
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পালটা শুল্কারোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। বর্ধিত এ শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং সংকট উত্তরণে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি)।
সংগঠনটির মতে, পালটা শুল্কারোপের উদ্যোগ বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার জন্য বড় একটি ধাক্কা। এ উদ্যোগ বিশ্ববাণিজ্যের মোড় পরিবর্তন করতে পারে, যা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি সামগ্রিক সংকটে পরিণত নাও হতে পারে।
রাজধানীর একটি হোটেলে সোমবার আইসিসিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়েছে। ট্রাম্পের শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, ফরেন চেম্বারের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বিকেএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রমুখ।
আইসিসিবি সভাপতি বলেন, ১৯৩০ সালের পর এ ধরনের শুল্কারোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আইন-বিধি লঙ্ঘন করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে পালটা শুল্ক আরোপ করেছে। এটা তারা করতে পারে না। এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, আমেরিকা বিশ্ব অর্থনৈতিক মোড়ল হওয়ায় অনেক দেশ এর হাত থেকে বাঁচতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম মার্কিন পণ্যে শূন্য শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশকেও বর্ধিত এ শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় চিঠি চালাচালির পরিবর্তে দৃশ্যমান কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে দ্রুত জরুরি বৈঠক করেছে। এ পদক্ষেপ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
পাশাপাশি সংকট উত্তরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, আমদানি-রপ্তানিকারকদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা যেতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। আর যুক্তরাষ্ট্রের যেই পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, তা থেকে সরকার মাত্র ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। তাই মার্কিন পণ্যের শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রাম্পের শুল্কারোপের পদক্ষেপে ব্যবসায়ীরা বিব্রত ও চিন্তিত। সংকট মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তিই একমাত্র কার্যকর সমাধান। বহুপাক্ষিক বা বহুজাতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। সংকট মোকাবিলায় সরকার এখন পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয়। তবে সরাসরি যোগাযোগ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়া অন্য পন্থা নেই।
বিকেএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, যেসব পণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে বন্দরে পড়ে আছে বা জাহাজে আছে, সেগুলোয় বর্ধিত শুল্ক হার কার্যকর হবে না। তবে বাংলাদেশের কারখানাগুলোয় ৩-৪ মাসের যেসব অর্ডারের কাজ চলছে, সেগুলোয় গার্মেন্ট মালিকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। কেননা, আগামী মৌসুমের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক তৈরির কাজ কারখানাগুলোয় চলছে।
এ পণ্য আমেরিকায় ঢোকার সময় নির্ধারিত শুল্কের অতিরিক্ত ৩৫০-৪৪০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক হিসাবে পরিশোধ করতে হবে। বিদেশি ক্রেতারা নিশ্চয় এই বর্ধিত শুল্কভার একা বহন করবে না। তারা গার্মেন্ট মালিকদের সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট দিতে চাপ দেবে। ফলে মালিকদের মুনাফা হ্রাস পাবে। অনেকের ব্যবসা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। বিএবির সভাপতি আব্দুল হাই সরকার বলেন, মার্কিন প্রশাসনের পালটা শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, তা এখনই বলা যাবে না।
তবে এ ধাক্কা সামলাতে ব্যবসা খরচ কমিয়ে এবং অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। ফরেন চেম্বারের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, পালটা শুল্কারোপ ২ ধাপে প্রভাব ফেলবে। প্রথমত, রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমবে। ক্রেতারা একা এই ভার বহন করবে না। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে।