প্রসঙ্গ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
দলগুলোর সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকের সিরিজ বৈঠক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন
আগামী নির্বাচন ও বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সিরিজ বৈঠক শুরু করেছেন ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। প্রথম দিনে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। নেতারা বলছেন, রাজনীতি ও নির্বাচন আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে আসা মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই মার্কিন কূটনীতিক মূলত বাংলাদেশের নেতাদের মতামতই শুনছেন। বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে।
মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের গুলশানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত মেগান বোল্ডিন উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মাথায় এই ধারাবাহিক সংলাপকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঢাকায় আসেন জ্যাকবসন। আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এই সংলাপ শুরু হলো।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর বিষয় নিশ্চিত করে দেওয়া এক মিডিয়া নোটে বলেছে, ‘ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স অ্যাম্বাসেডর ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা এবং অবস্থানগুলোকে আরও ভালোভাবে বুঝতে দলীয় নেতানেত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করছেন, যা মিশনের চলমান কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার অংশ হিসাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’ মিডিয়া নোটে বিস্তারিত কিছু বলা না হলেও বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংষদ নির্বাচন এবং দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন সিডিএ তেমন কোনো মন্তব্য করছেন না। নতুন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসাবে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। মার্চে পবিত্র রমজান মাস থাকায় ফেব্রুয়ারিতে রাজনীতির মাঠে বল গড়াচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি বলছে, ফেব্রুয়ারিতে মাঠে নামবে দলটি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফিরবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো সুস্পষ্ট করা হয়নি।
এর আগে, ২০ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন সিডিএ ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। ওই বৈঠকে জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা জাতি হিসাবে আপনার সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের প্রচেষ্টা এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আশা করছেন রাজনৈতিক দলগুলো ফেব্রুয়ারির শুরুতে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ছিলেন-দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাশরুর মওলা।
সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনসহ চলমান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির তরফে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে দলটির অবস্থান তুলে ধরা হয়। জাতীয় পার্টির নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করেছে।
এছাড়াও দলটির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় পার্টির নেতারা দুর্বল সরকার বলে অভিহিত করেছেন। জাতীয় পার্টিকে রাজনীতির অধিকার চর্চা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন সিডিএ ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের উপস্থিত ছিলেন।