কোহলির রেকর্ডে পিষ্ট পাকিস্তান

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ক্রিকেট দুনিয়া যতই আন্দোলিত হোক, পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথ শেষ পর্যন্ত একপেশে হয়। রোববারও তার ব্যত্যয় হয়নি। এদিনও দুবাই দেখল দুই পড়শির আরেকটি একতরফা ম্যাচ। বিরাট কোহলির ৫১তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি (পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ) এবং ওডিআইতে দ্রুততম ১৪ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচে ভারত ছয় উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করল। ১১১ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা কোহলি ২৮৭ ইনিংসে এখন ১৪,০৮৫ রানের মালিক। তৃতীয় উইকেটে শ্রেয়াস আয়ারের (৫৬) সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি গড়ে ম্যাচসেরা কোহলি ৪৫ বল ও ছয় উইকেট হাতে রেখে জিতিয়ে দিলেন ভারতকে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকেও একই ব্যবধান ছয় উইকেটে হারিয়েছিল ভারত। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পরপর দুই ম্যাচ জিতেও সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি ভারতের। কাগজে-কলমে এখনো অপেক্ষা করতে হবে রোহিত শর্মাদের। এ-গ্রুপে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারতের পয়েন্ট দুই ম্যাচে চার। তাদের নেট রানরেট ০.৬৪৭। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে নিউজিল্যান্ড। তাদের পয়েন্ট এক ম্যাচে দুই। নেট রানরেট ১.২০০। তিন নম্বরে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ খেলে তাদের পয়েন্ট ০। নেট রানরেট -০.৪০৮। পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে পাকিস্তান। দুই ম্যাচে দুটিতেই হেরেছে তারা। তাদের পয়েন্ট ০। নেট রানরেট -১.০৮৭। এই গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড, দুদলেরই চার পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আজ বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে যদি বাংলাদেশ জেতে, তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে দুই। আর শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালে চার পয়েন্ট হবে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ড যদি আবার শেষ ম্যাচে ভারতকে হারায়, তাহলে তাদেরও পয়েন্ট হবে চার। সেক্ষেত্রে তিনটি দল সমান চার পয়েন্টে শেষ করবে। তখন নেট রানরেটে ঠিক হবে, কোন দুই দল সেমিফাইনালে যাবে। সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে পাকিস্তানেরও। কারণ, বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডকে হারায় এবং পাকিস্তানের কাছে হারে আর ভারত যদি শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড তিন দলেরই সমান দুই পয়েন্ট করে হবে। সেক্ষেত্রেও নেট রানরেটে ঠিক হবে ভারত ছাড়া আর কোন দল সেমিফাইনালে যাবে।
কিন্তু যদি বাংলাদেশ আজ নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায়, তাহলে ভারতের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডেরও চার পয়েন্ট হবে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ কোনো দলই দুই পয়েন্টের বেশি পাবে না। অর্থাৎ, যদি আজ নিউজিল্যান্ড জেতে তাহলে ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুদলই সেমিফাইনালে চলে যাবে। এ দুই দলের শেষ ম্যাচে নির্ধারিত হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। কাল পাকিস্তানকে ২৪১ রানে থামিয়ে ভারত চার উইকেটে ২৪৪ রান করে ম্যাচ জেতে ৪২.৩ ওভারে। কোহলির ১০০* ও শ্রেয়াসের ৫৬ ছাড়াও শুবমান গিল ৪৬ রান করেন। দুই উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি।
শুরুটা ভালোই করেছিল পাকিস্তান। প্রথম ছয় ওভারে ২৬ রান করে তারা বিনা উইকেটে। এরপরই ছন্দপতন। নবম ওভারে দলের ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। ভালো খেলতে থাকা বাবর আজম হার্দিক পান্ডিয়াকে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লোকেশ রাহুলকে। ২৬ বলে বাবরের ২৩ রানের মধ্যে ২০ রান আসে বাউন্ডারিতে। আগের বলে হার্দিককে চার মারা বাবর আবারও বাউন্ডারি মারার লোভ সামলাতে পারেননি। পরের ওভারে রানআউট ইমাম-উল-হক। অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউট হলেন ইনজামাম-উল-হকের ভাতিজা। কুলদীপ যাদবের বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়েছিলেন। অক্ষর প্যাটেলের সরাসরি থ্রো উইকেট ভেঙে দেয়। ধারাভাষ্য কক্ষে রবি শাস্ত্রী মজার ছলে ওয়াসিম আকরামকে জিজ্ঞেস করেন, রানআউট হওয়াটা কি ইমামের রক্তে আছে (ইঙ্গিতটা ইনজামামের দিকে)। ওয়াসিম নো কমেন্টস বললেও স্বীকার করেন, ইমামের রানআউট আত্মহননের শামিল। ২৬ বলে ১০ রান করে চশমাধারী ওপেনার ইমাম সাজঘরে ফেরেন। ১৫ ওভারে পাকিস্তান ৬৩ রান করেছিল দুই উইকেটে। এ সময় পাকিস্তানি ব্যাটারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন ভারতীয় বোলাররা। ৩২ বল পর তারা প্রথম বাউন্ডারি পায়। প্রথম ম্যাচের মতো পাকিস্তান খোলসে ঢুকে পড়ে। বাড়তে থাকে চাপ।
সেই চাপ কাটিয়ে উঠেছিল তারা তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও সাউদ শাকিলের ১০৪ রানের জুটির বদৌলতে। সেই জুটি ভাঙেন অক্ষর প্যাটেল। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে হর্ষিত রানার সৌজন্যে ক্যাচ আউট থেকে বেঁচে যাওয়া রিজওয়ান এক বল পরেই বোল্ড হন। সাউদ শাকিলও ব্যক্তিগত ৫৭ রানে রক্ষা পান ক্যাচ আউট হওয়া থেকে। তিনিও বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি নিজেকে। পাঁচ বল পরেই আউট। রিজওয়ানের মতো সাউদও ‘জীবন’ পেয়েও ‘মরণ’ এড়াতে পারেননি। হার্দিক পান্ডিয়ার খাটো লেন্থের বল পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড-উইকেটে অক্ষরের হাতে ধরা পড়ের সাউদ। তার চতুর্থ ওয়ানডে ফিফটি বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। ৭৬ বলে ৬২ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হন পাকিস্তানি ব্যাটার। ৪২.৩ ওভারে ২০০ পার করে পাকিস্তান। পরের বলে আউট সালমান আগা (১৯)। পরপর দুই বলে সালমান ও শাহিন আফ্রিদিকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন কুলদীপ যাদব। নাসিম শাহ সেটি হতে দেননি। শেষ ব্যাটার হিসাবে খুশদিল শাহ আউট হন ৩৮ রানে। ৪৫ ওভারে ২১২/৭ থেকে পাকিস্তান ২৪১ রানে অলআউট হয় ৪৯.৪ ওভারে। ৪০ রানে তিন উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। মোহাম্মদ শামি এক ওভারে ১১ বল করেন। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ওভারে নয় বল করেছিলেন জাসপ্রিত বুমরা। সেটি এতদিন সবচেয়ে লম্বা ওভার ছিল। সেই নজির ভাঙলেন শামি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ওভার বল করার পর শামি উঠে যান। তার পায়ে সমস্যা হচ্ছিল। মাঠে ফিজিওকে নামতে হয়। বাঁ পায়ের কাফ মাসলে সমস্যা হচ্ছিল পেসারের। ফলে কিছুক্ষণ সাজঘরে থাকেন তিনি। পরে ফিরে দ্বিতীয় স্পেলে বল করেন শামি। তখন তাকে দেখে মনে হচ্ছিল না, কোনো সমস্যা হচ্ছে তার। (স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)