Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আ.লীগের বিচার ও নিবন্ধন বাতিলের দাবি

লাগাতার কর্মসূচি এনসিপির

বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আ.লীগকে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান * রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই তাদের, সেখানে সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বা প্রস্তাব দেওয়ার এখতিয়ার নেই : নাহিদ ইসলাম * সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে সেটি চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ : হাসনাত আবদুল্লাহ * আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লাগাতার কর্মসূচি এনসিপির

গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতে বসে নানারকম ষড়যন্ত্র করছেন শেখ হাসিনা ও দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা। তারা দেশকে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে নানাভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের দৃশ্যমান বিচার শুরু না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে দলটি। এমন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের দাবিতে লাগাতর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার রাত ৮টায় রাজধানীর বাংলামটরে রূপায়ণ টাওয়ারে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর আগে সূচনা বক্তব্য দেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। 

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই-প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা জানান। তিনি বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। দল হিসাবে আ.লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয় বরং ফ্যাসিবাদী দল নিষিদ্ধ থাকবে। তিনি গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভের ঘোষণা দেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি নির্বাচন বা একটি রাজনৈতিক দল কার্যক্রম করতে পারবে কি-না এটা সম্পূর্ণই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবলমাত্র সরকার, বিদ্যমান রাজনৈতিক দল এবং জনগণের রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আসলে এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য, পরিকল্পনা সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব দেওয়ার এখতিয়ার নেই। আমরা মনে করি, এ ধরনের চর্চা যাতে বাংলাদেশে না হয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক মহলই নেবে। সেটা গণতান্ত্রিকভাবেই হবে এবং গণতান্ত্রিকভাবেই উত্তরণ করতে চাচ্ছি। 

নাহিদ ইসলাম জামায়াতের বিষয়ে এক প্রশ্নে বলেন, ৭১-এ সংঘটিত গণহত্যার যে বিচার আমরা দেখেছি, এ বিচার নিয়ে এখনো আসলে প্রশ্ন আসছে। এটা আমাদের পুরাতন প্রজন্মের দায়। যে আমরা ৭১-এর পর ৭১ এর গণহত্যার বিচার নিয়ে আসলে সেই বিচারটা নিষ্পন্ন করতে পারিনি। সমাধান করতে পারিনি। রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো-সেটি যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।

সে কারণেই আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে আমরা স্ট্রিক এবং এ বিচারটা আমরা নিষ্পন্ন দেখতে চাই। আমরা মনে করি যে, যত গণহত্যা হয়েছে ৭১ থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশে, সব গণহত্যার বিচারই আমরা চাই। তবে রাজনৈতিকভাবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কনসার্নের জায়গাটা হচ্ছে-আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বিচার। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ তাদের রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার বিষয়ে সরকার এবং সব ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে আমরা একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। 

নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে টাইম-ফ্রেমটা দিয়েছেন-ডিসেম্বরকে এখন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও তিনি ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত একটা টাইম-ফ্রেম আমাদের বেঁধে দিয়েছেন। আমরা সেটাকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা বলছি, এই সময়ের মধ্যেই বিচার এবং সংস্কারসহ আমরা গণপরিষদের যে দাবিটি জানিয়েছি, সেগুলো আসলে এই সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব। ফলে নির্বাচনে যাওয়ার আগে এই বিষয়গুলো, এই ধাপগুলো সম্পন্ন করে যেন পরবর্তীতে নির্বাচনের দিকে যাই। যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য হয় সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এই সময়ের মধ্যেই ধামগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব। এ ধাপগুলো সম্পন্ন ছাড়া কেবল নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেলে আসলে বাংলাদেশের কোনো গুণগত পরিবর্তন হবে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল-‘হাসনাত আপনি যে পোস্ট দিয়েছেন, সেই পোস্ট যাছাই করার জন্য কার সঙ্গে কথা হয়েছে সেটা আমাদের জানানো যাবে? জবাবে হাসনাত বলেন, আমি তো ওখানে ক্যান্টনমেন্ট উল্লেখ করেছি। আপনারা কথা বলতে পারেন। সেনাবাহিনীর বক্তব্যটা আসলে কী ছিল’-স্পষ্ট করার অনুরোধ করলে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমার ডিরেক্ট স্পিচ আছে। সেখানে কোটেশন দেওয়া ছিল। একদম ডিসক্লোজ তো ওখানে করা হয়েছে। ডিরেক্ট স্পিচ সেখানে আছে। আমাদের কনভারসেশনটা কী হয়েছে, ওপাশ থেকে কী আসছে, আমাদের পাশ থেকে কী আসছে। 

