Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অবরোধে অন্তহীন ভোগান্তি

কর্মসূচি সাত দিন স্থগিত: বিভিন্ন স্টেশনে অর্ধশতাধিক ট্রেন আটকা, যাত্রী দুর্ভোগ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অবরোধে অন্তহীন ভোগান্তি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন। এর আগে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকায় ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করেন। দুপুরে বাঁশ ফেলে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। তিন ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর মিছিল নিয়ে যান মহাখালীতে। রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পদ্মা সেতু রেললিংক ছাড়া ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভ করেন তারা। সড়ক ও রেলপথ অবরোধে বহু যানবাহন আটকে পড়ে, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। বিপর্যয় দেখা দেয় ট্রেনের শিডিউলে। কয়েক লাখ মানুষকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। 

রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কয়েক হাজার যাত্রী অপেক্ষায় ছিলেন ট্রেনের। এ সময় যাত্রীদের একটি অংশ বিক্ষোভ করছিল। তারা স্টেশন ম্যানেজারের কক্ষে ঢুকে কাগজপত্র তছনছ ও ম্যানেজারকে গালাগাল করেন। রেলসূত্র জানায়, দুপুর ২টার পর থেকে কমলাপুর স্টেশনে কোনো ট্রেন ঢোকেনি। অর্ধশতাধিক ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে। 

কয়েক দিন ধরেই আন্দোলনে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। এজন্য রাজধানীবাসীকে পোহাতে হচ্ছিল ভোগান্তি। সোমবারের অবরোধ-বিক্ষোভে নাভিশ্বাস ওঠে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মন্ডলের উপস্থিতিতে রাত পৌনে ১০টায় কর্মসূচি সাত দিনের জন্য স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, আবাসন, পরিবহণ, শিক্ষক নিয়োগ, লাইব্রেরি ও ল্যাব স্থাপন, জমি অধিগ্রহণের আশ্বাসে আমরা সাত দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করছি। যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান বলেন, হল, পরিবহণ, অবকাঠামোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টিএনটির জমিতে আবাসিক হল করা হবে। ৭ দিনের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা নেব। আসন সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে আনা ও সেমিস্টার চালু এবং গবেষণাগারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর আগে বিকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আন্দোলনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, সরকারেরও নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। আন্দোলন উঠিয়ে দেওয়া এখন সবার দায়িত্ব। তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তো লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। দিনের পর দিন কিন্তু তাদের এ দাবি-দাওয়া বেড়েই চলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। সেই আলোচনা ক্যাম্পাসের ভেতরে হতে পারে, মাঠ আছে সেখানেও করতে পারে। শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।

তারও আগে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার শুরু থেকেই যেকোনো যৌক্তিক দাবির প্রতি ইতিবাচক এবং সংবেদনশীল। তাদের শিক্ষাজীবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিও সরকার আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল। চাইলেই এই মুহূর্তে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব নয়, তবে আশা করি সবার জন্য ভালো কিছু হবে। আন্দোলনের নামে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টায় তিতুমীর কলেজের মূল গেটের সামনের সড়কে বাঁশ ফেলে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিল নিয়ে এসে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর মহাখালী লেভেলক্রসিং অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। 

আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষকে হেঁটে মহাখালী এলাকা পাড়ি দিতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে শ্যামলী, ফার্মগেটের দিক থেকে আসা গাড়ি মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ের আগ থেকে ইউটার্ন নিতে দেখা গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘপথ হেঁটে এসে উঠছেন গাড়িতে। এ ছাড়া উত্তরাগামী গণপরিবহণগুলোকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে দেখা যায়।

আমতলী এলাকায় আজিম উদ্দিন নামে এক পথচারী বলেন, রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষজনের কষ্ট হচ্ছে অনেক। প্রতিদিনই সড়ক বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন চলছে। সরকারকে এর সুরাহা করা প্রয়োজন। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কী লাভ? মহাখালী চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে হেঁটে বনানী রেলগেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন আন্দোলনের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায়ই কেটে যাচ্ছে। এভাবে কি কোনো দেশ চলতে পারে? আরেক পথচারী আব্দুল হান্নান বলেন, এভাবে রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন চলতে থাকলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব। রেলগেট এলাকার চা দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীরা সাড়ে ৩টার পর রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

যশোরের কেশবপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলম তার বোন আকলিমাকে নিয়ে মহাখালীর ক্যানসার হাসপাতালে এসেছিলেন কেমোথেরাপি দিতে। সোমবার দুপুরে কেমোথেরাপি শেষ করে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে দেখেন সড়ক বন্ধ, কোনো বাস চলছে না। ক্যানসার আক্রান্ত বোনকে নিয়ে তিনি হেঁটে রওয়ানা দেন মহাখালীর আমতলীর উদ্দেশে। জাহাঙ্গীর বলেন, রিকশা নিতে চেয়েছিলাম। বলল, মহাখালী পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। তাই হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছি। 

প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ছাত্রদের অবরোধ চলাকালে মহাখালী রেলগেটের পূর্ব অংশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও বিজিবি সদস্যদের দেখা গেছে। জলকামান নিয়ে প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে পুলিশকে। বিজিবি সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীকে সহযোগিতায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। 

এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় তিতুমীর কলেজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কলেজের সামনের সড়কে বাঁশ ফেলে মহাখালী-গুলশান লিংক রোড বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। লোকজন হেটে চলাচল করছেন। আশপাশের সড়ক এবং বিভিন্ন অলিগলিতেও তীব্র যানজট। সড়ক বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়ার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন মোটরসাইকেল চালকের বাগ্বিতণ্ডা হতেও দেখা যায়। 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বিকালে যুগান্তরকে বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো যৌক্তিকতা পাচ্ছে না। সাতটা কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে তিতুমীর বলল যে, তারা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চায়। এর যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ তিতুমীরের মতো আরও অনেক কলেজ রয়েছে। ঢাকা শহরে আছে, ঢাকার বাইরে আছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দাবির বিষয়ে আমরা বলেছি, ইউজিসির কমিটি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেটা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। রেলপথ অবরোধ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দুজন যুগ্ম-সচিবকে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছি।

সন্ধ্যায় যখন তিতুমীর ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তখন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসের ফটকে ‘আমরণ অনশন’ করছিলেন। রাতে তাদের নেওয়া হয় মহাখালী রেলগেটে। কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণার সময় কলেজের অধ্যক্ষ তাদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম