দল নিবন্ধনের শর্ত সহজ করার প্রস্তাব

রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত সহজ করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এজন্য নিবন্ধনসংক্রান্ত ধারা-উপধারাগুলোতে সংশোধনী এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) একটি খসড়া প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে মাঠপর্যায়ে দলীয় কার্যালয় ও দলের সদস্য সংখ্যা বিদ্যমান নিয়মের চেয়ে কমিয়ে নিবন্ধন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে বা কমিটিতে থাকা অযোগ্য ঘোষণার নতুন বিধান যুক্তের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ সংশোধনী পাশ হলে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যারাই দণ্ডপ্রাপ্ত হবেন, তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কোনো পদে এমনকি সদস্য হিসাবেও থাকতে পারবেন না। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের সঙ্গে এই খসড়া আইন জমা দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তোড়জোড় চলাবস্থায় এই আইন সংশোধনের জন্য জমা দেওয়া হয়। চলতি মাসেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ দল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে। নতুন দলাট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অপরদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এক হাজারের বেশি মানুষ হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যমান আইনে অভিযুক্তরা নির্বাচন করতে পারেন না। এই সংশোধনী পাশ হলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, এমনকি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসাবে থাকার সুযোগ পাবেন না। আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে ওই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯টি।
জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক দল যাতে সহজে নিবন্ধন পেতে পারে, সেজন্য এ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন দলকে সহযোগিতা করা বা কারও পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা মতে, নতুন যে দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, ওই দলটি বিদ্যমান আইন থাকলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য। তাদের সেই শর্ত পূরণের সক্ষমতা আছে।
জানা গেছে, আরপিওর ধারা ৯০-এ নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক নিবন্ধন পাওয়া এবং নিবন্ধন বাতিলের বিধান উল্লেখ রয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ওই ধারায় ব্যাপক সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এক-দশমাংশ প্রশাসনিক জেলায় এবং পাঁচ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলীয় কার্যালয় থাকলে সেই রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হবে। এছাড়া ওই দলের ন্যূনতম পাঁচ হাজার ভোটারের তালিকা থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্তত ৭টি জেলা এবং ২৪-২৫টি উপজেলায় দলীয় কার্যালয় থাকলেই দলটি নিবন্ধন পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হবে। বিদ্যমান আইনে অন্তত ২১ জেলা এবং ১০০ উপজেলায় দলীয় কার্যালয় থাকার বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সারা দেশে সবমিলিয়ে পাঁচ হাজার ভোটার নিবন্ধিত থাকার কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিদ্যমান আইনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার থাকা বাধ্যতামূলক।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিগত নির্বাচনগুলোতে ওই সংখ্যক দলীয় কার্যালয় এবং ভোটার না থাকার কারণ দেখিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়নি তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দল ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। তারা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করেছিল।
আরও জানা গেছে, আরপিওর ধারা ৯০(খ)-এ প্রস্তাবিত সংশোধনীতে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মিত কাউন্সিল করা এবং কাউন্সিলের ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন ইসিতে জমা দেওয়া, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা এবং তাদের নাম ১০ দিনের মধ্যে ইসিকে জানানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক বা মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা এবং অর্থ পাচার) ইত্যাদি মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত বা অভিযোগ গঠিত হলে তিনি দলের কমিটি বা সাধারণ সদস্য হিসাবে থাকতে পারবেন না। কোনো রাজনৈতিক দল এই বিধান অমান্য করলে ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে ৯০(জ) উপধারায় বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নিলে ওই দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। খসড়া আইনে এ বিধান বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও ওই দলের নিবন্ধন বহাল থাকবে। তবে প্রতি ৫ বছর পর নিবন্ধন নবায়নের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে নবায়নের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধন পাওয়ার উপযুক্ত কিনা-তা যাচাই করতে পারবে ইসি। বিদ্যমান আইনে নবায়নের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।