ফেসবুকে সাবেক সেনাপ্রধান
আমাকে হত্যা করতে কর্নেল জিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করতে কর্নেল জিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একথা শুনে তার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গিয়েছিল। ১৩ মার্চ ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি করেছেন।
সাবেক সেনাপ্রধান ‘বিজিবি, র্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে ছয় পর্বে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। এর পঞ্চম পর্বে তিনি লিখেছেন, একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্ক দেখা দেয়। অফিসে কার্যরত সবাইকে তাদের অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল বোমা-নির্ণয় যন্ত্রপাতিসহ তার টিম নিয়ে দৌড়ে আসেন। পরবর্তী আধা ঘণ্টা অফিসটিতে তন্ন তন্ন করে বোমা খোঁজা হয়। আমাদের ভাগ্য প্রসন্ন যে, কোনো বোমার অস্তিত্ব মেলেনি এবং একটা লম্বা অপেক্ষার পর বিল্ডিংটিকে বোমা মুক্ত ঘোষণা করা হয়। আমি জগলুলকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? জগলুল জানালেন তিনি তার এক অফিসার মেজর সুমনের কাছে জানতে পেরেছেন যে, কর্নেল জিয়াকে আমাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুনে আমার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেই যে, এখন থেকে আমাকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে-বিশেষ করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুলও আমার নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিশেষ করে প্রতি সকালে আমার অফিস ও বাসা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সার্চ করার ব্যবস্থা করা হয়। জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন, আমি এরপর ফরমেশন অফিসারদের এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এসব ‘অপারেশন বা ক্রসফায়ার’র বর্বরতা ও এতে জড়িতদের সম্ভাব্য পরিণাম সম্পর্কে সরাসরি বলতে শুরু করি। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কোর্সে আসা অনেক অফিসারকে একসঙ্গে সতর্ক করার সুযোগ পাই। তবু দেশজুড়ে পত্রিকায় ক্রসফায়ারের খবর আসতে থাকায় আমি বিরক্ত হয়ে উঠি। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেই র্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবিতে আর কোনো অফিসারকে Posting দেব না।
ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আজিজ ও কর্নেল জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে অভিযোগ করেন এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বলেন। ডিজি ডিজিএফআই মেজর জেনারেল আকবর বারবার অনুরোধ করলে শেষ পর্যন্ত আমি নিজে একটি ১০-১২ জনের অফিসার দলের তালিকা তৈরি করে তাকে দিই। এদিকে কর্নেল জিয়া আরও ‘লবিং’ চালিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা, এমএসপিএম (MSPM), আর নিজের কোর্সমেট এএমএসপিএমের (AMSPM) সহায়তায় আমার ডিএমআইকে (DMI) অপসারণ করেন। কারণ তিনি ভাবতেন, ডিএমআই-ই আমাকে তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন। স্বাভাবিক নিয়মে সেনাপ্রধানই (CAS) ডিএমআই আর সিও এএসইউ (CO ASU) নিয়োগ দেন। কিন্তু আমার আপত্তি সত্ত্বেও ডিএমআইকে সরিয়ে দেওয়া হয়-যা আমাকে যথেষ্ট অপমানিত করে। তবে সিও এএসইউ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলকে (বর্তমানে নির্বাচন কমিশনার) আমার তীব্র বিরোধিতার মুখে সরাতে ব্যর্থ হয়।
সাবেক সেনাপ্রধান আরও লিখেছেন, পরে মিস্টার বেনজীর স্বয়ং আমার কাছে আসেন এবং র্যাব চালাতে আমার সহায়তা চান। কিন্তু আমি তাকে অফিসার দেওয়ার কোনো নিশ্চয়তা দিইনি। এমএসপিএম আমাকে কয়েকবার ফোন করে জানান যে-প্রধানমন্ত্রী র্যাব, বিজিবি আর ডিজিএফআইতে আরও অফিসার চাচ্ছেন। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকি। চট্টগ্রামের হোটেল র্যাডিসন উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে আমাকে ডেকে বলেন, র্যাবে আরও জুনিয়র অফিসার বদলি দিতে। আমি বুঝিয়ে বলি, পিজিআর (PGR), এসএসএফ (SSF), ডিজিএফআই, বিজিবি-সবখানেই ইতোমধ্যে এত অফিসার দেওয়া হয়েছে যে, এ মুহূর্তে অতিরিক্ত অফিসার দেওয়ার মতো অবস্থা সেনাবাহিনীর নেই। তিনি জোরাজুরি করলেও আমি আমার অবস্থানে শেষ পর্যন্ত অটল থাকি। অবশেষে তিনি লিখেছেন, আজকে আমরা এমন একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি যে র্যাব সম্পর্কে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঞ্ছনীয়। আমি সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করব যেন তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। সেটি সম্ভব না হলে সামরিক অফিসারদের র্যাব থেকে যেন স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসেন। এটি করার জন্য বর্তমান সেনাপ্রধানের যে স্বাধীনতা তৈরি হয়েছে আগের কোনো সেনাপ্রধানের তা ছিল না। তার এই নতুন লব্ধ অবস্থানের জন্যই তাকে অনুরোধ করছি তিনি যেন আমরা যে কাজটি করতে পারিনি সেটি সম্পন্ন করেন।