
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
গত ৩৬ বছরে দেশের অন্যতম দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপের আয়তন বেড়েছে ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে জেগে ওঠা ভূমির পরিমাণ প্রায় চারশ (৩৯৮) বর্গকিলোমিটার এবং পলল ভূমি ৭৭ বর্গকিলোমিটার। সাগর এই জমি এক সময় কেড়ে নিয়েছিল। এখন আবার তা ফেরত দিচ্ছে। ফেরত দেওয়া বা জেগে ওঠা ভূমির ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ১২১ শতাংশ এবং পলল ভূমির (জোয়ারের সময় তলিয়ে যায়) ক্ষেত্রে ২৩ শতাংশ। অতিসম্প্রতি স্যাটেলাইট ছবির এক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে। ১৯৮৯ এবং ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার, বিশ্লেষণ এবং গবেষণা করে দেখা গেছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে দ্বীপ এলাকা সন্দ্বীপ ও তার আশপাশে পলি জমে সমতল ভূমি সৃষ্টির প্রবণতা প্রাকৃতিকভাবেই অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভূমির সঠিক ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। ‘ল্যান্ড এরিয়া এক্সপানশন ইন দ্য ইস্টার্ন পার্ট অব মেঘনা এসটুয়েরি সিন্স দ্য ১৯৯০’ বা ‘১৯৯০ সাল থেকে মেঘনা মোহনার পূর্ব অংশে ভূমি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) সদস্য ড. মাহমুদুর রহমান। এই গবেষণায় সন্দ্বীপে অল্প জোয়ারের সময় ১৯৮৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারির স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালের স্যাটেলাইট চিত্রে সন্দ্বীপের উপস্থিত ছিল, কিন্তু সেখানে জায়গায় জায়গায় জোয়ারের কাদামাটির স্তর দৃশ্যমান। এই কাদামাটির বেশির ভাগই পরে জেগে ওঠা ভূমি তৈরি করে এবং এর নামকরণ করা হয় জাহাইজ্জর চর (স্বর্ণদ্বীপ)। ১৯৮৯-২০২৫ সালের মধ্যে ভূমির আকার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮৯ সালে উরিরচর উপস্থিত ছিল, তবে এটি ভিন্ন আকারে ছিল। ২০২৫ সালে উরিরচর আরও বড় হয়ে ওঠে এবং কমবেশি গোল আকার ধারণ করে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, এখানে জেগে ওঠা জমি ১৯৮৯ সালে ছিল ৩২৮ বর্গকিমি, যা ২০২৫ সালে ৭২৬ বর্গকিমি.তে সম্প্রসারিত হয়েছে। অন্যদিকে পলল ভূমিও প্রকৃতিতে প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৮৯ সালে পলল ভূমির পরিমাণ ছিল ৩৩৫ বর্গকিমি, যা ২০২৫ সালে ৪১৩ বর্গকিমি.তে সম্প্রসারিত হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সব পলল ভূমি জেগে ওঠা সমতল জমিতে রূপান্তরিত হয়নি। পলল ভূমির কিছু অংশ স্থিতিশীল জমি তৈরি করেছিল এবং কিছু অংশ ভেসে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও যা জেগে ওঠা ভূমি সৃষ্টি হয়েছে তা অনেক।
ড. মাহমুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এখানে জেগে ওঠা ভূমি বলতে বুঝতে হবে যা জোয়ার-ভাটার সময়ও দৃশ্যমান। আর পলল ভূমি জোয়ারের সময়ে ডুবে যায়। এই গবেষণায় দেখা গেছে, জেগে ওঠা ভূমির প্রবণতা সন্দ্বীপে অনেক বেশি। কিন্তু এই অবস্থাটি ১০০ বছর আগেও ছিল না। সন্দ্বীপে ভূমি ভাঙার প্রবণতাই বেশি দেখা গেছে।
তিনি বলেন, কিন্তু পুরোপুরি তার উলটো চিত্র দেখা যাচ্ছে নব্বইয়ের শুরু থেকেই। নতুন ভূমি গড়ার প্রবণতাই বেশি এখন। যেভাবে ভূমি বেড়েছে তার জন্য সঠিক পরিকল্পনা দরকার। সাগর ও ভূমির সঠিক সমন্বয়ে পরিকল্পনা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।