
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২১ এএম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67f5a823b57e1.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস উলটে খাদে পড়ে বাবা-ছেলেসহ ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২৮ জন। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফরিদপুর অংশের বাখুন্ডা এলাকার শরিফ জুটমিলের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী রয়েছেন। আহতদের নামপরিচয় প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঝিনাইদহে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নয় স্থানে দুর্ঘটনায় আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন যুবক, নেত্রকোনা ও চাঁদপুরে দুই শিশু, পিরোজপুরে গৃহবধূ, রাজশাহীতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এবং বরগুনায় শিক্ষক, মুন্সীগঞ্জে পথচারী ও টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছেন। ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফরিদপুর : নিহতরা হলেন নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের বৃদ্ধ জোয়াত সরদার, তার ছেলে যুবক ইমন সরদার, একই উপজেলার তালমা গ্রামের যুবক ভারতী সরকার, কাঠিয়া গ্রামের দীপা খান এবং চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকার আলম শেখ, পৌর এলাকার মোল্লাবাড়ী সড়কের ফজিরন নেছা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আজিবর শেখ। যাত্রীবাহী লোকাল বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে থাকা যাত্রী ফারুক হোসেন ও উচমান বলেন, বাসটি মুকসুদপুর থেকে ছেড়ে ভাঙ্গায় আসার পর চালক বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকে। আমরা যাত্রীরা কয়েকবার চালককে নিষেধ করলেও তিনি তা শোনেননি। বেপরোয়া গতির কারণেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উলটো পাশে খুঁটিতে গিয়ে আঘাত করে। পরে বাসটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, আহত প্রায় ৩০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, টেকেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামী হাইডেক্স নামের বাসটি ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে খুঁটিতে ধাক্কা খায়। এ সময় বাসটির সামনের অংশের ৬ থেকে ৭ ফুট খুঁটির মধ্যে ঢুকে যায়। একপর্যায়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাসটি খাদে পড়ে উলটে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, বাসে ৩৫ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, বাসযাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেপরোয়া গতির কারণেই বাসটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও হাইওয়ে থানা পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এ ঘটনায় বাসটির চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (ওসি) আসাদউজ্জামান বলেন, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর জেলা শহর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে। খানাখন্দে ভরা মহাসড়কে অতিরিক্ত গতি এবং ওভারটেক করতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া মহাসড়কটি ফরিদপুর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য নতুন করে তেমন কোনো সংস্কারকাজ করছে না সড়ক বিভাগ। ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ্ সরদার বলেন, দ্রুত মহাসড়কে চার লেনের প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। কিছু সংস্কার করে সড়কটিকে যান চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।
মহেশপুর (ঝিনাইদহ): মহেশপুরে ট্রাকের ধাক্কায় নিহতরা হলেন-কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের বাদল রায়ের ছেলে যুবক রাজা এবং একই গ্রামের মংলা রায়ের ছেলে বিধান। মঙ্গলবার খালিশপুর-জীবননগর মহাসড়কের কৃষ্ণচন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলে ছয়জন আরোহী খালিশপুর থেকে জীবননগরের দিকে যাচ্ছিলেন।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকায় ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে যুবক মাহিমের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভরাডোবা-ঘাটাইল সড়কের বান্দিয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাহিম পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া উপজেলার কান্দানিয়া গ্রামের সফি মিয়ার ছেলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : রামরাইলে অটো-লরি সংঘর্ষে নিহতরা হলেন নবীনগর উপজেলার নজরদৌলত এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে যুবক তানভীর মিয়া এবং আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরের হোসেনপুর এলাকার ঈদন মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার রামরাইলে সিলেট-কুমিল্লা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আরও অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। সৌদি যাওয়ার জন্য প্রায় সব প্রক্রিয়া শেষে টিটিসি ট্রেনিং সেন্টারে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে তাদের সে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল।
নেত্রকোনা ও মদন : মদনে রাস্তা পারের সময় ইজিবাইক চাপায় শিশু মহাজের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার মদন-ফতেপুর সড়কে কাপাসাটিয়া গ্রামের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহাজ উপজেলার কাপাসাটিয়া গ্রামের জুলহাস মিয়ার ছেলে।
চাঁদপুর: শহরের বিপনিবাগে অটোর ধাক্কায় আহত শিশু তানিশা ইসলাম রাফা মারা গেছে। মঙ্গলবার হাসপাতালে সে মারা যায়। এর আগে রোববার চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী জিটি রোড এলাকায় সে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রাফা কুয়েত প্রবাসী রাসেল খানের মেয়ে ও জিটি রোডের অক্সফোর্ড স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : মঠবাড়িয়ায় ট্রাকচাপায় গৃহবধূ মাকসুদা আক্তার প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবার মধ্যরাতে মঠবাড়িয়া-চরখালী সড়কের মাঝেরপুল ফরাজি বাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আরও পাঁচজন ইজিবাইক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। মাকসুদা পার্শ্ববর্তী ভাণ্ডারিয়া উপজেলার হরিণপালা গ্রামের হাসান মিয়ার স্ত্রী।
রাজশাহী : দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে মহানগরীর উত্তর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির পরনে চেকের ফুলহাতা টি-শার্ট এবং সাদা পায়জামা ছিল। বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর।
তালতলী (বরগুনা): ট্রলিচাপায় শিক্ষক খলিলুর রহমান নিহত হয়েছেন। তিনি আমতলীর শাখারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর ডালাচারা গ্রামের আবুল হাসেম প্যাদার ছেলে। মঙ্গলবার আমতলী-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সিকদারবাড়ী এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) : গজারিয়ায় বাসের ধাক্কায় পথচারী জাহাঙ্গীর আলম নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দীর্ঘভূমি গ্রামের মৃত নওয়াব মিয়ার ছেলে।
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) : ঘাটাইলে ট্রাকচাপায় আরোহী আকিল মিয়া নিহত হয়েছেন। সাগরদিঘি-ঘাটাইল আঞ্চলিক সড়কের চাম্মলকুড়ি এলাকায় মঙ্গলবার এ দুর্ঘটনা ঘটে। আকিল উপজেলার সাগরদিঘি শোলাকুড়া গ্রামের জয়নাল মেম্বারের ছেলে।