
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৬ এএম
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভিডিও পোস্ট
সেনাপ্রধান বুকে পাথরচাপা দিয়ে ড. ইউনূসকে মেনে নিয়েছিলেন

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বুকে পাথরচাপা দিয়ে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ভেরিফায়েড আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ওই ভিডিওতে আসিফ মাহমুদ সেনাপ্রধানকে নিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। হাসনাত আবদুল্লাহর বৃহস্পতিবার রাতের একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলা আলোচনার মধ্যেই আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য এলো।
আসিফ বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের পক্ষ থেকে মূল ভেটোটা ছিল প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কেন? ইউনূসের পরিবর্তে অন্য যে কোনো কেউ আসতে পারে। ইউনূসের নামে মামলা আছে, তিনি একজন কনভিক্টেড পারসন। একজন কনভিক্টেড পারসন কীভাবে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। সেনাপ্রধান বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ একটা লোককে একেবারেই দেখতে পারছে না এবং বাংলাদেশে তো আলটিমেটলি ৩০-৪০ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে। এই ৩০-৪০ শতাংশ লোকের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত?
আসিফ বলেন, সেনাপ্রধান সর্বশেষ আমাদের বলেছিলেন, বুকে পাথরচাপা দিয়ে আমি এ সিদ্ধান্তটা মেনে নিয়েছি। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হতো, যখন থেকে শেখ হাসিনাকে চলে যেতে হবে তারপরে কী হবে-শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরে দেশটাকে ছেড়ে দিতে পারি না। এই জায়গা থেকে আমরা যে এই চিন্তাটা ধীরে ধীরে আসতে থাকে কিন্তু ওই সময়টাতে আসলে বিশ্বাস করাও কঠিন ছিল যে ৫ তারিখের মধ্যেই হয়তো হয়ে যাবে। এমনকি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতিও ছিল আমাদের। ৫ তারিখে যদি সফল না হতাম তাহলে আমরা অস্ত্র তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিতাম। নাহিদ ভাই ভিডিও বার্তা রেডি রেখেছিলেন। আমিও কী ঘোষণা দেব সেটাও রেডি ছিল। এর আগে আমরা এটা অনুভব করি যে, পরবর্তীতে দেশটা আসলে কী হবে-শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরে সেই জায়গা থেকে এটা কোনো কালেক্টিভ সিদ্ধান্ত ছিল না। এমন না যে আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা বানানো হবে এমন কিছু।
ভিডিও বার্তায় আসিফ মাহমুদ বলেন, তখন আমার মূলত যোগাযোগ হচ্ছিল আমেরিকান অ্যাম্বাসির কয়েকজনের সঙ্গে। এর পাশাপাশি সাবেক ছাত্রদলের শামীম ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি মিরপুরের সংগঠক হিসাবে খুব ভালো ভূমিকা পালন করেছেন। উনার যোগাযোগটা ছিল মূলত মুশফিকুল ফজল আনসারিদের সঙ্গে। উনার মাধ্যমে আমরা ড. আলী রীয়াজ, তারপর বদিউল আলম মজুমদার স্যারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাদের সঙ্গে আমি কথা বলি ১ তারিখ যখন আমাদেরকে ডিবি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেদিন প্রাথমিক কথা হয়, ২ তারিখ মূলত আসল কথা শুরু হয়।
উনাদের তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ড. ইউনূস আসবেন কিনা-যদি আমরা আহ্বান করি। সবার একটা কথা ছিল উনি আসবেন না, এর আগেও অনেকবার চেষ্টা হয়েছে। আহ্বান করার ২৪-এর নির্বাচনের আগেও একটা আলোচনা ছিল। ১৯ সালের দিকে একটা আলোচনা ছিল। এর আগেও যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল-তখনও উনাকে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। উনি সব সময় রিফিউজ করেছেন। রাজনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন। আলী রিয়াজ স্যারও আমাকে বললেন, বদিউল আলম মজুমদার স্যারও বললেন আরও যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তারা বলছিলেন-উনি রাজি হবেন না। এ ধরনের একটা কথা হচ্ছিল। কিন্তু সরাসরি উনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
এরপর প্রাইভেট সেক্রেটারি মইন চৌধুরীর সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি ২ তারিখ বা ৩ তারিখ হবে এবং উনার সঙ্গে আমার কথা হয়। উনি বলছিলেন যে স্যারের একটা ছোট অপারেশন আছে। স্যার তখন ফ্রান্সে ছিলেন। পরবর্তীতে আমি উনাকে মেসেজগুলো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করি, আমরা চাচ্ছি-এমনটা উনি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। স্যার আবার আমাদেরকে পরে একটা মেসেজ পাঠান যে তোমরা যেটা করতেছো আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে অন্য কাউকে দেখার জন্য নামও আসছিল অনেক। আমার চিন্তাটা ছিল আামাদের অর্থনৈতিক যে ভঙ্গুর পরিস্থিতি একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার গঠন করলে সেটার জাতীয় আন্তর্জাতিক যে সমর্থনের ব্যাপার আছে সেই জায়গা থেকে আমি বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।
নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। শুক্রবার তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা লিখেন।
পোস্টে উপদেষ্টা লিখেন, নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে বারবার বলছেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইলেকশন হবে। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই সরকার এই কথা রাখবে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।
আসিফ মাহমুদ লিখেন, গণহত্যাকারী দল হিসাবে আওয়ামী লীগ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ইউএন রিপোর্টের মাধ্যমে স্বীকৃত। জনতার ঐক্য জিন্দাবাদ।