সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা
দাবি অযৌক্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে না তিতুমীর

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা নেই। তাই তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে না। আমরা চিন্তা করছি সাতটি কলেজকে একত্রিত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করা যায় কিনা। এজন্য কাজ করছে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সময় বেঁধে দিয়ে যে আন্দোলন করছে সেটি ঠিক নয়। রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তবে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়াসহ সাত দফা দাবিতে অনড় প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনাও মানছেন না তারা। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর আমতলী মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ বা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি। পাশাপাশি কলেজের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার শিক্ষার্থীদের অবরোধে গুলশান-বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মগবাজার এলাকায় তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। বুধবার রাত থেকে ৫ দিন নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজও কর্মসূচি পালিত হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দাবিদাওয়া মানতে আসিনি। আমরা কিছু সংস্কার কাজ করছি। ছোট ছোট কিছু সংস্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি বড়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। সেখানে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে আন্দোলন করা যৌক্তিক নয়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে সেখানে আমি কখনো বলিনি তিতুমীর কলেজকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে এরকম লেখা থাকলে আমার সচিব হয়তো এডিট করে থকতে পারেন। বিশেষ বিবেচনার কথা আমি বলিনি।’ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দেশে অনেক ঐতিহ্যবাহী কলেজ আছে। যেমন রাজশাহী কলেজ সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আগে স্থাপিত হয়েছে। তাহলে ওই কলেজকে কি বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে? এছাড়া পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমানে সরকারি খাতে প্রায় ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যার অর্ধেকই হয়েছে গত ৭ বছরে। এসবের বাইরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চাপ সৃষ্টি বাড়াবে। আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না যাতে আগামী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।’
আন্দোলনকারীরা রোববার সন্ধ্যার পর মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে তারা আমতলীতে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থান ঘিরে পুলিশকে সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি জলকামান। এ সময় ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, ‘আমতলী এলাকায় অবস্থান করে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।’ রাত ১০টায় এ রিপোট লেখা পর্যন্ত আমতলী মোড়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে পথচারী ও বিভিন্ন পরিবহণের যাত্রীরা বলছেন, আন্দোলন, সড়ক অবরোধের কারণে তাদের প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি নিরসনের দাবি জানান তারা।
আজিজুর রহমান নামে একজন চাকরিজীবী বলেন, আগারগাঁও থেকে তিনি বাসে নিয়মিত নতুনবাজারের বাসায় ফেরেন। কিন্তু তিতুমীর কলেজের সামনে সড়ক অবরোধের কারণে তাকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। হেঁটে গুলশানে এসে তাকে রিকশায় বাসায় ফিরতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব দেখার যেন কেউ নেই। আমরা চাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা হোক কিংবা অন্য কোনো উপায়ে রাস্তা ক্লিয়ার রাখুক সরকার। কিন্তু জনদুর্ভোগের বিষয়ে এই সরকারের কোনো চিন্তাই নেই।
জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে গুলশান এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে রোড ডাইভার্সন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’ কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে বুধবার বিকাল ৫টায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটকের সামনে পাঁচ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুই শিক্ষার্থী। রোববার পর্যন্ত ১২ শিক্ষার্থী অনশনে যোগ হন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের লাগাতার কর্মসূচি চলবে। সড়ক ও রেলপথ এর আওতায় থাকবে।
আজ ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যারিকেড : আজ বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে নতুন তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। রোববার রাত ১১টায় কলেজের মূল ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো-তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টি করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ভার মাথায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে