হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন
ইন্টারপোলের সঙ্গে চলছে তথ্য আদান-প্রদান

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদনের বিষয়টি পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে গত সপ্তাহেও পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারপোলের সঙ্গে আলোচনা করেছে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। শেখ হাসিনার বিষয়ে ইন্টারপোল বেশকিছু তথ্য চেয়েছে। সেগুলো ইতোমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে রাজধানীতে শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। এছাড়া মৌসুমি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজি যুগান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য পুলিশ প্রস্তুত হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। শিগগিরই অভিযান জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই অনেক কর্মসূচি আছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে সুযোগ সন্ধানী মহল অপতৎপরতা চালাতে পারে। এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত জুলাই-আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যে ১০টি টিম কাজ করছে সেগুলো তদারকি করছেন আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি প্রতিদিন টিমগুলোকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। আপডেট তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সভায় পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠিয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে তালিকা তৈরি করছি। অচিরেই বড় অভিযান চালাব। তিনি বলেন, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে গুজব ছড়াচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রগীগ। ইতোমধ্যেই তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ডিবির সাইবার বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। কমিশনার বলেন, রমজান সামনে রেখে চাঁদাবাজদের তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওইসব মৌসুমি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এ সপ্তাহের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুলাই-আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য নৃশংসতা চালিয়েছে ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলছে বলে জানান শেখ সাজ্জাত আলী।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ও ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) প্রধান মতিউর রহমান শেখ যুগান্তরকে বলেন, সিআইডি সাধারণ প্রিভেন্টিভ কাজ করে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কাজ করার আইনি দায়িত্ব অনেকটাই কম। তাই সিআইডির টিমগুলো প্রিভেন্টিভ কাজে খুব একটা জোর দিচ্ছে না। তবে ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে আমরা তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছি। গুজবের বিষয়টিকে আমরা সিরিয়াসলি দেখছি। সাইবার এবং ডিজিটাল অপরাধ মনিটরিং করছি। বর্তমান বাস্তবতায় ভার্চুয়াল জগতকে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম ঘিরে যেসব অপরাধ হচ্ছে সেসবের বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। আমাদের তৎপরতা বাড়িয়েছি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতি ঘটে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা চালাচ্ছি। সরকার যখন যে ধরনের নির্দেশ দিচ্ছে আমরা তা পালনের চেষ্টা চালাচ্ছি। গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমরা নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করেছি। শিগগিরই নবউদ্যোমে আমরা মাঠে নামব। তিনি বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন, দেশের স্বার্থে সবই আমরা করব। অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। হীন উদ্দেশ্যে যারা লিফলেট বিতরণ করছে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। বাকিরাও আইনের বাইরে থাকবে না। সে বিষয়ে আমাদের তৎপরতা বাড়িয়েছি।