ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা : উত্তাল গাজীপুর
জড়ো হচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা
সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলের বাড়িতে ডাকাত পড়ার মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ধারালো অস্ত্রে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও জাহাঙ্গীর বাহিনীর সন্ত্রাসীরা * মোজাম্মেল গণহত্যাকারী-হাসনাত আবদুল্লাহ * ব্যবস্থা না নিলে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াব-সারজিস

যুগান্তর প্রতিবেদন ও গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গাজীপুরের বাড়িতে শুক্রবার রাতে ‘ডাকাত পড়েছে, যার যা আছে, তা নিয়েই এগিয়ে আসুন’-এমন মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয় মসজিদের মাইকে। এরপরই বৈষমবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও জাহাঙ্গীর বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এতে ১৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল গাজীপুর।
এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মোবাশ্বির হোসাইন (২৬) নামে এক যুবক আহত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ-পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে গাজীপুরের আওয়ামী লীগের পলাতক সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছেন। যা এখনো অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। এদিকে গত কয়েকদিনে গাজীপুরে যারা প্রবেশ করেছেন, তাদের শনাক্ত করতে মোবাইল ফোনের সিম পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসির সহায়তা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিন দুপুরে ডিসি অফিসের সামনের সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। তাদের দাবি, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্র-জনতার ওপর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীরের সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তারা প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবেন। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপারের পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকেও ক্ষমা চাইতে বলেন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধেরও দাবি জানান।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) জানিয়েছেন, গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সে ব্যবস্থাও করা হবে। শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
শুক্রবার রাতে হামলার ঘটনায় আহত ১৪ জনের ১১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতের হামলার ঘটনায় পুলিশ শনিবার বিকাল পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। তিনি জানান, হামলায় আহতদের বেশিরভাগই ছাত্র। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনার পর গাজীপুরে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়েছে। অপরাধীদের কেউ ছাড় পাবে না।
তবে শনিবার সরেজমিন গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই ঢিলেঢালা দেখা গেছে। চোখে পড়ার মতো তৎপরতা দেখা যায়নি পুলিশের। এদিকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসী : পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে গাজীপুরে জড়ো হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এই সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন গাজীপুরে ছাত্র-জনতা হত্যার অন্যতম কুশীলব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও তার অনুসারীরা। আরেকটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এই দুই গ্রুপ গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করতে গত কিছুদিন ধরে পাঁয়তারা করে আসছিল। এরই অংশ হিসাবে মোজাম্মেল হকের ধীরাশ্রম এলাকার বাড়িতে শুক্রবার রাতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, হামলাকারীরা ছিল প্রশিক্ষিত। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে ছাত্র-জনতাকে। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা শনিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ শেষে ফেরার পথে গাজীপুর রাজবাড়ী গেটে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আন্দোলনের কর্মী মোবাশ্বির হোসেন (২৬) গুলিবিদ্ধ হন। মোটরসাইকেল থেকে দুই দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। তার ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, মোজাম্মেলের বাড়িতে ছাত্র-জনতার ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা গ্রামবাসী করেনি। আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা করেছে। এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এটি আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরই কাজ।
যেভাবে ঘটনা : স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে গাজীপুর সদরের রাজবাড়ি মাঠে গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সমাবেশ ছিল। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির কর্মীরা ওই সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশ শেষে একদল কর্মী গাজীপুরের বনমালা সড়ক হয়ে টঙ্গীর দিকে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে একটি পক্ষ গাজীপুর মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ধীরাশ্রম দক্ষিণখানে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। এ সময় গ্রামে ডাকাত হামলা চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা পার্শ্ববর্তী দুটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন। মাইকিং শুনে আশপাশের লোকজন বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। তারা কয়েকজনকে মারধর করেন এবং কুপিয়ে আহত করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। শুক্রবার রাতে এই হামলার ঘটনার পরই তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের অনেকেই ফেসবুক লাইভ করেন। লাইভে এসে তারা অভিযোগ করেন এই হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
এদিন রাত ২টার দিকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। রাতেই আহতদের দেখতে সেখানে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সেখান থেকেই শনিবার ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
গাজীপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বলেন, আমাদের গাজীপুর চৌরাস্তায় একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেটি শেষ করে আমরা সেখানে চা খাচ্ছিলাম। তখন খবর পাই, সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে কে বা কারা হামলা ভাঙচুর করছে। এই মুহূর্তে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে তার দায় যেহেতু আমাদের ওপর আসে, তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজনকে মোজাম্মেলের বাড়িতে দেখতে পাঠাই। ছাত্ররা সেখানে পৌঁছানোর পরই মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়। যারা ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্র-জনতার ওপর স্থানীয়দের হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করা হয় ঘটনার পরপরই। রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট ও লাইভে দাবি করা হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের ওপর এই হামলা চালিয়েছে। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাজীব ইশরাক আদনান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাত সোয়া ৮টার দিকে আমাদের কাছে খবর আসে যে, সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। প্রতিহত করতে আমাদের কর্মীরা সেখানে ছুটে যায়। তিনি বলেন, সেখানে শতশত লোক ছিল। যাদের সবার হাতে রামদা ছিল। এত মানুষ ১০-২০ মিনিটের মধ্যে একসঙ্গে হতে পারে না। ওদের সবকিছু পূর্বেই প্ল্যান করা ছিল।
ওই ঘটনার পর রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এরপর রাতেই মার্চ টু গাজীপুর কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। বিকাল ৪টার দিকে ডিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান সমাবেশস্থলে আসেন। তিনি প্রথমেই ছাত্র-জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন আসামিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। জিএমপি কমিশনারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করেন ছাত্র-জনতা।
এর আগে এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা শুক্রবার রাতে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসভবনের সামনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন। সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের পাশাপাশি গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবি করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক আলী নাসের খান। সমাবেশে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
যা বললেন হাসনাত ও সারজিস : রাজবাড়ি সড়কে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, আমরা তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আমরা সহযোগিতা করব তার মানে এই নয়, তারা আবার মামলা বাণিজ্য করবে। তার মানে এই নয় আজকে ১৬ জনকে ধরে কাল সকালে জামিন দিয়ে দেবে। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই সাবেক আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই। এরা গণহত্যাকারী। মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু নেই, এই মোজাম্মেল হলো গণহত্যাকারী। এ সময় মোজাম্মেলকে ধর্ষণকারী বলতে হাসনাতকে অনুরোধ করেন ছাত্র-জনতা। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, পুলিশ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে ১৭ বছর ধরে যারা নির্যাতন চালিয়েছে, এই গাজীপুরকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর বানিয়েছে তাদের অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্য দিয়ে একটি ডেভিলও যেন বাদ না যায় তা পর্যবেক্ষণ করব।
সারজিস আলম তার বক্তব্যে বলেছেন, আজকে (শনিবার) রাতের মধ্যে যদি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে সরকার ও পুলিশের বিপক্ষে অবস্থান নেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মিডিয়ার এত তেল কেন? তারা এখনো আ ক ম মোজাম্মেল হককে কীভাবে সম্মান দিয়ে সাবেক মন্ত্রী বলে।
মোজাম্মেলের গ্রাম পুরুষশূন্য : শনিবার দুপুরে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ধীরাশ্রম দক্ষিণখান গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মূল ফটক তালাবদ্ধ। আশপাশের বাড়িঘরও তালাবদ্ধ। আবার কোনো বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা থাকলেও তারা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। তবে এলাকায় কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে তারা গাঢাকা দিয়েছেন। গ্রামের যে দুই মসজিদ থেকে মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল-সেই দুই মসজিদও তালাবদ্ধ। জোহরের আজান ও নামাজ হয়নি সেখানে। মোজাম্মেল হকের বাড়ির গেটের সামনে তিনটি ভাঙা ক্রেস্ট পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বাড়ির পাশের মসজিদের বারান্দা এবং গেটের সামনে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে। স্থানীয় এক কিশোর জানিয়েছেন, বাড়ির ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে গেটে গিয়ে কাউকেই ভেতরে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, এই বাড়িটিতে মোজাম্মেল হক কিংবা তার পরিবার থাকতেন না। বাড়িটি দেখাশোনা করতেন একজন নারী। তাছাড়া পাশের মসজিদের ইমাম থাকতেন ওই বাড়িতে। সূত্র জানিয়েছে, মোজাম্মেলের বাড়ির পাশের দুই মসজিদের মুয়াজ্জিন আতিকুর রহমান আতিক মাইকে ‘মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, যার যা আছে, তা নিয়ে এগিয়ে আসুন’ এমন ঘোষণা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, মাইকে ঘোষণাকারীদের শনাক্ত করতে গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।
হামলায় যারা আহত : হামলায় আহত ১৪ জনের অধিকাংশই ছাত্র। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১১ জন। তারা হলেন- শুভ শাহরিয়া (২০), মো. ইয়াকুব (২৪), গৌরব ঘোষ (২২), মো. কাশেম (১৭), মো. হাসান (২২), মো. হিমেল (২০), ওমর হামজা (২১), মো. আবীর খান (২২), রোহান আহমেদ (২২), মোহাম্মদ নাঈম (২১) ও সাব্বিন খান মিলন (২২)।
সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেন স্টাফ রিপোর্টার ইকবাল হাসান ফরিদ ও আসাদুল্লা লায়ন, গাজীপুর প্রতিনিধি শাহ সামসুল হক রিপন