সেনাপ্রধান আপনাদের সঙ্গে একটা ইনফরমাল মিটিং করেছেন, সেখানে কী আলোচনা হয়েছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাসনাত বলেন, আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে আলোচনা হয়েছে, আমরা মনে করছি সেটি চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল। রাজনীতি রাজনীতিবিদরাই নির্ধারণ করবেন। পরবর্তী রাজনীতি কোন দিকে যাবে সেটি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। সে জায়গা থেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমার স্ট্যান্ডটি দিতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর ফরমাল ইনফরমাল বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ১১ তারিখের মিটিংয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। সে জায়গায় অপরপ্রান্তের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। আমি আমার স্ট্যাটাসে সেটি ডিসক্লোজ করেছি। ওখানে সব কিছু উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়। কিছু দিন আগে আপনারা সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্য লক্ষ করেছেন। সেটা নিয়ে দেশের মধ্যেও কথা হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অসমীচীন হিসাবে ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানকে যেভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, যেভাবে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ইঙ্গিত করা হয়েছে, আওয়ামী লীগসহ-সার্বিক বিষয়ে যখন আলোচনার কথা বলা হয়েছে, তখন গিয়েছিলাম। আমার স্ট্যাটাসে সবকিছু স্পষ্ট করা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় আছেন কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র-নাগরিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি নিরাপত্তা ঝুঁকি বোধ করছি না। 

অপর এক প্রশ্নে হাসনাত বলেন, আমরা বলেছি, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত গণহত্যার দায় স্বীকার করেনি। তারা যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই অপরাধই স্বীকার করে নাই। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে স্পষ্ট করতে চাই আওয়ামী লীগের বিচার আগে নিশ্চিত করতে হবে। তাকে দল হিসাবে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের অপরাধ স্বীকার করতে হবে। তারপর অন্য কোনো আলোচনা হলে হতে পারে। এর আগে কোনো আলোচনা হতে পারে না। এটা অসম্ভব। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নাম পুনরাবৃত্তি করছি, অথচ ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা এবং আদর্শ-এই তিনটাই অপ্রাসঙ্গিক। এখানে যদি কোনো দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্র বা এজেন্সি থেকে কোনো ধরনের অপচেষ্টা চালানো হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে কমিটেড। আমরা ছাত্র নাগরিকদের কাছে কমিটেড। যারা গত দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নির্যাতিত নিপীড়িত বঞ্চিত ও গুম-খুন হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের কাছে আমরা কমিটেড। কোনো এজেন্সি বা বিদেশি কোনো কর্তৃপক্ষ- কারও কাছেই আমরা কমিটেড নই।

এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (দক্ষিণাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৫০ মিনিটে দেওয়া পোস্টে হাসনাত লিখেছেন, ‘ড. ইউনূস, আওয়ামী লীগ ৫ আগস্টই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তরপাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।’ এর আগে বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কমফোর্ট ইরো’র সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন করা হবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের ফিরে আসায় সমঝোতা করতে ছাত্রনেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে জানি না। তার ওই পোস্টের পরই ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষিতে এনসিপির সব শীর্ষ নেতা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মিলিত হন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দল মতাদর্শ ও মার্কার বিরুদ্ধে জনগণ ৩৬ জুলাই রায় জানিয়ে দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ৭ মাস অতিবাহিত হলেও গণ-হত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি যে, ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আমরা তার এ বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম-ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।

নাহিদ বলেন, এনসিপি মনে করে, বিচারিক কার্যক্রমের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। আত্মপ্রকাশের পর থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি-কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ব্যতীত আওয়ামী লীগের দল হিসাবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যে কোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল। এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যে কোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। 

নাহিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়; বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিম বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। ফলত, আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে। 

বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যে কোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী মতাদর্শ, দল এবং মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬ জুলাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শ হিসাবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সব অধিকার হারিয়েছে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সব সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষিতব্য জুলাই সনদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান সংবাদ সম্মেলনে। 

এদিকে, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এদিন বেলা ১১টায় এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। 


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম