
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন ও সারা দেশে তার ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। এ অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১১ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। বুধবার এ তথ্য জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।
দুদক জানায়, অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যদের টিম গঠন করা হয়েছে। অপর সদস্যরা হলেন-সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এসএম রাশেদুল হাসান, একেএম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষ্যে বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশি-বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় কয়েকদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে। এ উপলক্ষ্যে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসাবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ-২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসাবে পালনের ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আগে থেকেই সারা দেশে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সব জেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় ম্যুরাল নির্মাণ করে। এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করেছে।
শেখ হাসিনা পরিবারের ১৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ : দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন রেহানা সিদ্দিক এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টের অস্থাবর সম্পদগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব অ্যাকাউন্ট অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক। এর আগে ১১ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছোট বোন রেহানা সিদ্দিক ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসভবন সুধা সদনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আরও কিছু সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে হাসিনাসহ পরিবারের ৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। ১৮ মার্চ শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ৩১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ ৭২ হাজার ৮০৫ টাকা রয়েছে।