Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটা

আহত অন্তত ১০ জন * শাহবাগে ৩০ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধ, ১৫ দিনে ধর্ষণের বিচার দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটা

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদানে বাধা দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়েছে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেঠা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অন্তত দশজন আহত হয়েছেন। খুন-ধর্ষণ-নিপীড়ন বন্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষণের বিচার দাবিতে এদিন গণপদযাত্রার আয়োজন করে এসব শিক্ষার্থী।

এদিকে নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজধানীর ৩০ কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশের অনুরোধে কিছুক্ষণ পর তারা সরে গিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে বিকাল পর্যন্ত ছিলেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ১৫ কার্যদিবসে ধর্ষণের বিচার ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটায় ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে যমুনা অভিমুখে রওয়ানা হন শিক্ষার্থীরা। মিছিল থেকে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দেন। বেলা ৩টায় শাহবাগ মোড় হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছান তারা। সেখান থেকে যমুনার দিকে যেতে ডানে মোড় নিতেই ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে প্রতিবাদকারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে পুলিশের লাঠিপেটায় গণপদযাত্রাটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এতে ছয় শিক্ষার্থী ও চার পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠক সাজেদুল ইসলাম, শাকিল আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী অং মার্মা ও অহী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অদ্রিতা রয় বলেন, ‘যে মিছিলে সামনের সারিতে নারীরা ছিল সে মিছিলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পালিত পুলিশ হামলা চালিয়েছে। মেয়েদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। লাঠিচার্জ করা হয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পালিত এ পুলিশের সঙ্গে কোনো আপস করব না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। অনেক সময় দিয়েছি, আর সময় দেওয়ার সুযোগ নেই।’

ঘটনার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘তারা পদযাত্রা করার কথা বলে হঠাৎ করেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে ঢুকে যাওয়ায় বাধা দেই এবং কোনো বক্তব্য থাকলে পাঁচজন প্রতিনিধি পাঠাতে বলি। এতে তাদের একটা পক্ষ রাজি হলেও আরেকটা পক্ষ ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু করে এবং পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এতে আমাদের এক এসিকে পিটিয়ে জামা ছিঁড়ে ফেলে এবং আমাদের সাত-আটজন আহত হন।’ পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জায়গাটা প্রটেকশনের আওতাধীন হওয়ায় সবাইকে যেতে না দিয়ে পাঁচজন প্রতিনিধি যাওয়ার কথা বলি। কিন্তু তারা শোনেনি। এরপরও আমরা ধৈর্য সহকারে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে বিকালে ছাত্রফ্রন্ট নেতা মোজাম্মেল হক জানান, আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ করব। ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বাংলাদশ প্ল্যাটফর্মের পরবর্তী কর্মসূচি এখনো গ্রহণ করা হয়নি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটি ঠিক করা হবে। এদিকে মিছিল শুরুর আগে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা সারা দেশের অব্যাহত আইনশৃঙ্খলার অবনতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মাগুরায় শিশু ধর্ষণকারীসহ সব ধর্ষণকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ৩০ কলেজের শিক্ষার্থীরা নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন। এতে শাহবাগ থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুলিশ তাদের সরে গিয়ে বিক্ষোভের দাবি জানালে ২০ মিনিট পর তারা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ চাই। আর একটা ধর্ষণের ঘটনাও দেখতে চাই না।

বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের শাস্তি ফাঁসি ফাঁসি বলে স্লোগান দেন। ছয়টি দাবি জানান। এগুলো হলো-ধর্ষকের শাস্তি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা। সেটি হলে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষণের বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে। দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যদি কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেফতার করা, মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা এবং ভিকটিম ও সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ১৫ কার্যদিবসের বিচার শেষ করে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটিতেও অসামঞ্জস্য থাকলে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় সালিশি বিচার নিষিদ্ধ করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করবে শুধু রাষ্ট্র। পাশাপাশি অনৈতিক পন্থায় প্রশাসনের কারও সহযোগিতায় যদি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার আসামি ছাড়া পায়, তবে তদন্ত অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করা যেতে পারে। চলমান মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। জনদুর্ভোগ বিবেচনায় তারা জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম