
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
স্টার্টআপ খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা
আসছে ৯০০ কোটি টাকার তহবিল
ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু: ৪০ দেশের সাড়ে ৫শ বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছেন * প্রথম দিন চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
স্টার্টআপ খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তহবিল থেকে শুধু স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে।
সোমবার ঢাকায় চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানান। বিনিয়োগ আকর্ষণে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গতকাল বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। এছাড়া দেশীয় স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দিনব্যাপী সেমিনারসহ বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনের স্টার্টআপ কানেক্ট অধিবেশনে দেশি-বিদেশি তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এম্পাওয়ারিং ইনোভেশন কানেকটিং অপরচুনিটি’। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রেকর্ড করা বক্তব্য দেন লিংকডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, আইসিটি সচিব শীশ হায়দার চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা তুলে ধরেন কনস্টিলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তানভীর আলী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শেয়ার ট্রিপের সিইও সাদিয়া হক।
সেমিনারে গভর্নর বলেন, স্টার্টআপ খাত সহায়তার বিশেষ তহবিল বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হবে। বাংলাদেশ শুধু বাণিজ্যের জন্য নয় বিনিয়োগের জন্যও উপযুক্ত গন্তব্য। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ৯৫ শতাংশ স্টার্টআপই ব্যর্থ হয়। সফল হয় না। তার পরও আমরা স্টার্টআপদের সহযোগিতা করছি। স্টার্টআপগুলোর লাভ একদিনেই আসে না। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, এক্ষেত্রে অধ্যবসায় জরুরি। সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। আমাদের নীতি হচ্ছে বিনিয়োগ। স্টার্টআপদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যে তাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার কো-ফাইন্যান্সিং ফান্ড তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এটি আরও বাড়ানো হবে।
গভর্নর বলেন, স্টার্টআপরা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিকই বিনিয়োগ পাচ্ছে তা নয়, সারা দেশের যে কোনো স্থান থেকে তারা বিনিয়োগ নিতে পারছে। উদ্যোক্তারা হতাশ হলে নীতিনির্ধারকরা তাদের কথা শুনছেন। ৯৫ শতাংশ স্টার্টআপ সফল হতে পারে না। সেজন্য আপনাদের স্বচ্ছ হতে হবে। দ্রুত রিটার্ন চাইলে হবে না। আপনাকে বিক্রি বাড়িয়ে যেতেই হবে। অপেক্ষা করতেই হবে। টাকা একদিন আসবেই। ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোও আপনাদের জন্য বিনিয়োগ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট উন্মুক্ত করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো দেশে সেটিও সম্ভব নয়। তবে কেস টু কেস ভিত্তিতে সেটি করা যেতে পারে। বড় বিনিয়োগকারীদের নিজ দেশে মুনাফা নিতে সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াসহ সরকারি লালফিতার দৌরাত্ম্য বেশি। প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। তিনি বলেন, ৪০ দেশের ৫ শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এসব বিনিয়োগকারীকে সরেজমিন ঘুরিয়ে দেখানো হবে। তার মতে, বাংলাদেশে উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার অভাব নেই। কিন্তু তহবিল সংকটে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কোনো বিনিয়োগকারী সশরীরে বাংলাদেশে এলে তারা আসল চিত্র দেখতে পাবেন।
ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ফাইয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, আমরা ইন্টারনেটের দাম গেটওয়ে লেভেল থেকে কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সুশাসন নিশ্চিতে কাজ করছে। সেটি সবার আগে আইসিটিতে নিশ্চিত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো সরকারের ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করবে না, এটা নিশ্চিত। ভবিষ্যতের কোনো সরকারও তা বন্ধ করতে পারবে না। কাঠামো এমনভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো পলিসি রাখা হয়নি। মূল প্রবন্ধে তানভীর আলী বলেন, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে উদ্ভাবনী, স্টার্টআপ উদ্যোগের চাহিদা বেশি। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতে এখনো বিনিয়োগ কম।
আয়োজকরা জানান, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে এই আয়োজন। এতে ৪০টির বেশি দেশের সাড়ে ৫০০ বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। এর বড় অংশই চীনের। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীরা এসেছেন। দেশেরও ২ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রথম দিন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দলটি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করে। দ্বিতীয় দিনে আজ তারা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবে। ৯ এপ্রিল সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এদিন স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। এই ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে সম্মেলনের সব ইভেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সরেজমিন তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। বেশ কয়েকটি দেশের বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। আয়োজকরা জানান, এই আয়োজনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হবে। দেশি-বিদেশি পাঁচজন বিনিয়োগকারীকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়াও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হবে।