রাজধানীর সাত কলেজ
‘জুলাই ৩৬’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত থেকে বেরিয়ে আসা রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার চিন্তাভাবনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে এর নামকরণ করা হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিটি এ নামের প্রস্তাব করে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে এ কমিটি। সেখানেই এ নাম প্রস্তাব করা হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ যুগান্তরকে বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমরা কয়েকটি নাম নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি। এর মধ্যে জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা চিন্তা করে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটির প্রস্তাব করেছি। এর সঙ্গে সাত কলেজ আওতাভুক্ত করা হবে। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষা উপদেষ্টাও এ নামের প্রশংসা করেছেন। এর আগে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও দেখা করেছি। সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের যে ত্যাগ রয়েছে, সেটি এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের মধ্যে প্রতিফলিত হবে। যে কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জুলাই-আগস্টের ধারণা পেয়ে যাবে। আমরা বিভিন্ন দেওয়ালে গ্রাফিতি থেকে এ নাম সংগ্রহ করেছি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এ নাম পছন্দ হলে আমরা চূড়ান্ত করব। তিতুমীর কলেজ আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে চাই। এ নামটার প্রতি সম্মান রেখে হলেও তারা এগিয়ে আসবে বলেন জানান তিনি।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলেও সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। উলটো বেড়েছে সেশন জটিলতা, সময়মতো পরীক্ষা, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, অনাকাঙ্ক্ষিত ফল বিপর্যয় ছাড়াও নানাবিধ সমস্যা। এতে কলেজগুলোর লাখো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়ে। এসব সমস্যার কারণে কলেজের শিক্ষার্থীরা গত আট বছরে শতাধিকবার বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার কলেজগুলোকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না বলে জানানো হয়। পাশাপাশি এসব কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়াও আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এতে ৩৫ হাজার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। বুধবার এক সভায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ আবেদন চলার কথা ছিল। ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলে। বর্তমানে এসব কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কার অধীন হবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে কলেজগুলো নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে গঠিত কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ইউজিসি এ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছে। এর পাশাপাশি কলেজগুলোর জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন নিয়েও আলোচনা চলছে।
এ সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। তাই এটার কাঠামো ও মডেল কী হবে, সেটা নিয়ে কাজ চলছে। যেহেতু আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের দ্বন্দ্বের জেরে সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার সাত কলেজকে আলাদা করে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কলেজ সামলাতে হিমশিম খাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার কমানোর যুক্তি দিয়ে কলেজগুলোকে ঢাবির সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিতে মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাখা হয়।