হত্যায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শুক্রবার কুমিল্লায় যুবদলের তৌহিদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর যৌথ বাহিনীর হাতে মারা গেছেন। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ এছাড়া তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন। শনিবার আলাদা বিবৃতিতে তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিতকরতে হবে। রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি সেখানে আরও বলেন, আজকে আমরা হাসিনা মুক্ত হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারিনি। আমরা একটি সরকার দিয়েছি, সে সরকার হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের দায়িত্ব হাসিনা যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে, সেগুলো ন্যূনতম ঠিক করে, সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া। সে নির্বাচনে জনগণ যাদের চাইবে তাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসবে।
ছাত্ররা সরকারে থেকে দল গঠন করলে মানুষ সেটা মেনে নেবেন না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। আমরা আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে যেটা চাই, নিরপেক্ষ থাকবেন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচন এ দেশে অবশ্যই হবে, এ নির্বাচনটি হতে হবে সব সময় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমরা চাইব, অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, এতে আপত্তি নেই বরং আনন্দিত মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে, রাজনীতিতে আসবে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু সরকারে থেকে যদি দল গঠন করেন সেটা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এতে আরও বক্তব্য দেন-ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, এম কফিলউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিচারবহির্র্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক : এদিকে শনিবার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা ‘নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করেছে।’ একই সঙ্গে সরকার ও প্রশাসনে ঘাপটি মারা আওয়ামী দোসররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা-তার অনুসন্ধান করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোনো সরকারি বাহিনীই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধ সংঘটনকারী যতই শক্তিশালী হোক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। কিন্তু তাকে কখনোই বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করার কোনো অধিকার সরকারি বাহিনীগুলোর নেই।’
বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি কেন : শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি কেন? এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে ঠিকানা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পরিচিত সভায় তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন। রিজভী বলেন, ড. ইউনূসকে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ অত্যন্ত পছন্দ করে এবং এ দেশের মানুষও তাকে পছন্দ করেন। কিন্তু তার সময়ে যদি শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দুষ্কর্ম ও অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তো জনগণ হোঁচট খাবে। যুবদল নেতাকে হত্যার কঠোর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, যদি ওই ছেলেটি অপরাধী হন, তাহলে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেওয়া যেত। কিন্তু গ্রেফতার করে ভয়াবহ নির্যাতন করে মেরে ফেলে মা-বাবার কাছে ফেরত দেওয়া, এটা এ আমলে হবে কেন?
নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যেমে বিচার দাবি বিভিন্ন দল ও মানবাধিকার সংগঠনের : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। রাষ্ট্র কর্তৃক আটক ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসক এ ঘটনার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারিক তদন্ত দাবি করছে এবং দায়ীদের যথাযথ আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। পৃথক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এমএসএফ মো. তৌহিদুল ইসলামের নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।
এদিকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর হাতে এই বর্বর নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের হতবাক করল। বাসদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ছাত্রদল। সংগঠন দুটি পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, তৌহিদুল ইসলামের শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরাও নিশ্চিত করেছেন। হত্যাকারীদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নেতারা।
বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারকে অতি দ্রুত জনগণ এবং গণতন্ত্রকামী সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিহত তৌহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার এবং তার পিতাহারা চার কন্যা সন্তানের আর্থিক ও নিরাপত্তাসহ সব সুরক্ষার দায়িত্বও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। এছাড়াও এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও এনডিএম।