Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এনবিআর ভাঙছে

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হবে নতুন দুই বিভাগ

নতুন অধ্যাদেশ জারি করতে শিগগিরই অর্থ উপদেষ্টার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে * লক্ষ্য-রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হবে নতুন দুই বিভাগ

সংগৃহীত ছবি

এনবিআর ভেঙে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ বাতিল করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করার প্রস্তাব দিয়েছেন আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এনবিআরের বর্তমান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। যেমন রাজস্ব আদায়, আয়কর-কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন, বাজেট ব্যবস্থাপনা, রাজস্বসংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ইত্যাদি। আর রাজস্ব নীতি বিভাগ নীতি প্রণয়নে কাজ করবে। দুটি বিভাগই থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এজন্য নতুন অধ্যাদেশ জারি করতে শিগগিরই অর্থ উপদেষ্টার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। এনবিআরের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে রাজস্ব খাত সংস্কার কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আলাদা করে নতুন দুটি বিভাগ করার নীতিগত অনুমোদন দেয়। কীভাবে দুটি বিভাগ পৃথক কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা বা আইন সংশোধন করতে হবে কিনা-তা যাচাই-বাছাই করতে এনবিআর চেয়ারম্যান সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আয়কর ও কাস্টমস উইংয়ের প্রায় ২৫-৩০ জন কর্মকর্তা নীতি ও প্রশাসনিক বিভাগ আলাদা করার আইনি কাঠামো খতিয়ে দেখেন। এ কমিটি প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের একটি খসড়া তৈরি করেছে, যা শিগগিরই অর্থ উপদেষ্টার কাছে সারসংক্ষেপ আকারে পাঠানো হবে। বর্তমানে এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনাল আইআরডির অধীনে পরিচালিত হয়। আইআরডির সচিব পদাধিকারবলে এই চারটি দপ্তরের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পৃথক করে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ সৃষ্টি ও কার্যকর করতে বিদ্যমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ রহিত করে নতুন অধ্যাদেশ জারির প্রয়োজন হবে। নতুন অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হলে নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ সৃষ্টি করতে রুলস অব বিজনেস (এলোকশন অব বিজনেসসহ), উভয় ক্যাডারের ক্যাডার রুলস সংশোধন এবং বিভাগ দুটির সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন প্রয়োজন হবে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের একটি খসড়া যুগান্তরের হাতে এসেছে। এটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ কাজ করবে। দুই বিভাগের সচিব হবেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারে ন্যূনতম ২০ বছর কাজে অভিজ্ঞরা। পালাক্রমে দুই বিভাগে দুই ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তারা কর্মরত থাকবেন। এনবিআরের বর্তমান কাঠামো তখন রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে কার্যক্রম চালাবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের মূল কাজ হবে-আয়কর, ভ্রমণ কর, দান কর, সম্পদ কর, কাস্টমস-শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক, সারচার্জ এবং শুল্ক-করাদি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও এসবের ব্যাখ্যা দেওয়া। এছাড়া শুল্ক-কর আরোপ ও অব্যাহতি সংক্রান্ত কার্যক্রম, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী অন্য কার্যক্রম এবং সরকারের দেওয়া অন্য যে কোনো দায়িত্ব পালন করবে। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে রাজস্ব নীতি বিভাগকে পরামর্শ দিতে অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বে একটি পরামর্শক কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটির কার্যপরিধি রাজস্ব নীতি বিভাগ নির্ধারণ করবে। এছাড়া কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল রাজস্ব নীতি বিভাগের সংযুক্ত দপ্তর হবে।

অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মূল কাজ হবে-নীতি বিভাগ প্রণীত আয়কর, ভ্রমণ কর, দান কর, সম্পদ কর, কাস্টমস-শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক, সারচার্জ আইন ও বিধির প্রয়োগের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত পদ্ধতিগত বিধিমালা প্রণয়ন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাজেট প্রণয়ন ও বাজেট বাস্তবায়ন এবং লজিস্টিকসসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কাস্টমস সংক্রান্ত চুক্তি আলোচনা, সম্পাদন ও মতামত দেওয়া; আন্তর্জাতিক দ্বৈত কর পরিহার চুক্তিসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা; আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন; রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কার্যক্রমের দক্ষতা, কার্যকারিতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আয়কর আপিল এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটসংক্রান্ত আপিল অফিস রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।

এর আগে ডিসেম্বরে ড. আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে গঠিত রাজস্ব খাত সংস্কার বিষয়ক কমিটি অর্থ উপদেষ্টার কাছে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ পৃথক করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে রাজস্ব প্রশাসন ও নীতি বিভাগ পৃথকীকরণের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, কর নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন কাজ একই সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত থাকায় নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে আপসকামিতা, দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাত ও নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটো কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে করতে হয় বিধায় নীতি-নির্ধারক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নীতি প্রণয়নে বেশি সময় দিতে হয়। এতে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এনবিআর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় কর নীতি, কর আহরণ, করদাতাদের সেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই স্বচ্ছ ও উন্নয়নবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ পুনঃপরিবর্তন করে এনবিআর ও আইআরডি পুনর্গঠন প্রয়োজন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম