ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফেরা
সড়কপথের ১৫৫ স্পটে তীব্র যানজটের শঙ্কা
ঝুঁকি আছে-চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এবারের ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফেরা মানুষের যাতায়াতে সড়কপথে ১৫৫টি স্পটে তীব্র যানজট হতে পারে-এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তারা আরও জানান-চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্যরে বড় ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি লক্কড়-ঝক্কড় বাস, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের পাশের ভাসমান বাজার এবং নসিমন, করিমন, ইজিবাইক চলাচলে দুর্ঘটনার উদ্বেগ থাকছে ঈদযাত্রায়।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে রোববার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহণ ও সেতুন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো উঠে আসে। বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের সমাধানে বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যদিও বাস্তবতা হলো-প্রতিবছর এমন সভা হয়, নির্দেশনাও দেওয়া হয়; কাজের কাজ কিছুই হয় না। ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না।
সড়ক পরিবহণ এবং সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, ১৫ রজমানের মধ্যে সড়কের সব ত্রুটি সংস্কার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে, হাইওয়ে এবং পদ্মা সেতুর গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার থেকে ৮০ কিলোমিটার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে নির্বিঘ্ন করতে বিআরটি প্রকল্পে একদিকে পরিবহণ চলাচল করা হবে। এক্ষেত্রে যাওয়ার সময় গাজীপুরমুখী এবং ফেরার সময় (ঈদের পর) ঢাকামুখী হতে পারে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮টি, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২টি, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬টি, ঢাকা থেকে সিলেট মহাসড়কে ৪১টি এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে ৮টি যানজট স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।
এরমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে-কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব ঢাল, গ্রিনলাইন ইউটার্ন, মদনপুর মোড়, কেওডালা ইউটার্ন, কনকা ইউটার্ন, মোগড়া পাড়া, মেঘনা টোল প্লাজা, সাইনবোর্ড, বাসস্ট্যান্ড, সানারপাড় ইউটার্ন, মৌচাক স্যান্ড, দশতলা ভবন, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, আদমজী, পাখির মোড়, ওয়াটার পার্ক, ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেট, আনারপুরা, বাটেরচর নতুন রাস্তা, হাঁস পয়েন্ট, দাউদকান্দি টোলপ্লাজা, বলদাখাল, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), সদর দক্ষিণ থানার সামনে কাটা, নূরজাহান হোটেলের সামনের কাটা, কোটবাড়ী ইউটার্নের উভয়পাশে, জাগুরঝুলি কাটা, আলেখারচর কাটা, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, নিমসার বাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রাম বাজার, বিসিক মোড়, লালপোল, বাড়বকুণ্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফুটলিং, ফৌজদারহাট, সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড বা বড় দারোগারহাট স্কেল, মীরসরাই থানাধীন মিঠাবাজার, নিজামপুর বাজার, বড়তাকিয়া বাজার এবং জোরারগঞ্জ থানাধীন বারৈয়ার হাট বাজার।
আর ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটের তালিকায় রয়েছে-বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে যমুনা সেতু পূর্ব গোল চত্বর, যমুনা সেতুর পশ্চিম গোল চত্বর, ফেন্সিগেটের পূর্ব অংশ, ফেন্সিগেটের সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ি আন্ডারপাসের পূর্বে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোল চত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাড়ী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভিভিলা, ঘোষমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়াবাড়ি থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, হটিকুমরুল গোলচত্বর হতে হটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদ, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল হতে চাচা ভাতিজা হোটেল পর্যন্ত, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনা গরুর হাট, ঢাকা-রাজশাহী টোলপ্লাজা কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক বানেশ্বর বাজার-রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কনস্ট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর থানাধীন বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানাধীন জিয়া মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমানবন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানাধীন বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় হতে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস, শিল্পী রেস্তোরাঁ হতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ হতে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তরপ্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, রংপুর বড় দরগাহ আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী বাজার এবং মিঠাপুকুর।
এছাড়া ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কের ৬টি বড় যানজট স্পটের মধ্যে রয়েছে-ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড, মাস্টারবাড়ী বাজার বাসস্ট্যান্ড, সিড সেন্টার বাজার এবং ভালুকা বাসস্ট্যান্ড। একইভাবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি যানজট স্পটের তালিকা স্থান পেয়েছে। সেগুলো হলো-কাঁচপুর মোড় ও পশ্চিম ঢাল, যাত্রামুড়া ব্রিজ, তারাব বাসস্ট্যান্ড, রবার বাসস্ট্যান্ড, পাকিস্তানি (এসিএস) গার্মেন্টস, রবিন টেক্স গার্মেন্টস, ভুলতা মোড়, গোলাকান্দাইল মোড়, বান্টি বাজার, পাঁচরুখি, ছনপাড়া, পুরিন্দা বাজার, মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শেখেরচর (বাবুরহাট), পাঁচদোনা, সাহেপ্রতাব, ভেলানগর, ইটাখোলা মোড়, মরজাল বাজার, বারৈচা বাজার, নারায়ণপুর বাজার, দুর্জয়মোড় বাসস্ট্যান্ড পৌরসভা এলাকা, আশুগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বেড়াতলা বাসস্ট্যান্ড, বিশ্বরোড গোল চত্বর, নন্দনপুর বাসস্ট্যান্ড, সুহিলপুর বাসস্ট্যান্ড, বাড়িউড়া বাসস্ট্যান্ড, শাহবাজপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড, ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড, সাতবর্গ বাসস্ট্যান্ড, মাধবপুর বাজার, অলিপুর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ গোল চত্বর, রুস্তমপুর টোল প্লাজা, শেরপুর টোল প্লাজা, গোয়ালা বাজার এবং ঢাকা থেকে পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের আটটি যানজট স্পটের তালিকায় রয়েছে-আমিন বাজার, উলাইল বাসস্ট্যান্ড, সাভার থানা স্ট্যান্ড, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সিএন্ডবি মোড়, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড, নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড এবং কালামপুর।
শৃঙ্খলায় মোবাইল কোর্ট : সড়ক নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জেলা পুলিশ কমিশনার, সব জেলা প্রশাসক এবং সব নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে-উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি, জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি এবং মেট্রোপলিটন সড়ক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এছাড়া বিআরটি, শ্রমিক ও মালিক সংগঠনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। এখানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে-চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি দৌরাত্ম্য। লক্কড়-ঝক্কড় এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ না করা।
বিশেষ নির্দেশনা : সেতু ও মহাসড়কের টোলপ্লাজার যানজট এড়াতে ইটিএস বুথ সার্বক্ষণিক টোল আদায় অব্যাহত রাখতে হবে। আর ঈদের তিন দিন আগে থেকে এবং পরের তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং লরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। একইভাবে ঈদের আগে ৭ দিন এবং পরের ৫ দিন সার্বক্ষণিক সিএনজি ফিলিং স্টেশন চালু রাখা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া। এতে যানজট অনেকাংশে কম হবে।
মহাসড়ক ও করিডর প্রস্তুত করার নির্দেশ : ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরে বিশেষ দৃষ্টি রাখবে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। ১৫ রমজানের মধ্যে এসব সড়কের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করতে বলা হয়েছে। মহাসড়ক ও করিডরের তালিকায় রয়েছে-ঢাকা-বাইপাইল সড়ক; মদনপুর-ভুলতা ও ভোগড়া পর্যন্ত, নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক, ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, ঢাকা-ভোগড়া-চন্দ্রা এবং এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা, ভাঙ্গা-বরিশাল এবং ঢাকার দুই সিটির সড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে এসব কাজ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।