
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জ
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। শ্রমিক ছাঁটাই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ৩ ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। আহতদের মধ্যে কারখানাটির শ্রমিক ছাড়াও পুলিশ ও সেনাসদস্যরা রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিকালে মালিকপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন। সন্ধ্যায় কারখানার সামনে বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।
শ্রমিকরা দাবি করেন, ঈদের আগে ভুলতা এলাকার রবিনটেক্স কারখানার ১২০ জন শ্রমিককে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা হয়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাদের আশ্বস্ত করলে তারা বাড়ি চলে যান। বুধবার কাজে যোগ দিলে আরও কয়েকজনকে ছাঁটাই করবে-এমন কথা শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে চাকরিচ্যুত শ্রমিকসহ কর্মরত শ্রমিকরা সকালে কারখানার সামনে জড়ো হন। এর আগের দুদিনও তারা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। বুধবার কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি দিয়ে কারখানার ভেতরেই অবস্থান করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি পানির বোতল নিক্ষেপ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেন। এরপর শ্রমিকরা কারখানার বাইরে এসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কলা গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতরা হলেন- সেনাবাহিনীর লে. মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব, মেহেদী, শ্রমিক শাফিয়া আক্তার, রুনা বেগম, মলিনা সরকার, মাজেদা বেগম, রুপু আক্তারসহ কমপক্ষে ৫০ জন।
সুইং সেকশনের শ্রমিক শামীম ও সাবিত বলেন, মালিকপক্ষ বিনা নোটিশে শ্রমিকদের ছাঁটাই করেছে। মার্চের বেতন-বোনাসও তাদের আংশিক পরিশোধ করা হয়েছে। ঈদের পর কাজে যোগ দিলে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আরও বেশ কয়েকজন শ্রমিকের আইডি কার্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা আইডি কার্ড জমা না দিয়ে কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রমিকদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাদের ছাঁটাই করার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। কারখানাটির অন্তত ৩৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তারা।
কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আদনান শামস দাবি করেন, শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, সকালে শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে প্রডাকশন বন্ধ করে দিয়ে কারখানা ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের মারধর করেন। আইন মেনেই কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছিল। কারখানার ভেতরে ভাঙচুর-লুটপাটের পর বাইরে গিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। বহিরাগত লোকজনও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে।
এদিকে, সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট, শিল্প পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ অন্তত ১৫ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী ইসলাম। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল আলম, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।