
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৫ এএম
ব্যাংক সুদহার নিয়ে গভর্নরের কড়া বার্তা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই যে সুদহার কমিয়ে দেব, তা হবে না। আগে মূল্যস্ফীতি কমবে তারপর নীতি সুদহার কমবে। এ হার আস্তে আস্তে কমানো হবে। একেবারে কমানো হবে না। নীতি সুদের হারকে একটি ইতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার ‘ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারের পথযাত্রা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন গভর্নর। রাজধানীর ইস্কাটনে একটি ইংরেজি দৈনিক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গভর্নর আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় নীতি সুদের হার ইতিবাচক হোক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতে তথা সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদের হার ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও এটি রাখবে। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে। সবকিছু একবারে হবে না। ধীরে ধীরে করতে হবে। সব পদক্ষেপের ফলও দ্রুত আসবে না। অপেক্ষা করতে হবে। সময় দিতে হবে। আজকে সিদ্ধান্ত নিলাম, কালই ফল পাব তা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সুদহার কাঠামো ও মূল্যস্ফীতি সঠিক দিকেই আগাচ্ছে। সময়মতো এটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাড়াহুড়োর দরকার নেই। ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই নীতি সুদহার কমিয়ে দেব-তা হবে না। মূল্যস্ফীতি, ট্রেজারি বিলের সুদ কমলে আস্তে আস্তে নীতি সুদহার কমাব। এর আগে কমানো যাবে না।’
ব্যাংকিং খাতের সংস্কার নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই এবং আর্থিক খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকও বিশ্বব্যাপী সেরা ব্যবস্থাপনা বা নীতিমালা খুঁজে পেতে সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম পুনর্গঠন করা হচ্ছে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য আইনি কাঠামো সংস্কার করা হচ্ছে। তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনো এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
গভর্নর বলেন, ‘গত ৬ মাসে অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে রিজার্ভের পতন ঠেকানো, বিনিময় হারে এক ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা প্রতিষ্ঠা, রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনা, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ, সবমিলে নেতিবাচক অবস্থা থেকে চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। কেবল রাজস্ব আয় ঠিক রাখা গেলে মাত্র পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফ-এর কাছে ধরনা দিতে হতো না। পাচার করা সম্পদের পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, বাংলাদেশ কিছু রায় পাবে এবং বিদেশে কিছু সম্পত্তি আটকানো সম্ভব হবে। অর্থ ফেরত আনা দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া। তবে আশা শেষ হয়ে যায়নি। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো সফলভাবে অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে সফলতা পাবে।’
ব্যাংক পরিচালকদের বিষয়ে গভর্নর বলেন, যোগ্যতা থাকলে ব্যাংকের উদ্যোক্তারা পরিচালক হবেন, যোগ্যতা না থাকলে হবেন না। ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। পরিচালকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখন যারা ব্যাংকের পরিচালক আছেন, তারাসহ সবাইকে এই যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আগের মতো গৃহিণী, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে বসিয়ে দেওয়া যাবে না। তাদের পরিচালক হওয়ার মতো যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি শক্তিশালী অবস্থায় আছে। বাজেটের অর্থের জোগানের একমাত্র সমাধান হচ্ছে রাজস্ব আদায় বাড়ানো। রাজস্ব আদায় ভালো হলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দিকে তাকাতে হবে না। এ বছর ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার আসবে প্রবাসী আয় থেকে। আর রপ্তানি থেকে আসবে পাঁচ হাজার কোটি ডলার। এই দুটি খাত থেকে প্রায় আট হাজার কোটি ডলার পাওয়া যাবে।