
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে নতুন শুল্ক প্রস্তাব তিন মাসের জন্য স্থগিত চায় বাংলাদেশ। এ সময়ের মধ্যে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সোমবার চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি সমর্থন করাসহ দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তুলা যাতে খুব দ্রুত মার্কেটে আসতে পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সোমবার এসব তথ্য জানান।
এর আগে মার্কিন শুল্কনীতি পরিবর্তনের পর রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি চিঠি দেওয়া হবে। একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। একটি চিঠি ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) কাছে দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউএসটিআরকে পৃথক দুটি চিঠি দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের উদ্দেশে লেখা ড. ইউনূসের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বাংলাদেশে আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডাকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব। আপনার শপথ গ্রহণের পরই আমি আমার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছিলাম। এর উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ১৭ কোটির অধিক মানুষের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে মার্কিন রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর অভিপ্রায় প্রকাশ করা। আমরাই প্রথম দেশ, যারা এমন একটি প্রো-অ্যাকটিভ উদ্যোগ নিয়েছি। আমরাই প্রথম দেশ, যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আপনি এলএনজি রপ্তানির অনুমতি সংক্রান্ত স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর থেকে আরও সহযোগিতার পথ খুঁজছি। এরপর থেকে আমাদের কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন, যাতে বাংলাদেশে মার্কিন রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপ চিহ্নিত করা যায়। আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ইউএসটিআর-এর সঙ্গে এই পদক্ষেপগুলোর বিস্তারিত নিয়ে সমন্বয় করবেন।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের কর্মপরিকল্পনার একটি মূল লক্ষ্য, মার্কিন কৃষিপণ্য যেমন : তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন-আমদানিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো। এটি মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকায় অবদান রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজারে দ্রুত প্রবেশ নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট বন্ডেড গুদাম চূড়ান্ত করছি, যেখানে এগুলোর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকবে। আপনি এটা জেনে খুশি হবেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অধিকাংশ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক সবচেয়ে কম। উপরিউক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য এবং স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর আমরা শূন্য শুল্কের প্রতিশ্রুতি পুনরায় দিচ্ছি। এছাড়াও গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ হ্রাসের জন্য কাজ করছি। আমরা মার্কিন রপ্তানির ওপর বিদ্যমান বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দূর করছি। কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করছি, প্যাকেজিং, লেবেলিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করছি। কাস্টমস প্রক্রিয়া ও মান সহজতর করার মতো বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছি।
আমরা বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই গতি মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে। বিশেষত উন্নত প্রযুক্তি খাত যেমন বেসামরিক বিমান ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। আমরা আগামী তিন মাসে চলমান ও পরিকল্পিত সবকার্যক্রম সম্পন্ন করব। অনুগ্রহ করে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বিঘ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সময় দিন। এজন্য আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুমতি দিন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি এই অনুরোধে সম্মতি প্রদান করবেন।’
এদিকে সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বাড়বে, কমবে না। তিনি বলেন, ‘বারবার বলছি, বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শফিকুল আলম বলেন, ৬ এপ্রিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো সভা হয়। সেখানে বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ অন্যদের মধ্যে তপন চৌধুরী, নাসিম মঞ্জুর, রুবানা হক উপস্থিত ছিলেন। তাদের আশ্বস্ত করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমবে না, বরং বাড়বে।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর নতুন করে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। ৯ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। তবে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ এবং কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়াও ভারত ২৬ এবং চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক দেওয়া হয়। আর পাকিস্তান ২৯, শ্রীলংকা ৪৪, থাইল্যান্ড ৩৬, দক্ষিণ কোরিয়া ২৫, জাপান ২৪, মালয়েশিয়া ২৪ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পালটা শুল্ক আরোপ করেছে চীন ও প্রতিবেশী কানাডা। চীন ৩৪ এবং কানাডা ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে শনিবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়াও পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।