
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৪ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন ও মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন। শনিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে। এদিন বিকালে যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
ধর্ষণের ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, তার বড় মেয়ের স্বামীর সহযোগিতায় শ্বশুর শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুর জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা চালান। পুলিশ অভিযুক্ত এই চারজনকেই গ্রেফতার করেছে। এদিকে শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শনিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে ভেন্টিলেশনে আছে। অবস্থা ততটা ভালো না। শিশুটির চিকিৎসায় আমরা চার সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিলাম। এর আগে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ওই বোর্ডে চারটি বিভাগের চিকিৎসকরা আছেন। ঢামেক শিশু বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া পেডিয়াট্রিক সার্জারি, গাইনি এবং অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা আছেন। তারা (চিকিৎসক) শনিবার মিটিংয়েও বসেন। কিছুক্ষণ পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিশুকে দেখতে আসেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি আমাদের চিকিৎসকদের কাছে শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে শিশুটিকে সিএমএইচএ পাঠানোর পরামর্শ দেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমও টেলিফোনে শিশুটির খোঁজ নিয়েছেন। তিনিও একই কথা বলেছেন। পরে আমি সিএমএইচে যোগাযোগ করে সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, পাশবিক নির্যাতনের (ধর্ষণ) সময় শিশুটির গলা চেপে ধরা হয়েছিল। তার গলায় একটি দাগ আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গলা চেপে ধরার কারণে তার শ্বাসকষ্ট হয়েছে। ফলে সমস্যাগুলো আরও বেশি হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান এবং শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য মো. ছামিদুর রহমান বলেন, গলা টিপে ধরার কারণেই তার সমস্যা বেশি হচ্ছে। এ কারণে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়।
মায়ের মামলা, গ্রেফতার ৪ : শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। শনিবার দুপুরে মাগুরা সদর থানায় মামলাটি করেন শিশুটির মা। আসামিরা হলেন-শিশুটির বোনের স্বামী সজিব, শ্বশুর হিটু শেখ, ভাসুর রাতুল ও শাশুড়ি জাহেদা। এই চারজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলায় শিশুটির মায়ের অভিযোগ, ১ মার্চ শিশুটি বড় বোনের বাড়ি মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বেড়াতে যায়। ৫ মার্চ রাতে সে বোনের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দেড়টার দিকে বোন জামাই সজিব ঘরের দরজা খুলে দিলে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ ঘরে প্রবেশ করে। সে ঘুমন্ত শিশুটির মুখ চেপে ধরে পাশের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাত আড়াইটার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে শিশুটিকে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে তার বোন। কিন্তু সকালে ধর্ষণের বিষয়টি বুঝতে পারে সে। এ অবস্থায় বিষয়টি কাউকে না জানাতে ঘরে শিশুটি ও তার বোনকে আটকে রাখা হয়। পরে জোহরা নামে এক প্রতিবেশী বিষয়টি জানতে পেরে শিশুটিকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ধর্ষণের শিকার শিশুটির অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাগুরা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জানান, শিশুটির চিকিৎসায় পরিবারের সবাই ঢাকায় অবস্থান করায় মামলাটি হতে সময় লেগেছে। মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
দেশটা কি কাপুরুষদের হয়ে গেল-উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ : শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে মেয়েটি মেয়ে হয়ে ওঠেনি, যে মেয়েটি নারী হয়ে ওঠেনি, তার গায়ে হাত দেয় কী করে? এই দেশটি কি কাপুরুষদের দেশ হয়ে গেল! যারা আট বছরের মেয়ের গায়ে হাত দিল, এই কাপুরুষগুলো পুরুষ হয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, এদের দমন করার দায়িত্ব আপনাদেরও। সমাজ কি সুস্থ আছে বলে আপনার মনে হয়? আমি ছয় মাস এসেছি, আর আপনার কি মনে হয়, এই পচে যাওয়া সমাজকে বদলে দেব! শিশুটি জীবন নিয়ে লড়ছে, ডাক্তাররা জানে না তাকে বাঁচাতে পারবে কী পারবে না। তারা কাজ করছে, তরুণ ছেলেমেয়েরা প্রতিবাদ করছে। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এই শিশুটি যেন সর্বোচ্চ বিচার পায়। তিনি বলেন, প্রথম কথা, সবাই দোয়া করবেন শিশুটি যেন বাঁচে। ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান : চিকিৎসাধীন শিশুটির মায়ের সঙ্গে শনিবার দুপুরে টেলিফোনে কথা বলেছেন তারেক রহমান। শিশুটির দ্রুত সুস্থতা কামনা করে চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির পাশে ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, তারেক রহমান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। এ সময় তিনি শিশুটির শারীরিক খোঁজখবর। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সেলিমা রহমান।