
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৪ এএম
থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে ঘনঘন পিডি বদল
১০০ কোটি টাকা ক্ষতি ৩ মাসে
ফের নতুন পিডির জন্য ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি * চলতি বছরেও থার্ড টার্মিনাল চালু না হওয়ার শঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67f5a99500232.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে ঘনঘন পিডি (প্রকল্প পরিচালক) পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পে কাজের গতি কমে গেছে। তিন মাসে দুবার পিডি পরিবর্তন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ফের নতুন পিডি নিয়োগের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব কারণে গত তিন মাসে সরকারের ক্ষতি হয়েছে একশ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পিডি না থাকায় তিন মাসে একাধিকবার প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া নতুন পিডি যোগদানের পর আগের পিডির সব কাজ নতুন করে শুরু হয়। ঠিকাদার ও পরামর্শকের বিল পরিশোধ বন্ধ থাকে এবং টাকার অভাবে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মালামাল বন্দর থেকে ছাড় করার কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এতে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের বিলের ওপর বিলম্ব জরিমানা ফি, পোর্ট থেকে মালামাল ছাড় করার ক্ষেত্রে বিলম্ব জরিমানা ফি, কাজের সিদ্ধান্ত প্রদানে বিলম্বসহ নানা কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এসব জটিলতায় গত তিন মাসে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে সরকারের প্রায় একশ কোটি টাকা লোকসান হয়।
জানা যায়, বর্তমানে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের ৯৯.৫ শতাংশ কাজ শেষ। মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাকি। এ অবস্থায় বিদ্যমান পিডিকে বাদ দিয়ে নতুন পিডি নিয়োগের প্রস্তাব কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের অপারেশন শুরু করার টার্গেট রয়েছে সরকারের। এ অবস্থায় ফের নতুন নিয়োগ দিলে তার কাজ বুঝতে বুঝতে তিন মাস চলে যাবে। তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে থার্ড টার্মিনাল চালু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনে জাকারিয়াকে পিডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরও ফের থার্ড টার্মিনালের পিডি নিয়োগ দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে বেবিচক। নতুন পিডি হিসাবে যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন-প্রকৌশলী শুভাশিষ বড়ুয়া, মো. শরিফুল ইসলাম ও এএইচ এমডি নুরউদ্দিন চৌধুরী। তিন মাসের মাথায় ফের নতুন পিডি নিয়োগের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। বেবিচকের দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কমিটির প্রধান ড. জোবাইদুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি ঘনঘন পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু সরকারি এ আইন মানা হচ্ছে না। এ করণে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি নতুন পিডি নিয়োগ না করে বাকি দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ করার জন্য বর্তমান পিডিকে প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের ৯৯.৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট ০.৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন পিডি নিয়োগের জটিলতায় যাওয়া ঠিক হবে না। এর চেয়ে বিদ্যমান পিডি তার মূল দায়িত্বের পাশাপাশি প্রকল্পের অবশিষ্ট সামান্য কাজ খুব সহজেই শেষ করতে পারবেন। যদি আবারও প্রকল্পটি পিডি জটিলতায় পড়ে, তাহলে চলতি বছরে থার্ড টার্মিনাল চালু করার যে ঘোষণা দেওয়া রয়েছে, তা আরও দীর্ঘায়িত হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রকল্প পরিচালক হিসাবে একেএম মাকসুদুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হওয়ার পর পিডিশূন্য হয়ে পড়ে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এতে পদটি বেশ কিছুদিন শূন্য ছিল। এ সময় প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়।
নতুন পিডি নিয়োগে বিভিন্ন জটিলতা থাকায় দ্রুত পিডি নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং দুদকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। এ দুটি ছাড়পত্র পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। মাকসুদুল ইসলামের নিয়োগ বাতিলের পর প্রায় আড়াই মাস কালক্ষেপণ করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেনকে পিডি হিসাবে নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে জাকারিয়া হোসেনকে পিডির পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
বেবিচকসংশ্লিষ্টরা বলেন, এ ধরনের বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে বারবার পিডি পরিবর্তন হলে নতুন পিডির নমুনা স্বাক্ষর মন্ত্রণালয়, ইআরডি, দাতা সংস্থা জাইকা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হয়। এ প্রেরণ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। এ কারণে ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে আজও বৈদেশিক ঠিকাদারের বিলের একটি অংশ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারকে বিলম্ব জরিমানা ফি গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বেবিচকের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক কাওছার মাহমুদ বলেন, চেয়ারম্যান বর্তমানে অফিসের কাজে দেশের বাইরে আছেন।