ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আসন্ন মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাজার তদারকি জোরদার করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত আইন ও বিধি অনুসরণ করে বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত মজুতদার ও কালোবাজারিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এক শতাংশ সরকারি সম্পত্তি কাউকে জবরদখল করতে দেওয়া যাবে না। সরকারি বরাদ্দে কী উন্নয়ন হয়, বরাদ্দের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে তদারকি করতে বলা হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ডিসিদের আরও তৎপর হতে হবে। দুর্নীতি দমনে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এছাড়া সব ধরনের সরকারি সেবা পর্যায়ক্রমে অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সোমবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন কর্ম-অধিবেশনে অংশ নিয়ে ডিসিদের এসব নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া এক ডিসি বলেন, রোববার রাতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) নৈশভোজ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত থেকে জেলা পর্যায়ের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৎপর হতে বলা হয়েছে। দেশের জনগণকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সমাজের কোথায় কী দুর্নীতি হয়, কারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে ডিসিদের বলা হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সব ধরনের সরকারি সেবা অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সব ধরনের সরকারি ফি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন কঠোরভাবে করতে হবে। সরকারি সেবার বিপরীতে কোনো ফি হাতে নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
একটি চক্র দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তৎপর। তারা শ্রমিকদের টার্গেট করে নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে কাজ করছে। শ্রমিক অসন্তোষের যে কোনো ঘটনায় আরও মনোযোগী হতে বলা হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের যে কোনো আলামত আগে থেকেই উদ্ঘাটনে তৎপর হতে বলা হয়েছে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়ে, সে বিষয়ে ডিসিদের তদারিক বাড়াতে বলা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে রমজানে খাদ্যশস্য সুলভমূল্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ঈদের সময় ১ কোটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়া হবে। এসব কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্চ ও এপ্রিল-এ দুই মাসে প্রায় ৭ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে দেড় লাখ টন করে তিন লাখ টন চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বিতরণ করা হবে। ৫০ লাখ পরিবার, প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। টিসিবির মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টন করে দুই মাসে এক লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে। ওএমএসের মাধ্যমে যাবে আরও এক লাখ টন।
বাজারে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য কালোবাজারি ও মজুতদাররা তৎপর। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় এবং তাদের কারসাজিতে ইতোমধ্যে ভোজ্যতেল হাওয়া হয়ে গেছে। এ চক্রের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজির কারণে অনেক সময় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সরকারি সম্পত্তি কোনোভাবে বেহাত করা যাবে না। এক শতাংশ সরকারি ভূমিও যাতে কেউ দখলে নিতে না পারে, সে বিষয়ে ডিসিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জবরদখলদারদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন-বিধি অনুসরণ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দখল হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে ডিসিদের আরও তৎপর হতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং চিকিৎসকদের করের আওতায় আনতে হবে। যারা ভালো আয়-রোজগার করেন, তাদের অবশ্য কর দিতে হবে। করের আওতা বাড়াতে তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে ডিসিদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
সরকার দেশের উন্নয়ন ও গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ছোট ছোট প্রকল্পে কিছু বরাদ্দ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেসব বরাদ্দে কী কী কাজ হয়, তা ডিসিদের তদারকি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জেলার সব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা খোয়াল রাখতে বলা হয়েছে। সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে ডিসিদের অন্যতম দায়িত্ব জেলার উন্নয়ন সমন্বয় করা। সে বিষয়টি তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।