সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময়
নতুন রাজনৈতিক দলে পরিবারতন্ত্র থাকবে না
খুনি হাসিনার ফ্যাসিস্ট সিস্টেম ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহতের আহ্বান * বুলেটের পর ব্যালেটের বিপ্লব করা হবে * সেনাদের পরিবারের ১ কোটির বেশি ভোটার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67ba345defdd8.jpg)
ছবি: যুগান্তর
আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা নতুন রাজনৈতিক দলে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তারা বলেন, বাবা নেতা হলে ছেলেও নেতা হবে, আমরা এই ট্রেডিশন রাখব না। আপনারা যোগ্য হলে- আমরা চেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকব। কারণ আমরা বুলেটের পর ব্যালটের বিপ্লব করতে চাই।
শনিবার বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রেটি হলে এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, লে. কমান্ডার (অব.) মেহেদী হাসান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মো. খালেদ হোসাইন, ক্যাপ্টেন (অব.) শুভ আফ্রিদি প্রমুখ। জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।
সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোতে এক কোটির বেশি ভোটার রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এই ১ কোটি ভোটার আমাদের রিজার্ভ হিসাবে থাকবে। ইতোমধ্যেই আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হয়েছি। বিএনপিরও অনেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এ মাসের মধ্যে দল ঘোষণা করে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু হবে। গণহত্যার বিচারের জন্য গণতন্ত্রের পথে যেতে হবে। বুলেটের পর ব্যালটের বিপ্লব করা হবে। সেজন্যই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আন্দোলন-লড়াই করেছিলাম।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলোকে বলব-আপনারা ধীরে চলুন। না হলে আপনাদের অবস্থা ছাত্রলীগের মতো হবে। কারণ, বাংলাদেশে আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম চলবে না। শুধু শেখ হাসিনা পালানোর মধ্যেই নয়, বাংলাদেশ থেকে পুরো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপসাধনেই তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন।
তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, খুনিদের সহযোগী ছিল, বিভিন্নভাবে খুনিদের সহযোগিতা করছে-তারা কেউ যদি যুক্ত হতে চায়-তাদের ঠেকিয়ে দিতে হবে। কারণ খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এর বাইরে বিকল্প পথ তাদের আর নেই। যাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ নেই-তাদের একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তারা যদি ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে তাদের বাংলাদেশে জায়গা হবে না।
সারজিস আলম বলেন, আগামীর বাংলাদেশে নীতি, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেম সামনে রেখে আপনাদের ওয়ার্ড-উপজেলা ও জেলায় দায়িত্ব নিতে হবে। আপনারা নিজেদের জায়গায় গিয়ে একেকজন চেয়ারম্যান হয়ে উঠুন। একজন মেয়র, কাউন্সিলর এবং এমপি-মন্ত্রী হয়ে উঠুন। নিজ এলাকায় গিয়ে যতটুকু মনে হয়- যতটুকু কাজ করতে পারবেন, ততটুকু কাজ করুন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা কি এই বাংলাদেশে সন্ত্রাসী এবং দখলদারিত্ব সমর্থন করবেন? আপনারা কি আর ক্ষমতার অপব্যবহার সমর্থন করবেন? আপনারা কি আর ঘুসকে সমর্থন করবেন? আপনারা কি সুপারিশের মাধ্যমে অযোগ্য মানুষের চাকরিকে সমর্থন করবেন? এ সময় উপস্থিত সবাই এক বাক্যে বলেন ‘না’।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক বলেন, এই বাংলাদেশে এতদিন যে নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হয়েছি- আমরা সেগুলো আর করতে দেব না। আপনারা মনে রাখবেন, খুনি শেখ হাসিনা একা গেছে। কিন্তু তার যে চর্চা এবং ১৬ বছর তার যে সিস্টেমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ গেছে, এখনো অনেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সিস্টেমগুলো জারি রাখতে চায়। আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে এই সিস্টেমগুলো মানুষের মাঝে আসছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই সিস্টেমগুলো প্রতিহত করতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, এতদিন আপনারা বলেছেন অস্ত্র জমা দিয়েছি ট্রেনিং জমা দেইনি। এখন আপনাদের সময় এসেছে সেই ট্রেনিংকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজে লাগান। যে জায়গায় আপনারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দেখবেন, বিভিন্ন মানুষের নোংরা রাজনীতি করতে দেখবেন, সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করবেন।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজপথে কোটি মানুষ ছিল। কিন্তু আন্দোলন যেদিন শুরু হয়-সেদিন রাজপথে এক হাজার মানুষ ছিল না। সেদিন কয়েকশ মানুষ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। আপনাদের সামনে যখন ন্যায়-নীতি থাকবে, দেশপ্রেম থাকবে, তখন সততার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাবেন এবং তখন শত মানুষ থেকে হাজারো মানুষ, হাজার থেকে লাখ, লাখ থেকে কোটি মানুষ হবে।
তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থানে আমাদের বোনেরা, নারীরা রাজপথে আমাদের সামনে থেকে এই লড়াইটাকে নিজেরা একটি অভেদ্য দেওয়াল তৈরি করেছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যদি আমাদের সঙ্গে দাঁড়ান আগামীর বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে অভেদ্য দুর্গে পরিণত হবে। আমরা আপনাদের অনুরোধ করি, আগামীর বাংলাদেশে আপনারা দেশপ্রেমকে সামনে রেখে, সততাকে সামনে রেখে জনগণ ও দেশের সেবা করার জন্য ভোটের রাজনীতিতে আসুন। আমরা যে রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছি এখানে কোনো পরিবারতন্ত্র থাকবে না। বাপ নেতা হলে ছেলে নেতা হবে এই ট্র্যাডিশন থাকবে না। আপনারা আমাদের যৌক্তিক সমালোচনা করলে সেটি মেনে নেব। কেউ সমালোচনা করলে তাকে আমরা প্রতিপক্ষ মনে করব না। আমরা ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ একপাশে রেখে জনগণ এবং দেশের স্বার্থ সামনে রেখে কাজ করলে, আগামীর বাংলাদেশে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না।