Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ‘বুলডোজার মিছিল’ ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩২ নম্বর

হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে আগুন * স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন থাকবে না-বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা * বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর * বরিশালে হাসানাত আব্দুল্লাহ ও আমির হোসেন আমু এবং কুষ্টিয়ায় হানিফের বাড়ির ওপর চালানো হলো বুলডোজার * রাবির চার আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩২ নম্বর

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এক্সকেভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। বুধবার রাত ১টায় তোলা -যুগান্তর

পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ভার্চুয়ালি ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেন বিক্ষুব্ধরা। রাত দেড়টার দিকে এই খবর লেখা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ভবনের প্রায় অর্ধেক ভাঙা শেষ হয়। এদিকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালান। বরিশালে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নগরীর বগুড়া রোড এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাড়িও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কুষ্টিয়ায় বুলডোজার দিয়ে হানিফের বাড়ি ভাঙচুর করেছেন ছাত্র-জনতা। চট্টগ্রামে মুজিবের ম্যুরাল ও ছবি ভাঙচুর করা হয়। রাবিতে চার আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রংপুরে বেরোবি ও কারমাইকেল কলেজে ম্যুরাল ও নামফলক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের বাড়ি ভেঙে জুলাই আন্দোলনের শহিদদের পরিবারের জন্য ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট উপহার দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মঙ্গলবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে বুধবার রাতে ভাষণটি প্রচার হয়। শেখ হাসিনার ওই ভাষণকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে ‘বুলডোজার মিছিল’ ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি- ৩২’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল করা হবে। সেখানে বলা হয়, হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে রাত ৯টায় এ কর্মসূচি পালিত হবে। তবে কর্মসূচি বদলে রাত ৮টায় নিয়ে আসা হয়।

লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য রাত সাড়ে ৮টায় নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লেখেন, ‘বুলডোজার জোগাড় হয়েছে। চলে আসুন ৩২ নাম্বার, প্লাবনের বেগে আসুন। আকাশ ভেঙে আসুন। ইতিহাসের সাক্ষী হতে আসুন। ইতিহাস গড়তে আসুন।’

সরেজমিন দেখা যায়, সন্ধ্যার পর থেকে ধানমন্ডি ৩২-এর সামনে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা। রাত ৮টার দিকে উপস্থিত ছাত্র-জনতা লাঠি-স্টাম্প, শাবল ও পা দিয়ে লাথি দিয়ে গেট ভাঙতে শুরু করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গেট ভেঙে তারা দলে দলে ভেতরে প্রবেশ করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দলে দলে সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির উপরে উঠে লাঠি দিয়ে দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিচতলায় থাকা শেখ মুজিবের একটি ম্যুরাল ভেঙে ফেলেন। পরে পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও আরও একটি লাল ভবনে আগুন দেন ও ভাঙচুর করেন ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা ফ্যাসিবাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দাও; আওয়ামী লীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দাও; ছাত্রলীগের আস্তানা গুঁড়িয়ে দাও, যুবলীগের আস্তানা গুঁড়িয়ে দাও, স্বৈরাচারের আস্তানা গুঁড়িয়ে দাও, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ-এমন স্লোগান দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সন্ধ্যার দিকে বাড়ির সামনের সড়কে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও ছাত্র-জনতার উপস্থিতি বাড়লে তারা চলে যান। এছাড়া রাত সোয়া ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে ৩২ নম্বর বাড়ির ভেতরে ঢুকতে গেলে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ফিরে যায়।

বিক্ষুব্ধরা বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের আস্তানা পুরোপুরি ধ্বংস হলেই পরিপূর্ণ সংস্কারের যাত্রা শুরু হবে। যতক্ষণ বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারদের আস্তানা পুরোপুরি বিলোপ না হচ্ছে, ততক্ষণ সংস্কারের যাত্রা ও গণতন্ত্রের যাত্রা এই বাংলায় সম্ভব নয়। তাই ছাত্র-জনতা সবার ঐক্যের ভিত্তিতে বাকশালীদের আস্তানা, ফ্যাসিবাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেবে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর এ দেশের প্রথম স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ফেলতে চাই।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দোসররা আর একটি শব্দও যেন প্রচারের দুঃসাহস দেখাতে না পারে, সেজন্য স্বৈরাচারের চিহ্ন ধানমন্ডি ৩২ গুঁড়িয়ে দিতে ছাত্র-জনতা হাজির হয়েছে। এখানে ফুটবল খেলার মাঠ নয়তো পাবলিক টয়লেট বানানো হবে।

যেভাবে ভাঙা শুরু ধানমন্ডি ৩২ ভবন : সরেজমিন দেখা যায়, রাত সোয়া ১১টার দিকে একটি বুলডোজার ধানমন্ডি ৩২-এর ভেতরে প্রবেশ করে। ১১টা ২০ মিনিটে ভাঙার কাজ শুরু করে। তবে সেটি দিয়ে ভবন ভাঙা যাচ্ছিল না। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে আসে একটি ভেকু। ১১টা ৫৫ মিনিটে ভেকু দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু হয়। প্রথমে পূর্ব পাশ দিয়ে শুরু হয়। পরের ধাপে পশ্চিম পাশ থেকে ভাঙার কাজ চলে। সবশেষে ভবনের সামনে থেকে ভাঙা হয়। রাত দেড়টা পর্যন্ত ভবনের প্রায় অর্ধেক ভাঙার কাজ শেষ হয়। পুরোপুরি ভেঙে ঘটনাস্থল ত্যাগ করবে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা।

হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে আগুন : ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধানমন্ডি ৫/এ-তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার পর সেখানে আগুন দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুধাসদনে আগুনের খবর পান তারা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় তাৎক্ষণিক টিম পাঠানো যায়নি। এর আগে ধানমন্ডি ৩২ এর আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের টিম গেলে আন্দোলনকারীদের বাধায় ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফিরে আসে তারা। সার্বিক বিষয়ে জানতে ধানমন্ডি থানাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কল করা হলেও কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বরিশালে হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়ি ভাঙচুর : বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর কালীবাড়ি রোডের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেনা সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে এই ভাঙচুর চালান তারা। এর আগে বাড়িটিতে হামলা হতে পারে আশঙ্কায় সেটি ঘিরে রাখেন সেনা সদস্যরা। সন্ধ্যায় ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভাঙচুর শুরুর পর রাত ১১টা নাগাদ সেখানে গিয়ে অবস্থান নেন সেনা সদস্যের একটি দল। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ কয়েকশ শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। রাত ১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভাঙচুর চলছিল। এর আগে ৫ আগস্ট এই বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

কুষ্টিয়ায় বুলডোজার দিয়ে হানিফের বাড়ি ভাঙচুর : কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বুলডোজার দিয়ে বাড়ির গেট ও দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। বুধবার রাত ১০টার দিকে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ছাত্র-জনতা বাড়িটির সামনে আসেন এবং মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ হাজারো ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ১১টা) তারা বাড়িটির সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় সেখানে মশাল জ্বালিয়ে তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় এবং বুলডোজার দিয়ে গেট ভাঙতে দেখা যায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। 

এর আগে মঙ্গলবার রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার রাতে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। এরপর শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে পিটিআই রোডে হানিফ এমপির বাড়িতে এক্সকেভেটর নিয়ে আসেন লোকজন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলার সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বৈরাচাররা রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে। তারা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই বাংলায় তাদের ঠাঁই নেই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে, চলবে। এর আগে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে ৫ আগস্ট হানিফের আলিশান বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।

চট্টগ্রামে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও ছবি ভাঙচুর : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামেও বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ছবি ভাঙচুর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ও সেখানে শেখ মুজিবের ছবি ও ম্যুরাল ভাঙচুরের খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামেও মশাল মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মিছিল নিয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। তারা এ সময় মুজিববাদের স্মৃতিচিহ্ন বাংলাদেশ থেকে মুছে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জামাল খান এলাকায় ম্যুরাল ও ছবি ভাঙচুর করা হয়।

জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার রাত ৯টায় শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। ৩০-৪০ জনের একদল কর্মী চকবাজার থেকে প্রথমে মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যান। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরাতন একাডেমিক ভবনের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। বুলডোজার না থাকলেও হাতুড়ি ও ইট দিয়ে শেখ মুজিবের পাথরখচিত ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল নিয়ে নগরীর জামাল খানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এবং খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় থাকা ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। 

এ সময় তারা গণমাধ্যমকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশ থেকে তারা ফ্যাসিবাদের স্মৃতিচিহ্ন ও মুজিববাদ নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র কোনোমতেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

রাবিতে চার আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ : রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের স্বজনদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখন মুছে দিয়ে নতুন নাম দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে নির্মাণাধীনসহ চারটি আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেন। শিক্ষার্থীরা শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’ ও নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুননেসা চৌধুরাণী’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিমরেজা বলেন, শেখ হাসিনা লাইভে এসে ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। আমার ভাইদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখায় কীভাবে? ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া পদচিহ্ন ও রাবি থেকে তাদের শেকড় মুছে দিতে আমাদের আজকের এ আন্দোলন।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, সারা দেশের আন্দোলনের অংশ হিসাবে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সেটি যদি করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই করা হবে।

রংপুরে বেরোবি ও কারমাইকেল কলেজে ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙচুর : রংপুর ব্যুরো জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও নামফলক হাতুড়ি ও বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কারমাইকেল কলেজের মূল ফটকের সামনে জড়ো হন। এ সময় ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের নামফলক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগরের সদস্য সচিব রহমত আলী, সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আশিকুর রহমানসহ অন্যরা।

মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, কারমাইকেল কলেজে স্থাপিত ম্যুরালটি শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করেছে। আগামীকাল বুলডোজার দিয়ে ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইবিতে হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ : ইবি প্রতিনিধি জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক প্রতিকৃতি টাঙিয়ে তাতে জুতা নিক্ষেপ করেন। পরে সাড়ে ৯টায় সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা শেখ পরিবারের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি জানান। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হলগুলোতে গিয়ে ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে হলের নাম মুছে দেন।


Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম