
প্রিন্ট: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৯ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এখানে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আগের আইন থেকে নতুন সেকশন নিয়ে এসে আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর করা হয়েছে। সেটার ক্ষেত্রে আরও যা যা পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী পাশ হয়েছে। এটা নিয়ে আইন উপদেষ্টা গত কয়েকদিন আগে বিস্তারিত বলেছেন। এরপর আমরা নারী সংগঠনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আইনে মতামতগুলো অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তার আলোকে আইন নিয়ে ঘণ্টাখানেক আলোচনা হয়েছিল। হওয়ার পর এই সংশোধনী পাশ হয়।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ১৩ মার্চ বলেছিলেন, ‘নতুন আইনে শুধু একটা বিষয় অ্যাড করতে চাই। শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের দ্রুত বিচার নিশ্চিতে আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছি। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান নতুন আইনে থাকবে। এ ট্রাইব্যুনালের কাজ হবে শুধু শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনার দ্রুত বিচার করা। যেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া যায়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলাৎকারের নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ মামলাগুলোর (বিচার) ডিলে হওয়ার পেছনে ডিএনএ টেস্টের একটা বড় ভূমিকা ছিল। সে জায়গাগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা যায়, তার মেজার নেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন দুইটা ডিএনএ ল্যাবও করতে যাচ্ছি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। পরে আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবৈধ যৌন সম্পর্কের বিষয়টিকে আলাদা অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচারের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত আইনে বলাৎকারকেও ধর্ষণ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
টেন্ডারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশ সংশোধন : প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ পার্সেন্টের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান তা বাতিল করা হয়েছে। পূর্বের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যেটা থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেত, তা বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স করা হবে। এতে করে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে।
প্রেস সচিব জানান, বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হচ্ছে। এটা শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা দূর করতে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।
এখন ঢাকাতেই হবে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া : এখন থেকে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের মাধ্যমেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে। সরকার প্রধানের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে ফোনালাপে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করবে অস্ট্রেলিয়া। প্রেস সচিব জানান, গত বছরের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্কের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ভিসা প্রক্রিয়া চালুর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এতদিন বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা আবেদন দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনে প্রক্রিয়া করা হতো।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ব্যবসার পরিধি বাড়বে : প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর একটি ঐতিহাসিক সফর হচ্ছে। চীন আমাদের এখান থেকে তিনটি কৃষি পণ্য খুব বড় আকারে আমদানি করতে চায়। এগুলো হচ্ছে-আম, কাঁঠাল এবং পেয়ারা। আমরা আশা করছি চীনে রপ্তানির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশের আম চীনের নাগরিকরা পছন্দ করছেন। এই সফরের মাধ্যমে চীনের এই বাজার আরও উন্মুক্ত হবে আমাদের জন্য। কাঁঠালও পছন্দ করেন চীনারা, আমরা আশা করি এটিও খুব বড় আকারে রপ্তানি করতে পারব। আমের মান নিশ্চিত করতে এফএও আমাদের ৪ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে, রপ্তানির জন্য কিছু স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে হয়, সেটি বজায় রাখতে তারা আমাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের আম বৃহৎ আকারে চীনে যাবে।
প্রেস সচিব বলেন, প্রফেসর ইউনূস চাচ্ছেন চীনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করে। তাহলে আমাদের দোরগোড়ায় উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা মিলবে। চীনের স্বাস্থ্যসেবা খুবই নামকরা। এরকম হলে আমরা ঢাকাসহ বড় বড় শহরে তাদের সেবা পাব। এটার জন্য বিশেষ একটা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা চাই স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হোক। এটা প্রধান উপদেষ্টা আগেও আলোচনা করেছেন, এবারের সফরে সেটা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারে থাকবে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে : প্রেস সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। অন্তর্বর্তী সরকারের এই ৭ মাসে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বেড়েছে। আমাদের সম্পর্ক ভালো তবে ভিসার বিষয়ে কিছু জটিলতা আছে, সেই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। কিন্তু আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, অবশ্যই সেটা ন্যায্যতা, সমতা এবং মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক হতে হবে। শনিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবেন বলেও জানান প্রেস সচিব। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।