দেশ অস্থিতিশীল করার নেপথ্যে ফ্যাসিস্টদের অপতৎপরতা
শেখ হাসিনা-কামালের সার্বক্ষণিক মনিটরিং

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে দাবি আদায়ে একরকম ‘স্থায়ী সংস্কৃতি’। ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুতেই সড়ক অবরোধসহ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন খাতসংশ্লিষ্টরা। একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে সরকারের ওপর। একটি সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই আরেকটি এসে ধাক্কা দিচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে এসব দাবির মিছিল। এর জেরে কখনো কখনো অবনতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। আবার হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে খুন, ছিনতাই ও চলন্ত যানবাহনে নারীদের শ্লীলতাহানিসহ ভয়ানক সব অপকর্ম। আর এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতাদের দেওয়া বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। যা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন তারা।
এমনকি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে হরতাল, মশাল মিছিল, লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচিও দেওয়া হয়। যা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করতে উসকে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা জানান, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও জড়িত আছেন সাবেক বেশ কয়েকজন প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জন আমলার নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৭ মাস পূর্ণ হচ্ছে। এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এখানেই শেষ নয়, ঈদ সামনে রেখে গার্মেন্ট সেক্টরে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে ইস্যু করা হবে। যা বিচ্ছিন্নভাবে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েক স্থানে সংঘটিত হয়েছে। অস্থিতিশীল করার জন্য তৈরি হয়েছে ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ।’ টাকার বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল, জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রস্তুতি নিয়েছে গ্রুপটি। শ্রমিকদের মনে ভীতির সঞ্চার করে কাজের স্বাভাবিকভাবে গতি ব্যাহত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা উত্তপ্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পতনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই অংশ হিসাবে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ডাকাতি ও ছিনতাই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ানো হয় পরিকল্পিতভাবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও বার্তায় পরিকল্পনার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এর পরপরই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান ঘোষণা করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর হুঁশিয়ারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের কাছে অনেক টাকা আছে। টাকা খরচ করে সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে তারা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা তৎপর আছি। আশা করছি তারা সফল হতে পারবে না।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পলাতক থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি কিছু আমলার তালিকাও এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-ধনঞ্জয় কুমার দাস, শেখ ছালে আহম্মদ, নাসরিন পারভীন, বিকাশ বিশ্বাস, আমিনুল ইসলাম, সেখ ফরিদ আহমেদ, শরিফা আহমেদ, ড. ফারুক আহম্মদ, আবু সাঈদ মোল্লাহ, কানিজ ফাতেমা, ফারজানা সিদ্দীকা, তাহনিয়া রহমান চৌধুরী, আমিন আল পারভেজ, আশরাফ আহমেদ রাসেল, শহীদ উল্লাহ প্রমুখ।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম শুক্রবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আপনারা ধরেই নিতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পতিত সরকারের অনেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। যারা বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশকে অশান্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া চলমান। আর যারা দেশে অবস্থান করে পলাতক শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মাধ্যমে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছিল। তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। অপশক্তিকে রুখতে ‘ডেভিল হান্ট অপারেশন’সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বতর্মান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ষড়যন্ত্র শুরু হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে না নিতেই রাজারবাগে নানা দাবি তুলে বিদ্রোহ শুরু করেন অধস্তন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এর নেপথ্যে ছিলেন আওয়ামী আমলের উচ্চাভিলাষী পুলিশ কর্মকর্তারা। আর সামনে ছিলেন এক কনস্টেবল এবং এক এএসআই। রাজারবাগ বিদ্রোহ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আনসার বিদ্রোহ। আনসার সদস্যরা বেআইনিভাবে সমাবেশ করেন। নতুন সরকারকে বিপদে ফেলতে ঘোরও করেন সচিবালয়। বাধা দেন পুলিশের কাজে। একপর্যায়ে তারা ঢুকে পড়েন সচিবালয়ের ভেতর। এসব ঘটনায় কিছু আনসার সদস্য সামনে থাকলেও পেছনে ছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে দলীয় অনেকেই আনসারের পোশাক পরে আন্দোলনে নামেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
চার দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন মেডিকেল আসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের আন্দোলন জোরালো হয়। ১৫ আগস্ট থেকে টানা কর্মসূচি দেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, ধর্মঘট, ক্লাস বর্জন, স্মারকলিপি প্রদান এবং সড়ক অবরোধসহ বিচ্ছিন্নভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। শিগগিরই তারা বড় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি বাতিলের জন্য আন্দোলন শুরু করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’। ১৫ জানুয়ারি তারা মতিঝিল এনসিটিবি অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। একই স্থানে ক্ষুব্ধ আদিবাসী জনতার ব্যানারে গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে। দুই পক্ষ পৃথক দাবিতে এনসিবি অফিস ঘেরাও করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে যারা হামলাকারী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক জিয়াউল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক মহিউদ্দীন, ইয়াকুব মজুমদার, মুখপাত্র রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ।
গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলাকালে (সাতটি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর) শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। ১১ আগস্ট থেকে বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয়নি। ছাত্ররা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফল প্রকাশের দাবি জানান। ১৯ আগস্ট ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে। ২০ আগস্ট তারা সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে। বিক্ষোভের মুখে পরীক্ষা বাতিল করা হয়। ১৫ অক্টোবর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলকে বৈষম্যমূলক দাবি করে একদল শিক্ষার্থী তা প্রত্যাখ্যান করে। ২৩ অক্টোবর তারা সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
১০ দফা দাবিতে ২০ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করে সিএনজি অটোরিকশা চালক ঐক্য পরিষদ। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে, মিটারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করলে জরিমানা বা কারাদণ্ড প্রদান করা হবে চালকদের। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আন্দোললনকারীরা। অচলাবস্থা নিরসনে ওই দিনই বিআরটিএর নির্দেশ বাতিল করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিএনজি অটোরিকশাচালক ঐক্য পরিষদের অন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীরা হলেন-গোলাপ হোসেন সিদ্দিকী, মোহাম্মদ ফিরোজ মন্ডল, আব্দুল লতিফ, শেখ হানিফ, আব্দুল মান্নাফ ও মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল এবং সুবিধা অনুযায়ী পেনশন ও আনুতোষিকের দাবিতে রেলওয়ের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ সাড়ে চার বছর আগে আন্দোলন শুরু করলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠে সংগঠনটি। দাবি আদায়ের জন্য রেলওয়ের রানিং স্টাফ এবং গার্ড কাউন্সিলররা ২৮ জুনয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন। ২৯ জানুয়ারি সরকার তাদের দাবি মেনে নেওয়াসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করলে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এ অন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, গার্ড কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্বার্থান্বেষী একটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করতে অন্দোলন শুরু করে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রিত ওই আন্দোলনে ছিল দেশি-বিদেশি চক্রের ইন্ধন। এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী হিসাবে পল্লী বিদ্যুতের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রাজন কুমার দাস, মনির হোসেন, উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, দীপক কুমার সিংহ, রাহাত, সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বেলাল হোসেন, নেত্রকোনার মনির হোসেন, বরিশালের হুমায়ুন কবির ও লক্ষ্মীপুরের আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামসহ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের নাম আছে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক হওয়ার দাবিতে জানুয়ারিতে আন্দোলন শুরু করে রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবির মুখে সাত কলেজ নিয়ে পৃথক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা দেয় সরকার। এরপরও তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখে। তারা তিতুমীর কলেজকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি করে। এই আন্দোলনে যারা যুক্ত হন তাদের মধে ৭০ ভাগের বেশিই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, তিতুমীর আন্দোলনের নেপথ্য ইন্ধনদাতা হিসাবে যারা চিহ্নিত হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল, ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাকিব, তাহসান হাসান সোহান, তিতুমীর কলেজের সাবেক ছাত্র ওবায়েদ, সোহেল ও সরাফাত।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিকল্পিতভাবে অসন্তোষ সৃষ্টি করা হয়েছে গার্মেন্ট সেক্টরে। অসন্তোষের জেরে নতুন সরকারের প্রথম গত সাড়ে ৫ মাসে বন্ধ হয়ে যায় ১১৯টি গার্মেন্ট কারখানা। একই গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় ঘটে এক হাজার ১৪৭টি অপ্রীতিকর ঘটনা। এসবের নেপথ্যে রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপসহ ফ্যাসিবাদী সরকারের পলাতক দোসররা।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ইন্ধনে তিন পার্বত্য জেলায় অন্দোলন শুরু হয় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর। তার নেতৃত্বে অশান্ত করার চেষ্টা চালানো হয় উত্তরবঙ্গও। এছাড়া রংপুরে তিনি ‘জাগরণের’ চেষ্টা চালিয়েছেন প্রতিবেশী একটি দেশের স্বার্থে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের মামলায় ২৫ নভেম্বর তাকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তি দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা চালানো হয়। এছাড়া জয়পুরহাটে ২৯ জানুয়ারি নারীদের ফুটবল খেলতে না দেওয়ার পেছনেও রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। এ ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের একটি গ্রাউন্ড তৈরির প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক পেজে কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির পক্ষে লিফলেট বিতরণ শুরু হয়। লিফলেট বিতরণের সময়সহ ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মুকিব মিয়াসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বন্ধ হয় ওই কর্মসূচি।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন বেসরকারি শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচিতে আছেন। এছাড়া গত ৭ মাসে আরও যেসব আন্দোলনের কারণে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-পলিটেকনিক শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা নার্স, হোমিও চিকিৎসক, সনাতনী হিন্দু বা সংখ্যালঘু, পাঠ্যপুস্তক, শহিদ পরিবার, আউটসোর্সিং কর্মচারী, প্যাডেলচালিত রিকশাচালক, ৪৩তম বিসিএসে বাদ চাকরি প্রত্যাশী, ৪০তম এসআই ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি হারানো পুলিশ সদস্য, আলিয়া মাদ্রসার মাঠে বিশেষ আদালত বন্ধের দাবি, মালয়েশিয়াগামী শ্রমিক, ইনকিলাব মঞ্চ, রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি, এনটিআরসিএ নিবন্ধিত ১ম-১২তম নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষক আন্দোলন, চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক আন্দোলন, এনটিআরসিএ নিবন্ধিত শিক্ষক, প্রাথমিকের নিয়োগ স্থগিত হওয়া শিক্ষক, গোলাপী বাস, সাবেক বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।