Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শেয়ারবাজারে দুপক্ষ মুখোমুখি অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেয়ারবাজারে দুপক্ষ মুখোমুখি অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে

শেয়ারবাজারে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এখনো আতঙ্ক কাটেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এবং বিএসইসি কর্মকর্তারা কার্যত এখনো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বাজারের অন্যান্য অংশীজনও। তবে আন্দোলনকারী বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ রোববারও হয়নি। ফলে দায়ের হওয়ার মামলার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারাও আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে।

সূত্র জানায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মকর্তারা কিছুটা নমনীয় অবস্থানে রয়েছেন। এজন্য তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বিবদমান পরিস্থিতির শিগগির অবসান হতে পারে।

এদিকে শেয়ারবাজারের সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা রোববার বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে বৈঠকে কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত আসেনি। চেয়ারম্যান তার অবস্থানে অনড়। রোববার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ২৯ পয়েন্ট কমেছে। আর ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক প্রতিনিধি যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বৈঠকে সেনা-কর্মকর্তাকে কেন থাকতে হবে, তা অনেকের বোধগম্য নয়। এক্ষেত্রে তিনি (বিএসইসি চেয়ারম্যান) কি আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন, না নিজেই আতঙ্কে আছেন, তা পরিষ্কার নয়।

সূত্র জানায়, স্টেক হোল্ডারদের পক্ষ থেকে বাজারের স্বার্থে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা কমিশনকে বুঝাতে চেয়েছে যা হওয়ার হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া জরুরি। তা না হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে খারাপ বার্তা যাবে। বিদেশি বিনিয়োগেও প্রভাব পড়বে। তবে কর্মকর্তাদের শাস্তির প্রশ্নে চেয়ারম্যান অনড়। তিনি কোনো ছাড় দিতে নারাজ।

দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে ৫ মার্চ। এদিন বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ কমিশনকে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করার আগ পর্যন্ত কর্মকর্তারা কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। এরপর সেনাবাহিনীর প্রহরায় ৬ মার্চ আবারও কমিশনে আসেন তিনি। ওইদিন রাতেই চেয়ারম্যানের গানম্যান বাদী হয়ে বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। এর আগে বিএসইসি চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে বিএসইসিতে কোনো চেয়ারম্যানকে এভাবে অপমানিত হতে হয়নি। এই ঘটনার পর রোববার ছিল বাজারের প্রথম লেনদেন। এ অবস্থায় কমিশনের সঙ্গে অংশীজনরা বৈঠক করেন। এই ঘটনার মাসখানেক আগে বাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরাও বিএসইসির কার্যালয় ঘেরাও করেন। ওই সময়েও যৌথ বাহিনীর সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, বর্তমানে স্মরণকালের সবচেয়ে অচল অবস্থায় শেয়ারবাজার। একদিকে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অপরদিকে পুরো বাজারের বেশিরভাগ অংশীজন মুখোমুখি। কিন্তু এই ঘটনার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর দায় চাপিয়ে পার পেতে চান রাশেদ মাকসুদ। ইতোমধ্যে তাদের ১৬ জনের নামে মামলাও হয়েছে। বাকিদের অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সেসব গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিককে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাকে রিপোর্ট করা হয়েছে।

অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এই ঘটনায় তারাও বিব্রত। এর আগে আরেকজন চেয়ারম্যানকে সরানো হয়েছে। ফলে এই পদে নতুন করে যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সবকিছু মিলে একজন অদক্ষ চেয়ারম্যানের কাছে পুরো শেয়ারবাজার জিম্মি। এক্ষেত্রে সরকার বিনিয়োগকারীর পরিবর্তে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে সুরক্ষা দিচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অযোগ্যতার বিষয়টি সবাই অবগত। কিন্তু তিনি সরকারের প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ের জামাই। এ কারণে অযোগ্যতা সত্ত্বেও তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে রোববারের বৈঠকে শেষে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাজারে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে বিএসইসি যে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আমরা তাদের সঙ্গে একমত। বৈঠকে আমরা বলেছি, আপনারা শক্ত হাতে হাল ধরেন। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। সবাই সম্মিলিতভাবে এটা মোকাবিলা করব। তবে নিরপরাধ কেউ যাতে শাস্তি না পান, সেটি নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছি।’ মমিনুল ইসলাম বলেন, বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে বিএসইসি চেয়ারম্যানসহ কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের ঘটনা নিন্দনীয়। চেয়ারম্যান কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে রাখার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, তবে এই অপ্রীতিকর ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যা ঘটার তা ঘটে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করছি-তারা যেন হতাশ না হন। চলমান সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

বৈঠক শেষে বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনরা (স্টেকহোল্ডাররা) এসেছিলেন। তারা আমাদের সহমর্মিতা জানিয়েছেন। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরেছেন। সবাইকে কাজে যোগদান করতে বলেছি।’

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। কমছে তারল্য প্রবাহ। গত সাড়ে ৬ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট কমেছে। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। সবকিছু মিলে শেয়ারবাজার গভীর খাদের কিনারায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের এই অবস্থার পেছনে বিএসইসির নেতৃত্বের দুর্বলতা দায়ী।

অভিযোগ রয়েছে, একদিকে বর্তমান কমিশনের শেয়ারবাজারের মতো টেকনিক্যাল খাতের ব্যাপারে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই। অপরদিকে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতাও নেই। পুরো কমিশন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন। সংশ্লিষ্ট কোনো অংশীজনের সঙ্গে কথাও বলেন না বিএসইসির চেয়ারম্যান। তবে আলোচ্য সময়ে তারা বেশ কিছু কোম্পানিকে বড় ধরনের জরিমানা করেছেন। আবার অন্য একটি কোম্পানিকে নামমাত্র জরিমানা করে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম