Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাকি এগারো মাস কেউ খোঁজ রাখেন না

Icon

ভাষাসৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানী

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাকি এগারো মাস কেউ খোঁজ রাখেন না

আমি ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমাদের স্কুল থেকে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তানবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হই আমিসহ ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা। আমরা চিহ্নিত হওয়ায় পুলিশ একপর্যায়ে আমাদের কয়েকজনকে ধরে এনে থানায় আটকে রাখে। কিন্তু থানাহাজত থেকেই ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দেওয়া শুরু করি। পরে আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

তখন বয়স কম হলেও ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমাদের জেলায় জীবিত ও প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২ জন ভাষাসৈনিক ছিলেন। তাদের মধ্যে আমিসহ আরও একজন বেঁচে থাকার কথা। আমি আমার ব্যক্তিগত কাজ করার সুযোগ খুব কম পেয়েছি। সব সময় সামাজিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ১৯৫৩ সালে আমি ম্যাট্রিক পাশ করি। কলেজে আমি যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। লালমনিরহাটে তখন যত স্কুল ছিল, তার মধ্যে বালিকা বিদ্যালয় ছাড়া প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। আমি কিন্তু গোড়া থেকে রাজনীতিকে ভালোবাসি। মওলানা ভাসানীর সঙ্গে ছিলাম। তাকে আমি বাবা বলে ডাকতাম। এজন্যই আমার নাম হয়েছে আব্দুল কাদের ভাসানী।

প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই জেলা প্রশাসন রুটিনমাফিক একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে সংবর্ধনা দেয় আমাকে। কিন্তু বছরের বাকি ১১ মাস কেউ খোঁজ রাখেন না।

আমাদের মতো ব্যক্তিদের কীভাবে সম্মান দিতে হয়, তা সরকারের জানা উচিত। যদি না জেনে থাকে, তাহলে সেটাকে সরকার বলা যায় না। বাংলাদেশের সরকারগুলো যদি নির্বোধ হয়ে থাকে, তাহলে থাক; আমরা এভাবেই চলে যাই। যারা ভাষাসৈনিক, তারা তো শিক্ষিত মানুষ। তাই তারা অনেকের মতোই মুখ খুলে কিছু চান না। আমিও তো চাইব না।

১৯৫২ সালের যে ঘটনা, তখন তো জান দেওয়ার আর কেউ ছিল না। এই ছাত্ররাই দিয়েছেন। ঢাকার রাজপথে সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত যে জীবন দিয়েছেন, তার আগে কেউ তো ভাষার জন্য জীবন দেয়নি। এর আগে সিপাহি বিদ্রোহ গেছে, তেভাগা আন্দোলন গেছে, আরও কত আন্দোলন গেছে। কিন্তু মানুষ এক হয়নি। মানুষ শুধু এক হয়েছিল ভাষা আন্দোলনে। এই ভাষা আন্দোলনে যারা ছিল, তারা অশিক্ষিত ছিল না। শিক্ষিতরাই ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই রাজপথে মিছিলে ছিল।

বর্তমানে দেশকে গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নিতে আমার মতো বৃদ্ধ শ্রেণির লোকগুলো পারবে না। তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। বয়স্ক নেতারা যদি ভালো হতেন, তাহলে দেশ আজকে আইনের বাইরে চলে যেত না। কাজেই এখন দেশকে ভালো করতে হলে যারা নওজোয়ান, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সজাগ হতে হবে। (অনুলিখন : মিজানুর রহমান দুলাল)

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম