
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫০ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। এদিন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে এই ঘোষণা। এ লক্ষ্যে গত ২ সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় বৈঠক করছেন শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে বেশিরভাগই নেতৃত্বের জন্য নাহিদ-আখতারের ওপরই আস্থা রাখার কথা ব্যক্ত করেছেন। এর আগে দলটির ছাত্র সংগঠন ঘোষণা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিতে চলতি সপ্তাহে সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন নাহিদ। সংগঠন দুটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দল গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করি আগামী সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ করবে। গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা, জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিকভাবে দক্ষ-নেতৃত্ব নির্বাচনে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আলোচনা ও সবার মতামতের ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচন করা হবে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল। নতুন দলে কারা নেতৃত্বে থাকবেন? তা নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে পারে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হবেন তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। তবে আলোচনায় ছিল সদস্য সচিব পদ। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা অধিকাংশই আখতারের ওপর আস্থা রাখতে চান। তবে তাকে দায়িত্ব না দেওয়ার প্রস্তাবও আসে ছাত্র নেতাদের ভেতর থেকেই। তারা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করেন। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ভেতরে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। এমন অবস্থার মধ্যেই সর্বশেষ রোববার বৈঠকে বসেন সংগঠন দুটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে দল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে সূত্রে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে থাকা নাগরিক কমিটির এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, দল গঠন নিয়ে আমাদের মাঝে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা সমাধান হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হবে। প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আরেক নেতা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে আখতারের দূরদর্শিতা, ভূমিকা ও অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানি। তার ওপর সবাই আস্থা রাখতে চায়। তবে তাকে দায়িত্ব না দিতে একটি পক্ষ সংগঠনের ভেতরে ব্যাপক সক্রিয়। তারা চায় না আখতার নতুন দলের শীর্ষ পদে থাকুক। সব বিষয় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে আখতারের নাম নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো সদস্য সচিব পদের জন্য আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। শেষ মূহূর্তে তাদের মধ্য থেকে যদি কেউ সদস্য সচিব হন, তাতে অবাক হওয়ার হওয়ার কিছু থাকবে না।
নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র বলছে, নতুন রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে কে আসছেন, তা নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে সংগঠনের ভেতরে। এতে পছন্দের নেতাদের বসাতে তৎপর নাগরিক কমিটির বিভিন্ন অংশ। বিশেষ করে নাগরিক কমিটিতে থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এ ব্যাপারে বেশ সক্রিয় বলে জানা গেছে। কমিটিতে মধ্যপন্থি ও বামধারার নেতারাও রয়েছেন।
নতুন দলের ঘোষণার স্থান কেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্ধারণ করা হলো-তা জানতে চাইলে ছাত্র নেতারা বলেন, মূলত জুলাই আন্দোলনে হাসিনা পতনের একদফা ডাক দেওয়া হয়েছিল এই শহিদ মিনার থেকে। ফলে নতুন দল আত্মপ্রকাশের জন্য এই স্থানকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। যদিও বিকল্প হিসাবে জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউও আলোচনায় রয়েছে।
নতুন দল ঘোষণার সময় জুলাই আন্দোলনে প্রথম শহিদ আবু সাইদের বাড়ি থেকে লংমার্চ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রমজান মাস সামনে থাকায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছেন তারা। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে ব্যাপক সক্রিয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। জনমত জরিপে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন তারা। ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে দেশের ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত নিজেদের মতামত দিয়েছেন। অনলাইনের এই জরিপের পাশাপাশি সব জেলায়-উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপে সাধারণ মানুষ ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছেন ছাত্র নেতারা। ইতোমধ্যেই ৩৩৮টি উপজেলা-থানা কমিটির গঠন কাজ শেষ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সারা দেশের প্রায় ৪ হাজারের অধিক নেতাকর্মী কমিটিগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আরও জানা গেছে, তরুণ-ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবে সুশীলসমাজ, ব্যবসায়ী, সরকারের সাবেক আমলাসহ অনেকে। ইতোমধ্যেই জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করছেন তারা। তবে কাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে-সেই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে।