাউকে প্রদান করা হবে না ও সালাত আদায়ের একনিষ্ঠ মনে উক্ত মসজিদে আগমনকারীর পাপ মোছন করে তার জন্মের দিনের মতো নিষ্পাপ করার প্রার্থনা করেছেন।’ নবিজি (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে তাকে দুটি প্রদান করেছেন। তৃতীয়টিও কবুল করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’ (সুনানে ইবনু মাজাহ-১৪৭৯)
মাইমুনা বিনতে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে আমাকে ফতোয়া দিন। তিনি বলেন, এটা হাশরের মাঠ এবং সবার একত্র হওয়ার ময়দান। তোমরা তাতে নামাজ আদায় করবে। কেননা সেখানে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়া অন্যান্য স্থানের তুলনায় এক হাজার গুণ উত্তম। আমি বললাম, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি সেখানে যেতে সমর্থ না হই? তিনি বলেন, তুমি তাতে বাতি জ্বালানোর জন্য জলপাইয়ের তেল হাদিয়া পাঠাও। যে ব্যক্তি তা করল, সে যেন সেখানে উপস্থিত হলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৪০৭)