
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৭ এএম

মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি জিন ও মানুষকে শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে। (সূরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)।
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘অথচ তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তারা বিশুদ্ধ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে এবং সালাত কায়েম করবে ও জাকাত আদায় করবে। আর এটাই হলো সরল-সঠিক দ্বিন।’ (সূরা : বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)।
আল্লাহ মানুষকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন সমগ্র সৃষ্টি। মানুষ হচ্ছে পশু ও ফেরেশতার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ এক বিস্ময়কর জাতি। একদিকে যেমন মানুষ পাশবিকতার কঠিন বৃত্তে বন্দি, অন্যদিকে ফেরেশতাদের জ্যোতির্ময় গুণাবলিরও অধিকারী সে। যে মহান উদ্দেশ্য মানুষের সৃষ্টি এবং যে গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য মানুষকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এক অপূর্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে সে যোগ্যতা দান করেছেন মাবুদ তাকে। আর এ দায়িত্বেরই নাম হচ্ছে ইবাদত-আল্লাহর দাসত্ব।
প্রবৃত্তির গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়াই ইবাদতের মূল কথা। দেহ ও আত্মার সমন্বয়হীন ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতির দৈহিক ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের জন্য দিয়েছেন সিয়াম। এ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ যেমন পাশবিক শক্তি বা রিপুর তাড়না দমনে সচেষ্ট হয়, তেমনি নফস ও প্রবৃত্তির প্ররোচনা প্রতিরোধ করার যোগ্যতা অর্জন করে। ফলে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তার দেহ ও আত্মার মাঝে প্রতিষ্ঠিত হয় এক ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয়।
এ সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মানুষ তার দীর্ঘ জীবনে কয়েকটি মুহূর্তের জন্য হলেও নিজেকে ‘আখলাকে ইলাহী’ তথা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান করে প্রকাশ করার সুযোগ পায়। সিয়াম মানুষকে এতই পূতপবিত্র জীবন দান করে যে, সে তখন প্রবৃত্তির ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। মানুষ আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সর্বদা মনোনিবেশ করে রাখার পদ্ধতি শিখে যায়। সে হয়ে যায় মুত্তাকি। হয়ে যায় আল্লাহর আবেদ-উপাসক। কাজেই সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পূর্ণতায় পৌঁছে যাওয়াই একজন মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য।
এবারের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যাতে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে পূর্ণতায় পৌঁছাতে পারি সে জন্য প্রয়োজন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, আন্তরিক প্রচেষ্টা। নবিজি, সাহাবায়ে কেরামদের রেখে যাওয়া পদ্ধতিতে সিয়াম সাধনাই পারে আমাদের আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ইবাদতের উপযুক্ত করে দিতে। নবিজির সিয়াম সাধনা শুধুই উপবাস ছিল না। নবিজি (সা.) সিয়াম অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গিবত-পরনিন্দা করা ও অপাত্রে দৃষ্টি দেওয়া থেকে বিশেষভাবে বারণ করেছেন।
রোজাদারকে কেউ যদি গালিও দেয় সে যেন গালি না দিয়ে বলে আমি রোজাদার। এটাই রমজানের শিক্ষা। আফসোস! আমরা রমজানে পেট আর যৌনাঙ্গের রোজা হয়তো রাখি, কিন্তু মনের রোজা, জিহ্বার রোজা, চোখের রোজা, কানের রোজার প্রতি খুবই উদাসীন। তাই মাসব্যাপী ক্ষুৎপিপাসায় কষ্ট করলেও এর দ্বারা আমাদের জীবন ও সমাজে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না।
নবিজি (সা.) ইরশাদ করেন ‘সিয়ামব্রত অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়। কেউ যদি তাকে অশালীন কথা বলে কিংবা তার সঙ্গে অকারণে বাদানুবাদে লিপ্ত হতে চায়, তবে সে যেন এ কথা বলে দেয় যে, আমি রোজাদার’।
তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘যে রোজা রেখেছে অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি তার এই কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই। (বুখারি, মুসলিম কিতাবুস সওম)। তাকওয়া তথা খোদা ভীতিশূন্য সিয়াম হচ্ছে প্রাণহীন এক দেহ। তাই রুহ সম্পন্ন রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হয়ে নিজের আত্মা ও দেহকে মাবুদের নির্দেশিত পথে পরিচালনার যথাযথ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মাহে রমজান।
লেখক : সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