Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

৯০ দিনে বিচার শেষ করতে আইন সংশোধন হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হচ্ছে। রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল একথা বলেন। তিনি বলেন, তদন্তের সময়ও আমরা অর্ধেক করে দিচ্ছি। আগে ছিল ৩০ দিন, সেটা আমরা এখন ১৫ দিন করে দিচ্ছি। বিচারের সময়ও আমরা অর্ধেক করে দিচ্ছি। ধর্ষণের মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হতো, এজন্য মামলার কাজ শেষ হতে দেরি হতো। আমরা যে সংশোধনী আনব, সেখানে বলব-তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাকেই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে না।

আসিফ নজরুল বলেন, বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ না হওয়ার অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। বর্তমান আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে কোনো জামিন দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন তাহলে ডিএনএ সনদ ছাড়াই বিচার কাজ সম্পন্ন করার বিধান করা হচ্ছে। সব অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে শিগগিরই, আশা করছি সাত দিনের মধ্যে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমও উপস্থিত ছিলেন। আসিফ নজরুল বলেন, রাস্তাঘাটে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি টোল ফ্রি হটলাইন সেন্টার চালু হবে। ২৪ ঘণ্টা হটলাইনে অভিযোগ করা যাবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হটলাইনের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এই সেন্টারের কার্যক্রম তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ডেডিকেটেড সেল থাকবে। ধর্ষণের মামলা তদারকির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সেল থাকবে। বিচার কাজে কোনোভাবে কালক্ষেপণ যেন না হয়, সে বিষয়ে তদারকি করা হবে।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত ও বিচারে যাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না হয়, সে ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট যত সরকারি দপ্তর আছে, তারা সর্বোচ্চ সজাগ থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। মাগুরার ঘটনায় অভিযুক্তদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করবে সরকার। একইভাবে যদি দেশের কোথাও নারীর প্রতি কোনো সহিংসতা বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে, তাদের সম্পূর্ণভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ যাবৎ নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছি। নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। যারা নারীর পথে বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে।

ছবি-ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ : মাগুরার ভুক্তভোগী শিশুটির ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই নির্দেশনা দেন আদালত। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেছেন, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির (শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগে মামলা) তদন্ত শেষ করতে হবে। অভিযোগ আমলে নেওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারায় সংবাদমাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধানিষেধ সম্পর্কে বলা আছে। ১৪ ধারা ভঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ধারাটির বিষয়ে দেশজুড়ে সবাইকে জানাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী শিশুটি ও তার ১৪ বছর বয়সি বড় বোনের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এজন্য ঢাকা ও মাগুর জেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতেও বলা হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে বিবাদীদের ১৭ মার্চ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন রিটটি করেন। তারা রিটের পক্ষে শুনানি করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান শুনানিতে অংশ নেন। পরে সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, দুজন সমাজসেবা কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকায় একজন শিশুটির দেখাশোনা করবেন। আরেকজন মাগুরাতে শিশুটির বোনকে দেখাশোনা করবেন। কারণ, শিশুটির বিবাহিত বোনটিও শিশু। তার শ্বশুরবাড়ি হচ্ছে ঘটনাস্থল। সেখানেও সে নিরাপদ নয়। তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে এ দুই অফিসার কাজ করবেন।

হামিদুল মিসবাহ বলেন, বিটিআরসি ও সাইবার পুলিশকে বলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেসব কনটেন্ট (নাম, ছবি, পরিচয়) আছে সেগুলো রিমুভ করতে। কারণ আইনের ১৪ ধারায় নাম-পরিচয় প্রকাশে বিধিনিষেধ আছে। এছাড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ তদন্ত কমিটিকে একটা গাইডলাইন বানাতে বলেছেন। যাতে করে সারা দেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দমনে ভিকটিমদের সাপোর্ট দেওয়া যায়।

মাগুরার শিশুকে আইনি সহায়তা দেবে বিএনপি : মাগুরার সেই শিশু ও তার পরিবারকে আইনি সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ জন্য সেল গঠন করে দিয়েছেন তিনি। রোববার সুপ্রিমকোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ তথ্য জানান। কায়সার কামাল বলেন, মাগুরা কোর্টের ৫ আইনজীবীকে নিয়ে সেল গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন, অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান খান, অ্যাডভোকেট কুমুদ রঞ্জন বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট এমএ রশিদ ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান। তারেক রহমান ওই শিশুর চিকিৎসার সব ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। এ সময় অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, রোকনুজ্জামান সুজা উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম